প্রেগন্যান্সি সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও মূল ঘটনা।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গর্ভধারণ করতে চাওয়া সমস্ত দম্পতির মধ্যে, শুধুমাত্র ৩০% প্রথম চক্রের মধ্যে গর্ভবতী হয়, ৮৫% ১২ মাসের মধ্যে এবং অন্যদের অনেক সময় চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। প্রায় প্রত্যেক মাই তার বাচ্চার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য গর্ভাবস্থার বিষয়ে সবকিছু পড়ে। দুর্ভাগ্যক্রমে, ইন্টারনেটে অনেক মিথ্যা এবং ভুল তথ্য রয়েছে যা কখনও কখনও ক্ষতিকারক হতে পারে। আজ আমরা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব কয়েকটি জনপ্রিয় বৈজ্ঞানিক তথ্য যা ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায় এবং কেনো এগুলো মানবেন না তা ব্যাখা করব।

চওড়া কোমর থাকলে বাচ্চা জন্ম দিতে সুবিধা হয়!

চওড়া কোমর বলতে বৃহত্তর ইলিয়ামকে বোঝায় যা কোমরের বৃহত্তম এবং উপরের অংশ। ইলিয়াক ক্রেস্টের মধ্যকার দূরত্বের উপর বার্থ ক্যানেলের আকার নির্ভর করে না।এটি পেলভিসের মাঝখানে বৃত্তাকার গর্তের আকার যার উপর বাচ্চার জন্ম নির্ভর করে।। এটি পেলভিস ইনলেট নামে পরিচিত এবং কোন মহিলার কোমর বড় বা ছোট এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই।

পেটের আকার-আকৃতি নির্দেশ করে যে শিশুটি একটি ছেলে বা মেয়ে!

একটি শিশুর লিঙ্গ এই ভাবে চিহ্নিত করা খুব সুবিধাজনক কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এটি এত সহজ নয়।একটি গর্ভবতী মহিলার গন্ডের আকার প্রভাবিত করতে পারে যে দুটি জিনিস তা হলো গর্ভের আকার এবং গর্ভে শিশুর অবস্থান।

একাধিক আলট্রাসাউন্ড শিশুর জন্য নিরাপদ নয়!

সঠিকভাবে ব্যবহৃত প্রসবের আল্ট্রাসাউন্ড একটি মা বা তার শিশুর ক্ষতি করে তার কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।আল্ট্রাসাউন্ড বিকিরণ ব্যবহার করে না; এটা উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে যা শিশুর সাথে ধাক্কা খেয়ে একটা ছবির সৃষ্টি করে।কিন্তু এই তরঙ্গের তীব্রতা খুব কম এবং পদ্ধতিটি বেশ দ্রুত শেষ হয়।সুতরাং গর্ভবতী মহিলার একমাত্র ঝুঁকি যখন আনাড়ি কেউ যন্ত্রটি ব্যবহার করে।

পেটের উপর ভর দিয়ে শুয়ে থাকা শিশুর জন্য ক্ষতিকর!

একজন শিশু পেশীবহুল জরায়ুতে গভীরভাবে লুকানো এবং সুরক্ষিত থাকে।একটি গর্ভবতী মহিলার যতক্ষণ এটি আরামদায়ক লাগে যতক্ষণ পর্যন্ত তার পেটে ভর দিয়ে ঘুমোতে পারে। মার কোন সমস্যা না হলে শিশুরও কোন ক্ষতি হবে না।

আপনি গর্ভবতী হলে দৌড়াতে পারবেন না!

গর্ভবতী মানে এই নয় যে আপনি দৌড়ানো ছেড়ে দেবেন। কোন মহিলার গর্ভধারণে কোন সমস্যা না হলে নিয়মিত দৌড়ানো খুবই ভালো ও নিরাপদ। যদি আপনার রক্তচাপ উচ্চ হয় বা আগে কখনো দৌড়ানোর অভিজ্ঞতা না থাকে তবে না দৌড়ানোই ভালো।

‘মর্নিং সিকনেস’ শুধু সকালেই এবং গর্ভাবস্থার প্রথম চক্রে অনুভূত হয়!

‘মর্নিং সিকনেস’ গর্ভাবস্থার সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ। ৮০% মহিলা এই সমস্যায় একইভাবে ভুগে কিন্তু মাত্র ২% সকালে এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়। যদিও এটির নাম ‘মর্নিং সিকনেস’ এটি দিনের যে কোন দিন হতে পারে। কিছু বিশেষজ্ঞ এটার নাম বদলিয়ে ‘অল ডে সিকনেস’ এর প্রস্তাব করেছেন। অন্যদিকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার প্রথম চক্রে এটি বেশী ঘটে। তবে ২০% মহিলার ক্ষেত্রে এটি ডেলিভারী পর্যন্ত হয়ে থাকে।

আপনি আপনার মাথার উপরে আপনার হাত তুলতে পারবেন না কারণ এটি আপনার বাচ্চার শ্বাসরোধ করবে!

এটি একটি গালগল্প ছাড়া কিছুই নয়। এটি শিশুর ঘাড়ের কোন ক্ষতি করে না। পাশাপাশি, অনেক শিশু তাদের গলায় চারপাশে আবৃত নালী নখ দিয়ে জন্ম নেয়, এবং ডাক্তার সাধারণত এটি একবার বা দুইবার চিকিৎসার মাধ্যমে অপসারণ করে।

সব মহিলাদের গর্ভাবস্থায় খুশি মনে হয়। এটি তাদের জীবনের সেরা সময়!

সবাই মনে করে যে গর্ভাবস্থা একজন মহিলার জীবনে সুখী সময়, কিন্তু অনেক গর্ভবতী মহিলাদের মনে মানসিক চাপ, বিভ্রান্তি, ভয়, এবং অন্যান্য অসন্তুষ্ট অনুভূতি কাজ করে।১৪-২৩% মহিলাদের বিষণ্ণতার নানা লক্ষণ দেখা যায়। এটি হয় কারণ হরমোন পরিবর্তন মস্তিস্কে প্রভাব ফেলে। এর অবশ্যই চিকিৎসা করানো উচিত অন্যথায় তা মা ও শিশুর জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

ডেলিভারীর পর গর্ভাবস্থার সময়ের ওজন কমে যায়!

গর্ভাবস্থার ওজন শিশুর, প্লাসেন্টা, ক্রমবর্ধমান গর্ভাশয়, স্তন, রক্তের বৃদ্ধি , শরীরের তরল পদার্থ, এবং কিছু অতিরিক্ত চর্বির সংমিশ্রণ। জন্ম দেওয়ার পর পর, অবিলম্বে শিশুর ওজন , নালী এবং অ্যামিনিটিক তরল এর ওজন হ্রাস পাবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শরীরের তরল কমতে থাকবে এবং বাকি থাকবে কিছু অতিরিক্ত চর্বি। এগুলো আপনার তাড়াতাড়ি ঝরিয়ে ফেলা উচিত।

বাইরে কি ঘটছে তা ভ্রূণকে প্রভাবিত করে না!

বহু বছর ধরে এটি মনে করা হযত যে শিশুরা বাইরের জগতের কোন জ্ঞান ছাড়াই জন্মগ্রহণ করে। ডাক্তাররা এখন বুঝতে পেরেছেন যে শিশুরা শব্দ শোনে, বিশেষ করে তাদের মায়ের কণ্ঠস্বর, যা তাদেরকে শান্ত করে। তারা আপনার পেটের ভেতর দিয়ে আলো দেখতে পারে এবং খুব উজ্জ্বল হলে ঘুরে যায়। তারা প্লাসেন্টা এবং গর্ভাশয়ের দেওয়াল চোষার মাধ্যমে আপনি যা খাচ্ছেন তার স্বাদ গ্রহণ করতে পারে। এমনকি তারা স্বপ্নও দেখতে পারে। অর্থাৎ বাইরের জগতের সবকিছু তাদেরকে প্রভাবিত করে।

সি-সেকশন (সিজার) হল বাচ্চা ডেলিভারির সহজ উপায়!

অনেক নারী যোনিপথে ডেলিভারির চেয়ে সি সেকশনে (সিজার) ডেলিভারি করাতে চায় যদিও এর চিকিৎসাগত কোন কারণ নাই। এই কারণেই অনেকে মনে করেন যে সি-সেকশন কম বেদনাদায়ক এবং নিরাপদ। কিন্তু এটার বিশ্বস্ত কোন সূত্র নেই। প্রকৃতপক্ষে, সিজার বেদনাদায়ক হয়। শিশুর জন্ম হওয়ার পর থেকে ব্যথা শুরু হয়। এছাড়াও, এটি ভবিষ্যতে জটিলতার সৃষ্টি করে। সকল ডাক্তার এ সি সেকশন( প্রাকৃতিক উপায়) এর কথা বলে যেখানে মা ও শিশু উভয়েই সুস্থ থাকে। কোন জটিলতা থাকলেই সিজার করা উচিত, অন্যথায় নয়। সিজারের কারণে জন্ম হওয়া বাচ্চার নানা ধরনের সমস্যা হয়। তাছাড়াও এটি আজকাল এক ধরনের ব্যবসায়ে পরিণত হয়েছে। কারণ এই পদ্ধতিতে বেশী টাকা বিল করা হয়। ফলে অনেকেই নিজেদের পেশার ও ব্যবসার অবৈধ সুযোগ গ্রহণ করে।

তাই না জেনে সবকিছু বিশ্বাস করবেন না। আসল কথা জানুন এবং নিজে ও নিজের ভবিষ্যৎ শিশুকে সুস্থ রাখুন।

আমাদের আয়োজন ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, শেয়ারের মাধ্যমে আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Related Posts

রোজা রেখে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে কী করবেন!

রোজার মাসে সবাই যেন খাবারের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। সারা দিন না খাওয়ার অভাবটুকু ইফতারে পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কি এই প্রতিযোগিতা? কে কত খেতে বা রান্না করতে পারে।…

গলার অতিরিক্ত চর্বি কমানোর ১০টি সহজ উপায়…

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই লক্ষ্য করছেন তো জিনিসটা? আর ভাবছেন কী বাজে লাগছে মুখটা! অতিরিক্ত কী একটা ঝুলছে! আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি গলায় জমে থাকা…

জানেন কি গরমে খাবারের চার্ট কেমন হওয়া উচিত?

গরমে অস্বস্তিতে সবাই। এরমধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। তাই গরমে সুস্থ থাকতে ঠিকঠাক খাবার চার্ট খুবই জরুরি-…

বয়স অনুযায়ী আপনার শিশুর প্রতিদিন কতটুকু পানি প্রয়োজন

বাচ্চার কতটুকু পানি প্রয়োজন সেটি আসলে নির্ভর করে বাচ্চার অবস্থা, ওজন ও বয়সের ওপর। জ্বর বা অসুখের সময় পানির বেশি প্রয়োজন। বেশি গরম পড়লে, খেলাধুলা করলে বেশি…

শারীরিক সৌন্দর্য বারাতে ও ওজন কমাতে রইল ১৪ টি সহজ ঘরোয়া উপায়

মাঝে মাঝে ব্যয়াম ও কখনো কখনো ডায়েট করে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করাটা আসলেই দুঃসাধ্য।শরীরের বাড়তি মেদ নিয়ে আজকাল অনেকেই চিন্তিত। সুস্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, শারীরিক সৌন্দর্যের…

ওভেনের খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়!

কম সময়ে খাবার গরম করতে মাইক্রোওয়েভ ওভেনই ভরসা। আধুনিক এই যন্ত্রটি জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। নামমাত্র সময়ে ঠান্ডা খাবার গরম করার এর চেয়ে ভাল উপায় আর নেই।…