স্বামী-স্ত্রী সুখে দিন কাটাবে এটাই স্বাভাবিক এবং যা স্বাভাবিক তা সত্যিও বটে। কিন্তু এই সত্যিও কখনো কখনো মিথ্যে হয়ে ওঠে, ধূসর ঠেকে বোঝাপড়ার অভাবে, দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যে এবং পূর্বনির্ধারিত কিছু ধারণার জন্য। কখনো ভালোবাসার অন্যায় অধিকারবোধে, কখনো বা স্বভাবগত সংকীর্ণতায়।
যে বয়সে মেয়েরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঘুরেফিরে নিজেকে দেখতে শুরু করে, সেই ‘বড়’ হওয়ার সময় থেকেই তাদের মনে ‘মিস্টার পারফেক্ট’-এর একটা ছবি আঁকা থাকে। দেখতে সুন্দর, ভালো কথা বলে, না বলতেই সবকিছু বুঝে যায়, কোনো কাজেই বাধা দেয় না, এমন সব মন-ভালো-করা গুণসম্পন্ন মানুষই তো মনের মানুষ!
কিন্তু ইচ্ছেপূরণের এই ছবির সাথে বাস্তবের বিস্তর ফারাক অনেক সময়ই ঘটে। আর এই স্বপ্নভঙ্গের ফলে দুজনের মাঝে দেখা দেয় অশান্তি। এটা যে শুধু অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে ঘটে তা কিন্তু নয়, ঘটতে পারে লাভ ম্যারেজের ক্ষেত্রেও। যে মানুষটিকে দীর্ঘদিন ধরে চেনেন, বিয়ের পর তাকে আবিষ্কার করতে পারেন নতুন রূপে।
ভেঙ্গে না পড়ে একটু বুঝে চলে এসব অশান্তি এড়ানো সম্ভব। বিয়ের মেয়েদের যেসব সমস্যায় পড়তে তা মূলত বোঝাপড়ারই সমস্যা। তবে সবার ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো একই হবে, তা কিন্তু নয়।
বদমেজাজ :
বিয়ের পর আবিষ্কার করলেন আপনার স্বামী অল্পতেই রেগে যান। সামান্য ব্যাপারেই মাত্রাতিরিক্ত রাগ সম্পর্কে ভয় সৃষ্টি করে, স্বতঃস্ফূর্ততা হারায়। সংসারে নেমে আসে দম বন্ধ করা থমথমে পরিবেশ। প্রথম থেকেই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত।
রাগী বলে ভয় পাবেন না। তাহলে কোনো দিনও শোধরাতে পারবেন না। রাগের কারণ বুঝতে চেষ্টা করুন। তেমন গুরুত্বপূর্ণ কারণ না থাকলে বুঝিয়ে বলুন, মাথা গরম করে সমাধান সমাধান সম্ভব নয়। কঠিন মনে হলেও নিজের মেজাজ ঠিক রাখবেন। -আয়ত্তের বাইরে চলে গেলে আপনাকেও শক্ত হতে হবে। স্পষ্ট জানিয়ে দিন রাগারাগি করলে কোনো আলোচনায় যাবেন না।
কার্পণ্য :
বিয়ের পর বেড়াতে গিয়ে টের পেলেন কোথায় যেন সমস্যা। বুঝতে পারলেন বিয়ের আগে বাবা-মায়ের সাথে বেড়াতে গিয়ে যেভাবে ঘুরেছেন বা থেকেছেন, তেমনটা হচ্ছে না। আর্থিক অস্বাচ্ছন্দ্যের কারণে নয়, স্বামীর কিপটেমিই এর কারণ।
সংসার ও সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং তার জন প্রয়োজনীয় অর্থ দরকার তা বুঝিয়ে বলুন। বুঝিয়ে বলার পরেও শোধরাতে না পারলে সাংসারিক হিসাব নিকাষের ব্যাপারে খুব বেশি মাথা ঘামাতে দেবেন না।
প্রয়োজন এবং স্বাচ্ছন্দ্য জীবনে দুটোই জরুরি, এটা মনে রাখতে হবে। -সংসারটা আপনারও, অপব্যয় করবেন না সেই আশ্বাস দিন। এতেও ফল না হলে কাউন্সেলিং করান।
দায়িত্ব জ্ঞানের অভাব :
সংসারের দায়িত্ব দুজনেরই। সেক্ষেত্রে স্বামীর দায়িত্বজ্ঞানের অভাব থাকলে পরিস্থিতি যথাযথ পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। স্বামীকে কাজের দায়িত্ব দিন, সব কাজ নিজের ঘাড়ে নিলে কোনো সমাধান তো হবেই না, বরং সমস্যা বাড়বে।
দায়িত্ব নিয়ে তাকে কোনোরকম জ্ঞান দিতে যাবেন না। আত্মীয়স্বজনের সামনে এ নিয়ে ঠাট্টা করাটাও ঠিক না। কোনো কিছু বলার থাকলে চেঁচামেচি না করে অনুরোধ করুন। কাজ হবে আবার সম্পর্কের বাঁধনও ঢিলে হবে না। কোনো জরুরি কাজ দুজনে একসাথে করার চেষ্টা করুন।
সন্দেহবাতিক :
স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে ঘুণ ধরাতে পারে এই মারাত্মক প্রবণতা। গোড়াতেই এর বিশ্লেষণ এবং সমাধান প্রয়োজন।
স্বামীর মনে সন্দেহ দানা বাঁধছে এটা অনুমান করা মাত্র আপনার হাবভাব, আচার-আচরণ, কথাবার্তায় একটা পরিবর্তন নিয়ে আসুন। তার বিশেষ কোনো অভাববোধ থাকলে সেটা বুঝে নিয়ে তা পূরণ করার চেষ্টা করুন। দুজনে একসাথে সময় কাটান। বিশেষ কোনো দরকার না থাকলেও ফোন করে, এসএমএস করে খোঁজখবর নিন। তিনি যেন বুঝতে পারেন যে আপনি তার ব্যাপারে খেয়াল রাখেন, ভালোবাসেন এবং সব সময় পাশে থাকবেন।
খোলাখুলি আলোচনা করে জেনে নিন আপনার ব্যবহারের ঠিক কোন ব্যাপারটা তার অস্বাভাবিক লাগছে। আপনি নিজে আপনার ব্যবহারের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন। তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠলেও, আপনি কথা কাটাকাটির মধ্যে যাবেন না। ঠাণ্ডা মাথায় একটা সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করুন।
বাড়ির অন্যান্য সদস্য বা বাইরের লোকের কাছে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করবেন না। কেউ ঠাট্টা করলে প্রশ্রয় দেবেন না। বাইরের লোকের সঙ্গে মিশুন তবে খুব অন্তরঙ্গ হয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে দুজনে মিলে কাউন্সেলিং করাতে পারেন।