দেশে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে ৬০ ভাগ শিশুর জন্ম হয় সিজারের মাধ্যমে। অর্থাৎ প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে ৬ জনের জন্মই সিজারের মাধ্যমে। আর বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে এ হার ৮০ শতাংশ। অতচ ইংল্যান্ড আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্বে এর সংখ্যা মাত্র ৬ শতাংশ।
২০০৪ সালে সিজারের মাধ্যমে ৪ শতাংশ শিশুর জন্ম হতো, ২০০৭ সালে ৯ শতাংশ, ২০১১ সালে ১৭ শতাংশ আর ২০১৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস) রিপোর্ট ২০১৪ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। যদিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ শতাংশ শিশুর জন্মের সময় সিজারের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বাড়তি আয়ের মনোভাবই বাংলাদেশে এই হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির মূল কারণ। যেখানে সাধারণ মানের একটি হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে একটি প্রসব করতে ১৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা নেয়া হয়, সেখানে স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে এই চার্জ মাত্র আড়াই থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এছাড়া মফস্বল পর্যায়ে গড়ে ওঠা ক্লিনিকগুলোর আয়ের প্রধান উৎস সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন
ধরনের জটিল রোগী কোনো ধরনের চিকিৎসা হয় না বলেই এই আয় থেকে পুরো প্রতিষ্ঠানের খরচ চালানো হয়। একটি স্বাভাবিক প্রসবের জন্য প্রসূতি এবং চিকিৎসককে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। সেক্ষেত্রে সিজারের মাধ্যমে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ মিনিটেই সন্তান প্রসব করা সম্ভব।
দেখা গেছে শিক্ষিত এবং সচ্ছল পরিবারের ক্ষেত্রে সিজারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে দরিদ্র শ্রেণীর মধ্যে শতকরা ৭ শতাংশ এবং ধনী শ্রেণীর মধ্যে শতকরা ৫০ শতাংশ পরিবারে সিজারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হচ্ছে। অবশ্য দেশের মোট ৬২টি ভাগ প্রসব এখনও বাড়িতেই হয়ে থাকে। ৩৭ ভাগ প্রসব হয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। এর মধ্যে ২২ ভাগ প্রসব সম্পন্ন হয় প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে এবং ১৩ ভাগ প্রসব হয় সরকারি হাসপাতালে এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।