স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহারের সঠিক নিয়ম , জেন নিন সবাই

স্বাস্থ সচেতনতার তথ্য জানা অতি আধুনিক মেয়েরা শুধুমাত্র সঠিক নিয়ম বা পদ্ধতি জানে না বলে ‘মেয়েদের স্বাস্থ্য সমস্যা’য় ভুগতে হচ্ছে । মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাবে সাধারণত স্যানিটারি ন্যাপকিন বা কাপড়ের ন্যাপকিন ব্যবহার করে থাকে । আগে মেয়েদের ঋতুচক্র বা মাসিকের সময় কাপড়ের ন্যাপকিন বা তুলার প্যাড করলেও বর্তমান সময়ে চটকদার বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পরে শুকনো স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যাবহারে ঝুঁকেছে । লোভনীয় বিজ্ঞাপনে প্রভাবিত হয়ে মেয়েদের মাসিকের প্যাড বা ন্যাপকিন ২৪ ঘণ্টা বা টতাও বেশি সময়ও পরে থাকে । ফলে আক্রান্ত হয় অনাকাঙ্খিত মেয়েলি সমস্যা বা রোগে আক্রান্ত হয় । এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন ধারনা না থাকায় নিজের অজান্তেই তারা নিজের ক্ষতি করে চলে । মেয়েদের মাসিকের সময় করণীয় ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কিছু তথ্য প্রদান করা হল –

মেয়েদের ঋতুচক্র বা মাসিকের সময় ব্যবহৃত স্যানিটারি ন্যাপকিন –

স্যানিটারি ন্যাপকিন :

প্রথমত যেকোন স্যানিটারি ন্যাপকিন বা প্যাড কোনভাবেই তিন বা চার ঘণ্টার বেশি পরা উচিৎ নয় । মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাব শুরুর প্রথম ২/৩ দিন অতিরিক্ত রক্তস্রাব হয় । এসময় অনেকে ছয় বা সাত ঘণ্টা পর পর প্যাড পরিবর্তন করে । কিন্তু চতুর্থ বা পঞ্চম দিন থেকে স্রাব কমে আসায় একই ন্যাপকিন ২৪ ঘণ্টা কিংবা তারও বেশি সময় ধরে অনেকে পরে থাকে । এই কারনে তাদের যে সমস্যা হতে পারে তা হল : যোনিপথে চুলকানি , প্রদাহ , অ্যালার্জি ।

তাই , ঋতুস্রাবের প্রথম তিন দিন দুই ঘন্টা পরপর প্যাড পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ । যদি প্যাড শুকনো না থাকে অর্থাৎ উপরের অংশে রক্ত ভেসে আসতে দেখা যায় তবে সাথে সাথে প্যাড পরিবর্তন করা উচিৎ এবং কোনভাবেই চার ঘণ্টার বেশি একটি প্যাড পরা উচিৎ নয় । ঋতুস্রাবের তৃতীয় দিন হতে যেসব ন্যাপকিনে দ্রুত রক্ত টেনে নেয় এবং উপরের অংশ শুকনো রাখে অর্থাৎ “ড্রাই উইভ” ন্যাপকিন সেগুলো পরা একদম বাদ দিতে হবে । ঋতুস্রাবের শেষের দিকে অল্প রক্তপাত হয় এবং একারনে সেই রক্ত দ্রুত শুকিয়ে সেখানে জীবানুর আক্রমণ হয় যা যোনিপথের সংস্পর্শে এসে চুলকানি , ফোঁড়া , ইনফেকশন ইত্যাদি সৃষ্টি করে ।

মেয়েদের মাসিকের সময় করণীয়আপনারা হয়ত জানেন না ড্রাই উইভ প্যাড বা ন্যপাকিনে প্যাড শুকনো রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়”সেলুলোজ জেল” নামের একটি উপাদান যা জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য দায়ী । এবং এর প্রকোপ গত কয়েক বছরে বিকট আকার ধারন করার পিছনে অন্যতম একটি কারন হচ্ছে স্যানিটারি প্যাডের দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাবহার । এমনকি আপনারা খেয়াল করলেই দেখবেন এটি কী উপাদান দ্বারা তৈরি তা কিন্তু এর প্যাকেটের কোথাও উল্লেখ করা থাকেনা । এ ব্যাপারে কোন সঠিক দিক নির্দেশনা বা নীতিমালাও এই উপমহাদেশে নেই বলে খুব সহজেই মানুষ এদের বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে এবং নিজের ক্ষতি করছে । কাজেই নিজ দায়িত্বে সতর্ক হোন ।

কাপড়ের ন্যাপকিন :

অনেকে একই কাপড় বারবার ধুয়ে ব্যাবহার করে । সেক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য । কাপড়ের ন্যাপকিন অবশ্যই একবার ব্যাবহারের পর গরম জলে সিদ্ধ করে ধুয়ে সরাসরি সূর্যের আলোতে শুকাতে হবে । সূর্যের আলো এখানে বেশ ভাল জীবানুনাশক হিসাবে কাজ করে । ঘরের কোনায় শুকাতে দিলে কোন লাভ নেই ।

অবশ্যই নির্দিষ্ট সময় পরপর প্যাড পরিবর্তন করতে হবে । সবশেষে এটাই বলে রাখা ভাল , সবসময় পরিষ্কার থাকুন । সচেতন হন ।

স্যানিটারি ন্যাপকিন কতক্ষণ পর পর বদল করা ভালো ? এই তথ্যটি অনেকেই জানেন না –

১) অনেকেই আছেন যারা একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন কম ব্লিডিং হয়েছে ভেবে দীর্ঘসময় যাবত ব্যবহার করেন । রক্তপাত কম হোক বা বেশী , একটি স্যানিটারি ন্যাপকিন কখনোই দীর্ঘ সময় ব্যবহার করবেন না । ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর পর বদলে ফেলুন । যদি রক্তপাত বেশী হয় , তাহলে প্যাড নষ্ট হওয়া মাত্রই বদলে ফেলুন । জমে থাকা রক্তে নানান রকম জীবাণু সংক্রমণ করে আপনি আক্রান্ত হবেন যৌনাঙ্গের নানান রকম অসুখে ও ফাঙ্গাল ইনফেকশনে ।

২) প্রত্যেকবার স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলের সময় নিজেকে ভালোভাবে পরিছন্ন করে নিন । না , কেবল পানি দিয়ে নন । উষ্ণ পানির সাথে জীবাণুনাশক সাবান বা বডি ওয়াশ দিয়ে নিজেকে ভালোভাবে পরিষ্কার করুন । তারপর স্থানটি জীবানুনাশক কোন লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ও মুছে নিয়ে তবেই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করুন ।

৩) প্রত্যেকবার স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তনের সময় পরনের প্যানটিও বদলে ফেলবেন । এটা জরুরী। নাহলে এত কষ্ট করে পরিষ্কার হবার কোন মানে নেই ।

৪) চেষ্টা করবেন অধিক শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন প্যাড ব্যবহার করতে । এই পণ্য গুলোতে ব্যবহার করা হয় সিনথেটিক উপাদান এবং শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করা হয় ডায়অক্সিন , রেয়নের মত ক্ষতিকর রাসায়নিক । যত বেশী শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন , এসব উপাদানের পরিমাণ ততই বেশী । আর এই সব উপাদান দায়ী ওভারিয়ান ক্যান্সার হতে শুরু করে সন্তান না হওয়া পর্যন্ত হরেক রকম ভয়াবহ স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য ।

৫) কৃত্রিম সুগন্ধীউক্ত প্যাড দেখে আকৃষ্ট হয়ে কিনে ফেলবেন না । চটকদা বিজ্ঞাপনেও ভুলবেন না । এই উপাদানগুলো আপনার গোপন অঙ্গে কালো দাগ ও এলারজিক রিঅ্যাকশনের জন্য দায়ী ।

৬) প্যাড ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিক শোষণ ক্ষমতার দিকে না গিয়ে নরম তুলো বা সুতি কাপড়ের তৈরি অরগানিক প্যাড কিনুন । এখন আমাদের দেশেও এগুলো কিনতে পাওয়া যায় । বিজ্ঞাপনে একটি পণ্যকে ভালো বললেই সেটা ভালো হয়ে যায় না ।

৭) ব্লিডিং – এর পরিমাণ কম থাকলে এবং আপনি যখন বাড়িতে আছে , তখন চেষ্টা করুন প্যাড ছাড়াই থাকতে । ২৪ ঘণ্টা এক টানা প্যাড পরিধান থেকে গোপন অঙ্গে দুর্গন্ধ তো হবেই , সাথে ব্যাকটেরিয়াল ও ফাঙ্গাল ইনফেকশনও হবে ।

Related Posts

সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের পর ক্লান্তি দূর করার ৫টি ছোট্র টিপস…

সারাদিন এতো লম্বা সময় রোজা রাখার পর ইফতার শেষে একেবারেই গা ঝিমিয়ে পড়ে। রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করে দেহে। ইফতারের পর থেকে রাতের খাবারের সময়টুকু যেনো এক…

রোজাদার নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি ৫টি মাসআলা, যা না জানলেই নয়!

১. প্রসব ব্যথায় রোজা ভাঙা : যদি রোজা না ভাঙলে গর্ভবতী মহিলার অথবা বাচ্চার কোনো ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে ফেলা বৈধ। এ ক্ষেত্রে…

জীবনে খারাপ সময় আসবেই, ভেঙে না পড়ে এই ১০টি কথা মনে রাখুন কাজে লাগবে…

জীবনে খারাপ সময় আসবেই- সাফল্য অর্জনের দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার সময় আমরা এমন অবস্থার সম্মুখীনও হই যখন আমাদের সাথে সব কিছু খারাপ হয়। অবস্থাটা খানিকটা এমন “অভাগা…

দাম্পত্যে জীবন সুখী রাখতে এই ৬টি কাজ আবশ্যক

শান্তিপুর্ণ সংসার গড়ার পুর্ব শর্ত হলো সুন্দর দাম্পত্য জীবন, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় বলা যায় একে। কারণ দাম্পত্য একদিনের সম্পর্ক নয়, বরং একে চিরকালের বলেই ধরা হয়।…

ছোট স্তন? ওষুধ ছাড়াই স্বাভাবিক উপায়ে বড় করুন এভাবে…

জিনগত কারণে বা অন্যকিছু আনুষঙ্গিক কারণে অনেকেরই স্তনের আকার স্বাভাবিকের থেকে ছোট থাকে। এই কারণে হিনমন্যতায় ভোগেন অনেক মেয়েরাই। আসলে সুন্দর, সুডৌল স্তন নারীর সৌন্দর্য্যের একটি অন্যতম…

ঘুমের মধ্যে লালা ঝরে? জেনে নিন সঠিক সমাধান!

ঘুম ভালোভাবে হলে দেহ মন ফুরফুরে থাকে। কিন্তু অনেকেই আছেন যাদের ঘুমের সময় লালা ঝরার মতো অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটে। সাধারণত দু একজন বড়দের পাশাপাশি শিশুদের এমনটা দেখা…