মাঝে মাঝে ব্যয়াম ও কখনো কখনো ডায়েট করে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করাটা আসলেই দুঃসাধ্য।
শরীরের বাড়তি মেদ নিয়ে আজকাল অনেকেই চিন্তিত। সুস্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, শারীরিক সৌন্দর্যের জন্যও নারী-পুরুষ উভয়েই ভাবেন ওজন কমাবেন। কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে অনেক সময়েই ওজন কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যায়াম বা ডায়েট করা হয়ে ওঠে না। তবে জানেন, কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করলে বাড়তি ওজন কমানো কিন্তু অতটা কঠিন নয়। আপনিও পারবেন ওজন কমাতে। জীবনধারাবিষয়ক ওয়েবসাইট বোল্ডস্কাইয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ দিয়েছে ১৫ দিনে ওজন কমানোর ১২টি সহজ পরামর্শ।
১। আপনার দিন শুরু করুন লেবু পানি দিয়ে
ওজন কমানোর জন্য লেবু পানি অত্যন্ত কার্যকরী ডিটক্স পানীয়। লেবুর রস শরীরে চর্বি পুড়িয়ে এনার্জি নির্গত করতে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ওজন বৃদ্ধিকে প্রতিহত করে। এছাড়া ভিটামিন সি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বাহির হতে সাহায্য করে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে একটি লেবুর অর্ধেকের রস বের করে নিন। এর মধ্যে সামান্য মধু ও গোল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে নিতে পারেন। প্রতিদিন এই পানীয়টি পান করুন এমনকি ওজন কমে যাওয়ার পরও।
২. ফ্রিজ পরিষ্কার করুন
শুনে হাসি পাচ্ছে? ওজন কমানোর সঙ্গে আবার ফ্রিজ পরিষ্কারের সম্পর্ক কী? সম্পর্ক আছে। ফ্রিজ বা রান্নাঘরে যেসব উচ্চমাত্রার ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার রয়েছে বা ফাস্টফুড রয়েছে, সেগুলো সরান। এর বদলে স্বাস্থ্যকর খাবার রাখুন। রাখুন ফল ও সবজি। স্বাস্থ্যকর খাবার সামনে থাকলে এসব খাওয়ার অভ্যাসও ধীরে ধীরে তৈরি হবে।
৩. চিনি ও শর্করা থেকে দূরে
চিনি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার থেকে ১৫ দিন অন্তত দূরে থাকুন। পাশাপাশি শর্করাজাতীয় খাবার কম খান। ভাত, রুটি কম খান। এসব খাবার কম খেলে ওজন দ্রুত কমবে।
৪. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খান
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। এতে পেশি স্বাস্থ্যকর হবে। প্রোটিন খাবার বাদ দিলে শরীরে এর বাজে প্রভাব পড়বে। ডিম, দুধ, মুরগির মাংস, ডাল খাদ্যতালিকায় রাখুন। তবে লাল মাংস (গরু, খাসি) এড়িয়ে চলুন।
৫. সবজি খান বেশি বেশি
খুব সহজ কথা। সবজি খেলে ওজন কমে। হ্যাঁ, তাই থালায় বেশি বেশি সবজি রাখুন। সবজির মধ্যে রয়েছে পুষ্টি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো শরীর ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৬. ক্যালরি গ্রহণ
আপনার শরীরের জন্য কতটুকু ক্যালরি দরকার, সে অনুযায়ী ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খান। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৭. খাবার বাদ দেবেন না
না খেয়ে কিন্তু ওজন কমানো যায় না। তাই কোনো বেলার খাবারকে বাদ দেওয়া যাবে না। দিনে অন্তত ছয়বার খান। তিনবেলা বড় খাবার ও তিনবেলা ছোট খাবার—এভাবে খাবারকে ভাগ করুন। একেবারে খুব বেশি না খেয়ে অল্প পরিমাণ খাবার খান।
৮. ফাস্টফুডকে না বলুন
প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, সোডা—এই খাবারগুলোকে একেবারে না বলুন। এগুলোর মধ্যে উচ্চ পরিমাণ ক্যালরি থাকে, এতে ওজন বাড়ে।
৯. ছোট থালায় খান
বড় থালায় খেলে বেশি খাওয়া হয়ে যায়। তাই ছোট থালায় খান। খাবার কম খেতে চামচও ব্যবহার করতে পারেন। হাত দিয়ে খেলে বেশি খাবার একবারে আপনি মুখে দেন। হাতের বিকল্প চামচ ব্যবহার করলে খাবার কম গ্রহণ করা হয়।
১০. আয়নার সামনে বসে খান
শুনতে হয়তো অদ্ভুত লাগছে, তবে গবেষণায় বলা হয়, যেসব লোক আয়নার সামনে বসে খায়, তাদের ওজন দ্রুত কমে। কীভাবে? তারা নিজেকে দেখতে থাকে আর ভাবতে থাকে, ওজন কমানো দরকার। এই ভাবনা কাজে দেয় কি না, একবার পরীক্ষা করে দেখতে পারেন!
১১. হাঁটুন
ওজন কমাতে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। আর হাঁটা তো কেবল ওজনই কমাবে না, কমাবে হৃদরোগের ঝুঁকিও। বিষণ্ণতা বা মন খারাপ ভাবও কমে যাবে অনেক।
১২. একটু কম খান
আগে যেখানে হয়তো তিনটি রুটি খেতেন, সেখানে একটি রুটি খান বা যেখানে এক থালা ভাত খেতেন, সেখানে এক কাপ ভাত খান। এর বদলে পেট ভরুন সবজি আর ফল দিয়ে।
১৩. দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুমান
ওজন কমানোর বিশেষজ্ঞরা একমত হয়েছেন যে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম ওজন কমতে সাহায্য করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, আমাদের শরীর ঘুমের সময় বেশিরভাগ বিপাকীয় কাজ গুলো করে থাকে, দীর্ঘ ঘুমের সময় চর্বি পোড়ানোর যন্ত্রটির কাজের গতি বৃদ্ধি পায়। ঘুমের অপর্যাপ্ততা ক্ষুধা ও পরিতৃপ্তি নিয়ন্ত্রণকারী বিপাকীয় হরমোন লেপ্টিন ও ঘ্রেলিনকে ধ্বংস করে। কম ঘুমালে লেপ্টিনের স্তর কমে যায় এবং ঘ্রেলিনের স্তর বৃদ্ধি পায়, যার ফলশ্রুতিতে বেশি ক্ষুধা পায় ও অপূর্ণতা বা অতৃপ্ত অনুভূত হয়।
১৪. চা বা কফির পরিবর্তে গ্রিনটি পান করুন
গ্রিনটিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে যা বিপাকের হার বৃদ্ধি করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। চর্বি কোষের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে গ্রিনটি এর ক্যাটেচিন। এই ক্যাটেচিন ফ্রি রেডিকেল এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং রোগ প্রতিরোধ করে। আপনার দৈনিক চা বা কফির পরিবর্তে অর্গানিক গ্রিনটি পান করুন। দিনে ৩-৪ কাপ গ্রিনটি পান করতে পারেন।