কালোজিরা (Nigella Sativa Linn) : এটি মাঝারী জাতীয় মৌসুমী গাছ, একবার ফুল ও ফল হয়। স্ত্রী, পুরুষ দুই ধরনের ফুল হয়, রং সাধারণত হয় নীলচে সাদা (জাত বিশেষে হলুদাভাব), পাঁচটি পাঁপড়ি বিশিষ্ট।
কিনারায় একটা বাড়তি অংশ থাকে। তিন-কোন আকৃতির কালো রং এর বীজ হয়। গোলাকার ফল হয় এবং প্রতিটি ফলে ২০-২৫ টি বীজ থাকে। আয়ুর্বেদীয়, ইউনানী, কবিরাজী ও লোজক চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।
নবী করিম (সাঃ) মৃ”’ত্যু ব্যতীত সকল রোগ আরোগ্যকারী ওষুধ সম্পর্কে জ্ঞান দান করেছেন-“তোমাদের জন্য ‘সাম’ ব্যতীত সকল রোগের আরোগ্য রয়েছে কালো জিরায়। আর সাম হলো মৃ’ত্যু।” সুতরাং কালো জিরা হোক আমাদের নিত্য সঙ্গী। সু-স্বাস্থ্য অর্জনে ও সংরক্ষনে কালোজিরা জাত ওষুধ গ্রহনে কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া বা জটিলতা সৃষ্টি করে না। সর্ব রোগের মহৌষধ হোমিওপ্যাথিক ও দেশীয় চিকিৎসায় সহযোগী ওষুধ রূপে এর ব্যবহার।
কালোজিরার উপকারি উপাদান :এর মধ্যে রয়েছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস, কার্বো-হাইড্রেট ছাড়াও জীবণু নাশক বিভিন্ন উপাদান সমূহ।
এতে রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধক কেরোটিন ও শক্তিশালী হর্মোন, প্রস্রাব সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান, পাচক এনজাইম ও অম্লনাশক উপাদান এবং অম্লরোগের প্রতিষেধক। রোগপ্রতিরোধক :মস্তিষ্ক, চুল, টাক ও দাঁদ, কান, দাত, টনসিল, গলাব্যথা, পোড়া নারাঙ্গা বা বিসর্গ, গ্রন্থি পীড়, ব্রণ, যাবতীয় চর্মরোগ, আঁচিল, কুষ্ট, হাড়ভাঙ্গা, ডায়াবেটিস, রক্তের চাড় ওকোলেষ্টরেল, কিডনী, মুত্র ওপিত্তপাথরী, লিভার ও প্লীহা, ঠান্ডা জনিত বক্ষব্যাধি,
হৃদপিন্ড ও রক্তপ্রবাহ, অম্লশূল বেদনা, উদরাময়, পাকস্থলী ও মলাশয়, প্রষ্টেট, আলসার ও ক্যান্সার। চুলপড়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ওসৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্কিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি, মস্তিষ্কশক্তি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালোজিরা উপযোগী। কালোজিরার যথাযথ ব্যবহারে দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি অর্জিত হয়। এর তেল ব্যবহারে রাতভর আপনি প্রশান্তিপর্ন নিদ্রা যেতে পারেন। রোগপ্রতিরোধক কালো জিরা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
ঔষধ প্রস্তত:আগেই বলেছি- আমরা কালো জিরার টীংচার, বড়ি ও তেল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করছি। কখনো এককভাবে কখনো অন্য ওষুধের সাথে সংমিশ্রিত করে রোগীর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকি।
কালোজিরা তেলের সাথে জলপাই তেল, নিম তেল, রসুনের তেল, তিল তেল মিশিয়ে নেয়া যায়। বিভিন্ন কাজে ব্যবহার:কালোজিরা আরক+কমলার রস, কালোজিরা+পুদিনা চায়ের সাথে, কালোজিরা+রসু+পেঁয়াজ, কালোজিরা+গাজর।মাথাব্যথা : মাথা ব্যথায় কপালে উভয় চিবুকে ও কানের পার্শ্ববতি স্থানে দৈনিক ৩/৪ বার কালোজিরা তেল মালিশ করুন।
৩ দিন খালি পেটে চা চামচের এক চামচ করে তেল পান করুন। পাশাপাশি লক্ষণসাদৃশ্যে হোমিওপ্যাথি ওষুধ নির্বাচন করুন। সচরাচর মাথাব্যথায় মালিশের জন্য রসুনের তেল, তিল তেল ও কালোজিরা তেলের সংমিশ্রণ মাথায় ব্যবহার করুন। চুলপড়া : লেবু দিয়ে সমস্ত মাথার খুলি ভালোভাবে ঘষুন। ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ও ভালোভাবে মাথা মুছে ফেলুন। তারপর মাথার চুল ভালোভাবে শুকানোর পর সর্ম্পুণ মাথার খুলিতে কালোজিরার তেল মালিশ করুন।
১ সপ্তাহে চুল পড়া বন্ধ হবে। মাথার যন্ত্রনায় কালোজিরার সাথে পুদিনা আরক দেয়া যায়। এক্ষেত্রে পুদিনার টীংচার রসুনের তেল, তিল তেল, জলপাই তেল ও কালোজিরা তেল একসাথে মিশিয়েও নেয়া যেতে পারে।
কফ ও হাঁপানী : বুকে ও পিঠে কালোজিরার তেল মালিশ করুন। এক্ষেত্রে হাঁপানীরতে উপকারী অন্যান্য মালিশের সাথে এটা মিশিয়েও নেয়া যেতে পারে। স্মরণশক্তি ও ত্বরিত অনুভুতি : চা চামচে ১ চামচ কালোজিরা তেল ও ১০০ গ্রাম পুদিনা সিদ্ধ ১০ দিন সেবন করুন।
পাশাপাশি ক্যালকেরিয়া ফস ১২ এক্স, ৩০এক্স দিনে ৩ বার ৪ বড়ি করে। সামান্য ঈষদোষ্ণ পানি সহ সেবন কালোজিরার টীংচার ও পুদিনার টীংচারের মিশ্রণ দিনে ৩ বার ১৫-২০ ফোটা করে আহারের ১ ঘন্টা আগে এবং ১ ঘন্টা পরে ক্যালকেরিয়া ফস ১২ এক্স ও বড়ি কর্ েপ্রয়োজনবোধে ক্যালি ফস ১২ এক্স ও একসঙ্গে দেয়া যেতে পারে।
ডায়াবেটিস : কালোজিরা চূর্ণ ও ডালিমের খোসাচূর্ণ মিশ্রণ, কালোজিরা তেল ডায়াবেটিসে উপকারী।কিডনির পাথর ও ব্লাডার : ২৫০ গ্রাম কালোজিরা ও সমপরিমাণ বিশুদ্ধ মধু। কালোজিরা উত্তমরূপে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশ্রিত করে দুই চামচ মিশ্রণ আধাকাপ গরমপানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন আধাকাপ তেল সহ পান করতে হবে।
কালোজিরার টীংচার মধুসহ দিনে ৩/৪ বার ১৫ ফোটা সেবন করতে পারেন। মেদ ও হৃদরোগ/ধমনী সংকোচন : চায়ের সাথে নিয়মিত কালোজিরা মিশিয়ে অথবা এর তেল বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হবে, তেমনি মেদ ও বিগলিত হবে।
অ্যাসিডিটি ও গ্যাসট্রিক : এককাপ দুধ ও এক বড় চামচ কালোজিরার তেল দৈনিক ৩ বার ৫-৭ দিন সেবন করুন।চোখের পীড়া : রাতে ঘুমোবার আগে চোখের উভয়পাশে ও ভুরুতে কালোজিরা তেল মালিশ করুন এবং এককাপ গাজরের রসের সাথে একমাস কালোজিরা তেল সেবন করুন। নিয়মিত গাজর খেয়ে ও কালোজিরা টীংচার সেবন আর তেল মালিশে উপকার হবে। প্রয়োজনে নির্দেশিত হোমিও ও বায়োকেমিক ওষুধ সেবন।