স্বা’স্থ্য ভালো রাখার জন্য অথবা শ’রীরের পুষ্টির জন্য আম’রা অনেক পুষ্টিকর খাদ্য বা আমিষ জাতীয় খাদ্য খেয়ে থাকি। যেমন মাংস এক ধ’রনের প্রোটিন জাতীয় খাবার। যা পানি, প্রোটিন এবং চর্বির সমন্বয়ে গঠিত।
শ’রীরের কোষ তৈরির জন্য প্রতিদিন আমাদের কিছুটা প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তাই বলে মাংসের মতো প্রা’ণিজ প্রোটিন সবার শ’রীর ও বিপাক ক্রিয়ায় সমানভাবে খাপ খাওয়ানো যায় না। বরং মাংস কারো দে’হের জন্য অ’সহিষ্ণু ও সংবেদ’নশীলতা হতে পারে, এমনকি মা’রাত্মক ক্ষ’তির কারণ হতে পারে।
তাই যাদের মাংস হজ’মে স’মস্যা হয় তারা যদি তা কিছু উ’পসর্গ দেখে জানতে পারেন এবং মাংসের পরিপূরক বিকল্প আমিষ গ্রহণ করেন তাহলে তারা ঝুঁ’কি এড়ানোর পাশাপাশি আরো স্বা’স্থ্যকর ও স্মা’র্ট জীবন যাপন ক’রতে পারবেন।
একজন প্রত্যয়িত স্বা’স্থ্য প্রশিক্ষক বলেন, ‘এমন কোনো খাদ্য নেই যা সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। একটি সুখী ও স্বা’স্থ্যকর জীবনধারার জন্য মাংস আবশ্যক নয়, যদিও মাংস খাওয়াটা একজনকে স্বা’স্থ্যবান ক’রতে পারে আবার অন্যজন উদর সংক্রা’ন্ত অস্ব’স্তি বা পীড়া আ’ক্রান্ত হতে পারে।’
আপনার দে’হ যদি মাংস সহ্য ক’রতে না পারে তাহলে আপনি উ’দ্ভিজ্জ আমিষভোজী হতে পারেন যা আপনাকে অনেক ভালো অনুভূতি দেবে।
এখানে ১১টি উ’পসর্গ দেয়া হলো, যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার দে’হ মাংস প্র’ক্রিয়াকরণ ক’রতে অক্ষম এবং আপনার সু’স্থতার জন্য যতটা সম্ভব মাংস এড়িয়ে চলা উত্তম।
পে’ট ফাঁপা : মাংস খাওয়ার পর পে’ট ভারী বোধ ও ফোলা বা ফাঁপা ভাব এবং সেই স’ঙ্গে পে’টে অস্ব’স্তি বা ব্য’থা ইত্যাদি অনুভূত হতে পারে। এর পাশাপাশি আপনি যদি পে’টের স্ফীতি এবং অবসাদ বোধ করেন তাহলে অবশ্যই সু’স্থ থাকার জন্য মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
বমি ভাব : মাংস পরিপাক না হবার উ’পসর্গগুলোর মধ্যে বমিবমি ভাব, অম্বল আর বদহজ’ম অন্যতম। এই উ’পসর্গগুলো আপনাকে প্রচন্ড অ’স্বস্তিতে ফেলতে পারে। আ’সলে কাজে’র সময় যদি আপনি এমন পাকস্থলীর অসু’স্থতায় ভুগেন তাহলে কাজে মনোনিবেশ করে ফলদায়ক কিছু করাটা সত্যি ক’ঠিন। এমতাবস্থায় দুপুরের খাবারে আপনি মাংস এড়িয়ে সবজি সালাদ খাবেন।
খাদ্যজনিত রো’গাক্রান্ত : আপনি যদি মাংস ঠিকমতো হজ’ম ক’রতে অক্ষম হন তবে আপনি প্রায়ই খাদ্যজনিত রো’গে বিশেষ করে ই-কোলাই, স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা অন্ত্রে আক্রা’ন্ত হবেন। মাংস সঠিকভাবে হজ’ম করে ব্য’র্থ হওয়ার কারণে, রো’গ প্র’তিরো’ধ ক্ষ’মতাও কমে যাবে।
উচ্চ র’ক্তচা’প : উচ্চ র’ক্তচা’প হচ্ছে মাংস খাওয়ার একটি গু’রুত্ব পূর্ণ স’মস্যা যেটা হয়তো আপনি বুঝতেই পারেন না। কিন্তু উচ্চ র’ক্তচা’প হলো নিরব ঘাতক। এক্ষেত্রে সবজি খেয়ে র’ক্তচা’প কমানো যায়, কিন্তু একজন শাকাহারী মানুষকে অবশ্যই সুষম খাদ্য গ্রহণ ক’রতে হবে। উচ্চ র’ক্তচা’পধারীদের মাংস খাওয়ার অভ্যস্ততা ধীরে ধীরে বাদ দিতে হবে।
কো’ষ্ঠকাঠিন্য : জিনগতভাবে প্রতিটি মানুষের যেমন অনন্য পা’চনতন্ত্র রয়েছে, তেমনি রয়েছে খা’দ্যতালিকাগত অভ্যাস। কো’ষ্ঠকাঠিন্য ৮০% বেলায় খাবারের স’মস্যাজনিত কারণেই হয়ে থাকে এবং ২০% বেলায় পরিপাক ত’ন্ত্রের যেকোনো ধ’রনের ই’নফেকশন, প্রদাহ, ওষুধ অথবা হ’জমজনিত কারণে হতে পারে। বিশেষকরে লাল মাংসের চর্বি ও আয়রন কো’ষ্ঠকাঠিন্য হবার প্রধান কারণ। কেননা খাদ্য তালিকার যেকোনো খাবারের চেয়ে চর্বি পরিপাক হতে বেশি সময় নেয়।
চোখের নিচে কালো দাগ : শুধু নির্ঘুম কাটালেই চোখের নিচে কালো দাগ পরে না, মাংস ঠিকমতো পরিপাক না হবার প্র’ভাব স্প’ষ্টত আপনার সৌন্দর্যের ওপর পড়বে। আপনি যদি দেখেন মাংস খাওয়ার ঠিক পরের দিন আপনার চোখের নিচে কালো দাগ প’ড়েছে, তাহলে বুঝতে হবে এটা মাংস পরিপাকজনিত স’মস্যার লক্ষণ।
শ’রীর ও নিঃশ্বা’সে দুর্গ’ন্ধ : মাংস ঠিকমত পরিপাক না হবার কারণে আপনার শ’রীর ও নিঃশ্বা’সে দুর্গন্ধ দেখা দিতে পারে। পাচনতন্ত্রে মাংস পরিপাকে স’মস্যা হলে পাচক অ্যা’নজাইম দ্বারা দু’র্গন্ধযুক্ত গ্যাস তৈরি হয়, যা আপনার শ’রীর ও নিঃশ্বা’সে দুর্গন্ধ আনে।
অবসাদ : মাংস খাওয়ার পর আপনার যদি কুঁড়ে এবং ক্লা’ন্ত অনুভূত হয়, তাহলে ধ’রে নিন আপনি মাংস পরিপাকজনিত সম’স্যায় ভু’গছেন। মাংস পরিপাকে অ’তিরিক্ত শ’ক্তি ব্যয়িত হবার কারণে আপনি এমনটি অ’নুভব করেন। কয়েকদিন যাবত যদি আপনার অন্ত্রে ইটের মতো বোঝা অনুভূত হয় তাহলে জানবেন আপনার মাংস পরিপাকে সম’স্যা রয়েছে।
পেশী কমে যাওয়া : আপনি মাংস প’রিপাকজনিত স’মস্যায় এক ধ’রনের বমিবমি ভাব, পে’ট ফাঁপা ও মোচড়ানো, অবসাদ এবং অস্ব’স্তি কর অনুভূতি হবার স’ঙ্গে স’ঙ্গে আরেকটি লক্ষণ দে’খতে পাবেন। সেটা হলো আপনার পেশী কমে যাওয়া।
উল্লেখিত যেকোনো একটি উ’পসর্গও দেখা দিলে মাংসের বিকল্প উদ্ভিজ্জ আমিষে অভ্যস্ত হওয়াটা আপনার জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মাংস ছেড়ে দেয়াটা আপনার কাছে ভীতিকর মনে হতে পারে।
কিন্তু আপনার সু’স্থ জীবনধারা যদি ন’ষ্ট ক’রতে না চান তবে আপনার জে’নে নেয়া উচিত, খাদ্যতালিকার কোনটি আপনার জন্য সঠিক খাদ্য এবং কোনটি আপনাকে শ’ক্তি দেবার বদলে দু’র্বল করে দিবে। তাই মাংস খাওয়ার সময় একটু সচে’তনতা আপনাকে দিতে পারে স্বা’স্থ্যগত সুর’ক্ষা।
গরুর মাংস খেয়েও ঝুঁ’কিমু’ক্ত থাকতে, নিচের ব্যাপারগুলো মেনে চলুন।
১. খাওয়ার জন্য বেছে নিন round এবং loin/sirloin অঞ্চলের মাংস।
২. দৈনিক ৩ আউন্স বা ৮৫ গ্রামের বেশি খাবেন না, আয়তনের দিক দিয়ে তা একটা কম্পিউটারের মাউস বা একটি তাসের বাণ্ডিলের সমান।
৩. মাংস কাটার সময় দৃ’শ্যমান চর্বি আ’লাদা করে ফে’লে দিন।
৪. বেশি তেল দিয়ে ভুনা করার চেয়ে বারবিকিউ, গ্রিল, কাবাব বা অল্প তেলে ঝোল করে ঝোল এড়িয়ে মাংস খেলে তা বাড়তি তেলে ক্ষ’তির আশ’ঙ্কা এড়াতে সহায়তা করবে।
রো’গাক্রান্ত অব’স্থায় রো’গীর শা’রীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে তার শা’রীরিক চা’হিদা অনুযায়ী আমিষের পরিমাণ ও খাবার নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে একজন দক্ষ ক্লিনিক্যাল পুষ্টিবিদ/ ডায়েটিশিয়ানের কাছ থেকে আপনার পথ্যটি নি’শ্চিত করে নিন।
লাল মাংসে বাড়ে ক্যা’ন্সারের ঝুঁ’কি
১. যারা গরু ও খাসির মাংস বেশি খান এবং আঁশসমৃদ্ধ খবার কম খান তাদের মধ্যে কোলন ক্যা’ন্সার হওয়ার আশ’ঙ্কা বেশি থাকে।
২. আঁশসমৃদ্ধ খাবার বৃহদান্ত্রের সঞ্চালন বা পেরিস্টালসিসকে দ্রুততর করে। তৈলাক্ত খাবার, টিনজাত খাবার ও ফাস্টফুডও ঝুঁ’কিপূর্ণ।
৩. লাল মাংসপ্রেমীদের কোলন ক্যা’ন্সার হওয়ার হার শতকরা ১২ ভাগ বেশি। অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাত লাল মাংসে মৃ’ত্যু ঝুঁ’কি তার চেয়েও বেশি।
৪. যারা নিয়মিত লাল মাংস আহার করেন তাদের মধ্যে ধূমপান, মদ্যপানসহ নানা বদভ্যাস গড়ে ওঠে। এতে বেড়ে যায় হৃদরো’গ ও ক্যা’ন্সারের ঝুঁ’কি।
৫. যারা সপ্তাহে পাঁচ বেলা গরু, খাসি কিংবা ভেড়ার মাংস খান, তাদের কোলন ক্যা’ন্সারে আক্রা’ন্ত হওয়ার ঝুঁ’কি বেশি থাকে। এসব পশুর মাংসকে বলা হয় রেডমিট। রেডমিটকে চিকিৎ’সা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অন্যতম ক্যা’ন্সারপ্রবণ খাবার বা কারসিনোজেন।
৬. মাংসভোজিরা যদি তাদের খাদ্য তালিকায় লাল মাংসের পরিবর্তে সপ্তাহে মাত্র একবেলা মাছ অন্তর্ভুক্ত করেন তবে এ অকাল মৃ’ত্যুর হার ৭ ভাগ কমতে পারে।
৭. প্রক্রিয়াজাত মাংসের ক্ষেত্রে হৃদরো’গ, ক্যা’ন্সার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁ’কিতে সোডিয়াম ও নাইট্রেটের কারণে অকাল মৃ’ত্যুর ঝুঁ’কি বেড়ে যায়।