নারীদের জীবনের একটি বড় অংশ হলো পিরিয়ড বা ঋতুচক্র। প্রতি মাসের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পিরিয়ড বেশীরভাগ নারীর। অনেক সময়ে দেখা যায়, কোনো কারণে বা কারণ ছাড়াই পিরিয়ড বেশ কিছুদিন লেট হচ্ছে। এ সময়ে অনেকেই ভয় পেয়ে যান। কেউ বা আবার একে স্বাভাবিক বলে উড়িয়ে দেন। পিরিয়ড লেট হবার কারণগুলো আসলে কী? এ ব্যাপারে আমাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো জানান ডাক্তার লুৎফুন্নাহার নিবিড়।
গর্ভধারণ না হলে বিভিন্ন কারণে লেট হতে পারে পিরিয়ড। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার নিবিড় জানান, এর পেছনে একটা বড় ভূমিকা পালন করে হরমোন সংক্রান্ত পরিবর্তন। পিরিয়ডের পুরো প্রক্রিয়াটা নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকটি হরমোন, ফলে হরমোনের মাত্রায় পরিবর্তন এলে পিরিয়ড লেট হতে পারে। পিরিয়ড পেছনে কারণ হিসেবে থাকতে পারে জীবনযাত্রায় বড় কোনো পরিবর্তন, যেমন:
– পরিবেশগত পরিবর্তন
– ওজন হঠাৎ করে কমা বা বেড়ে যাওয়া
– ডায়েট
– ভারী ব্যায়াম বা শরীরচর্চা, যেমন দৌড়ানো বা নাচের চর্চা
– ভ্রমণ করে নতুন কোথাও যাওয়া বা নতুন কোনো জায়গায় বসবাস করতে আসা
– মানসিক কোনো বড় পরিবর্তন, কোনো ধরণের মনস্তাত্ত্বিক ধাক্কা
এ ব্যপারে ডাক্তার নিবিড় জানান, অনেক সময়ে দেখা যায় বার্থ কন্ট্রোল পিল অথবা অন্য কোনো ইমার্জেন্সি পিল গ্রহণের কারণেও পিরিয়ড লেট হতে পারে।
এর মানে কি পিরিয়ড লেট হবার পেছনে কোনো অসুস্থতা নেই? ডাক্তার নিবিড় জানান, থাকতে পারে। পিরিয়ড লেট হবার পেছনে যেসব রোগের অবদান থাকতে পারে সেগুলো হলো-
– ওভারিতে প্রভাব ফেলে এমন কোনো যৌনরোগ
– ওভারিতে সিস্ট, ইউটেরাসে টিউমার থাকলে পিরিয়ড লেট হতে পারে বা খুব বেশি রক্তক্ষরণ হতে পারে
– এছাড়াও শরীরের ওপরে বড় মাত্রায় চাপ ফেলে এমন অসুস্থতার কারণে পিরিয়ড লেট হতে পারে
– কোনো রোগের কারণে হরমোন লেভেল অস্বাভাবিক হয়ে পড়লে তার জন্য পিরিয়ড লেট হতে পারে।
কোনো অসুস্থতার কারণে যদি আপনার স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে থাকে এবং এ কারণে পিরিয়ড লেট হয়, তবে রোগ সারিয়ে তলার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া খাওয়া দাওয়া করতে হবে নিয়ম মতো। ধূমপান, ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল এর ব্যাপারে থাকতে হবে সাবধান।
পিরিয়ড লেট হলে আপনার কী চিন্তিত হবার দরকার আছে? পরিবেশগত বা জীবনযাত্রার কোনো পরিবর্তনের কারণে পিরিয়ড লেট হলে সাধারণত চিন্তার কিছু থাকে না। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখিয়ে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া ভালো। আপনার যদি তলপেটে ব্যাথা হয়ে থাকে, পরপর দুই মাস পিরিয়ড না হওয়া বা বার্থ কন্ট্রোল পিল খাবার পরেও পরপর দুই মাস পিরিয়ড না হয়, এসব ক্ষেত্রে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াই ভালো। মনে রাখবেন, লজ্জা নয়, সচেতনতা জরুরী।