অনেকে হয় তো বলতে পারেন যে ব্যাপারটা নিছক কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়! কিন্তু যখনই বলছি শাস্ত্র, তখন একটা ব্যাপার উপেক্ষা করা যায় না। কোনও শাস্ত্র আচমকা তৈরি হয় না। এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে হাজার হাজার বছরের প্রাচীন বিশ্বাস। এই বিশ্বাসের আবার মূল ভিত্তি হল সংশ্লিষ্ট শাস্ত্রে উল্লেখ থাকা বিধিনিষেধ এবং সেই সূত্রে লিপিবদ্ধ কার্যকারণের অব্যর্থ প্রমাণ! সুতরাং, বাস্তুশাস্ত্র জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক, সুখী গৃহকোণ সম্পর্কে যা বলে, তা এক কথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না!
এই প্রসঙ্গে একবার সংক্ষেপে এই শাস্ত্রের নাম কী ভাবে হল, সেটাও জেনে রাখা দরকার! সংস্কৃত বস্তু শব্দটি রয়েছে এই শাস্ত্রের মূলে। অর্থাৎ যে শাস্ত্র বস্তু নিয়ে আলোচনা করে থাকে, তাকেই বলা হয় বাস্তু। আমাদের এই পৃথিবীর সব কিছু তো বটেই, এমনকি চেতন এবং অচেতন পদার্থও এই বস্তুর সমাহারেই তৈরি হয়েছে। মূল পাঁচ বস্তু হল ক্ষিতি বা মাটি, অপ বা জল, তেজ বা আগুন, মরুৎ বা হাওয়া এবং ব্যোম বা শূন্য। আমাদের বাড়ি এবং তার সব কিছু যে এই সব বস্তুর সমণ্বয়ে তৈরি, সে কথা কি অস্বীকার করা যায়?
যায় না বলেই কোন ধরনের বাসন বাড়িতে রাখলে দেনা আর দারিদ্র্য বৃদ্ধি পায়, সেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন আচার্য ইন্দু প্রকাশ (Indu Prakash)। তিনি জানাচ্ছেন যে ভাঙা বা টোল খাওয়া কোনও বাসন কখনই বাড়িতে রাখা উচিৎ নয়। এই রকমের বাসনে খাবার খাওয়াও যে ঠিক নয়, সেই সম্পর্কেও আমাদের সতর্ক করছেন তিনি। কিন্তু কেন এই কথা বলছেন আচার্য?
বাস্তুবিদ এই পণ্ডিত জানিয়েছেন যে ভাঙা বা টোল খাওয়া বাসন ব্যবহার করলে তা পরিবারে এক ধরনের নেতিবাচক আবহাওয়ার সৃষ্টি করে। এই আবহাওয়া থেকে জন্ম নেয় নিরন্তর দারিদ্র্য। যা কখনই দূর হতে চায় না। ফলে, ভাঙা বা টোল খাওয়া বাসন বাড়ি থেকে দূরে ফেলে দেওয়াটাই ঠিক হবে বলে জানিয়েছেন আচার্য ইন্দু প্রকাশ। পাশাপাশি, তিনি এটাও জানাতে ভোলেননি যে ঠিক একই রকম ভাবে ভাঙা খাটে শোওয়াটাও উচিৎ নয়, এই অভ্যাসও পরিবারে দারিদ্র্যের জন্ম দেয়।
তবে বাস্তুশাস্ত্রে যেমন বিপদের উল্লেখ আছে, তেমনই রয়েছে বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ও! এই প্রসঙ্গে আচার্য বাড়ির উত্তর দিকের দেওয়ালে একটি আটটি কোণওয়ালা আয়না স্থাপনের সুপরামর্শ দিচ্ছেন। এই আয়নার আটটি কোণ পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, নৈঋত, অগ্নি এবং বায়ু এই আট দিকের প্রতীক। ফলে তা ইতিবাচক শক্তিকে ধরে রাখে, তাদের গৃহের প্রতি আকৃষ্ট করে। ফলে, সংসারে শান্তি বজায় থাকে, দারিদ্র্য দূর হয়ে গৃহে নিত্য সুখ বিরাজ করে!