অনুভূতিকে আহত করে কিংবা অতিরিক্ত প্রশংসা জাতীয় এমন কিছু কথা রয়েছে , যেগুলো শিশুকে কখনোই বাবা-মার বলা উচিত নয় । যুক্তরাষ্ট্রের বার্নাড সেন্টার ফর টডলার ডেভেলপমেন্ট এর পরিচালক এবং ‘হাউ টু টডলার থ্রাইভ’ বইয়ের লেখক তোবাহ ক্লেইন এর পরামর্শ অনুসারে জেনে নিন , কোন ১০টি কথা শিশু সন্তানকে কখনোই অভিভাবকের বলা উচিত নয় ।
এটা এভাবে নয় , এভাবে করতে হয়
নতুন কোনো কিছু শেখার ক্ষেত্রে শিশুরা কয়েকবার ব্যর্থ হবেই । কিন্তু আপনি যদি শুরু থেকেই তাদের ব্যর্থতার মধ্যে বারবার নিজের নির্দেশনা দিতে থাকেন , তাহলে তাদের অনুভূতি হবে তারা কাজটিতে কোনোভাবেই সক্ষম হবে না ।
ক্লেইন বলেন , এটা শিশুকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে , ‘ আমি এটা করতে পারবো না, শুধুমাত্র বড়রা জানে কিভাবে এটা করতে হবে । ’ যা আসলে শিশুর আস্থা বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কাজ করে ।
দিনে দিনে বোকা হচ্ছো
হতে পারে শিশু কাউকে সালাম বা শুভেচ্ছা জানায়নি , কিন্তু তাই বলে তাকে সামনাসামনি ‘ দিনে দিনে বোকা হচ্ছো ’ বলে বকা দিলে তা শিশুকে বিব্রতকর ও অস্বস্থিকর অবস্থায় ফেলবে , কারণ এটা তার জন্য একটা নতুন পরিস্থিতি । বকাঝকা না করে , আবেগের লেভেল উন্নয়নে বুঝিয়ে তাকে সাহায্য করুন ।
তুমি খুব লাজুক
সাময়িক কোনো কিছুর ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিত্বের লেভেল বলাটা সহায়ক নয়। ক্লেইন বলেন , ‘ স্বভাবগতভাবে শিশু লাজুক প্রকৃতির হোক বা না হোক , এ কথায় ওই মুহূর্তটায় শিশুরা খুব অস্বস্তিবোধ করে । যা শিশুর অনুভূতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে । ’
কাঁন্নার মতো তো কিছু হয়নি
শিশু যখন মন খারাপ করে কোনো কিছু নিয়ে কান্না করে কিংবা তুচ্ছ কারণে কান্না করে বা আপাতদৃষ্টিতে কোনো কারণ নেই বলে মনে হলেও , কান্না থামাতে বলাটা শিশুকে বিব্রত করে । ক্লেইন বলেন , ‘ শিশুকে যখন কান্না করে তখন ধমক নয় বরং তারা সহানুভূতির প্রত্যাশা করে । ’
বড় ছেলেরা কাঁদে নাকি ?
কিশোর বয়সে পা দেওয়ার আগের ছেলে শিশুদের প্রায় বলা হয়ে থাকে , ‘ বড় ছেলেরা কাঁদে নাকি ? ’ যা কঠিনভাবে তাদের আবেগ দমন করার জন্য নির্দেশনা । এই বাক্য তাদেরকে এমন বার্তা পৌঁছে দেয় যে , বড় ছেলে শিশুদের আবেগের কোনো মূল্য নেই , তারা আবেগ-অনূভুতি শুন্য ।
দেখ তুমি কত সুন্দর !
তুমি খুবই সুন্দর , দেখ তুমি কত সুন্দর – এই ধরনের বাক্য শোনার মাধ্যমে মেয়ে শিশুরা ছোট বয়স থেকেই ভাবতে শেখে পৃথিবী তাদের কাছ থেকে কেমন থাকাটা আশা করে । ফলে তারা কেবলমাত্র নিজেদের সৌন্দর্যের প্রতি বেশি নজর দেওয়া শুরু করে ।
এটা সুন্দর নয় , তোমার সঙ্গে একদমই মানায় না
মেয়ে শিশুদের পোশাকের ক্ষেত্রেও এ ধরনের মন্তব্য করা উচিত নয় । ‘ এটা তোমার সঙ্গে একদমই মানায় না , এটা কেন পরেছ ? ’- এর ফলে মেয়ে শিশুরা শিশুকাল হতেই ভাবতে শিখে তাদের একটা নির্দিষ্টভাবেই থাকতে হবে এবং তারা সৌন্দর্যমান বিবেচনায় একটা নির্দিষ্ট পথেই থাকে ।
তুমি এটা খাবে ? এটা খেলে তো মোটা হয়ে যাবে
ক্লেইন বলেন , ‘ এই কথাটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক হয় , বিশেষত মেয়ে শিশুদের বেশি বলা হয়ে থাকে , কিন্তু এটা সব বয়সের শিশুদেরই বলা হয়ে থাকে । ’ তিনি আরো জানান , বিশেষ করে আমাদের সমাজে মেয়েদের শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রে এ ধরনের অনেক বার্তা দেওয়া হয়ে থাকে । বাবা-মাকে তাদের নিজেদের খ্যাদ্যভাস এবং শরীরের গঠনের কি বলে সেটাও দেখা উচিত । শিশুরা যখন চর্বি ও ওজন নিয়ে অভিভাবকের উদ্বিগ্নতার কথা শোনো , তখন তারা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে ।
তুমি খুব স্মার্ট
তুমি খুব স্মার্ট – এ জাতীয় প্রশংসা শিশুকে কোনো কিছু করতে উৎসাহিত করেনা বরং তাদের কোনো কিছু শেখা থেকে বিরত রাখে । কারণ তারা মনে করে ‘ আমি খুব স্মার্ট এবং আমি সবই জানি । ’
আমি তোমার ওপর খুব বিরক্ত
একটি শিশু যদি জানে সে ভুল করেছে, তাহলে তাকে অপরাধবোধে ভোগানোর কোনো প্রয়োজন নেই। ক্লেইন বলেন, ‘একটি শিশু যদি ইতিমধ্যে জানে যে সে কোনো ভুল করেছে বা এর জন্য মনে কষ্ট পেতে থাকে, তার সঙ্গে আবার নতুন করে তাকে লজ্জায় ফেললে শিশু মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এর পরিবর্তে সন্তানের সঙ্গে কি ঘটেছে বা কেন কিছু ঘটেছে অভিভাবক হিসেবে তা প্রথমে বোঝার চেষ্টা করুন এবং তারপর তাকে বোঝান যে এরকম যেন আর না ঘটে ও অবস্থার উন্নতিতে তাকে সহায়তা করুন।’- ক্লেইন বলেন।