শিরোনাম দেখেই বুঝে গিয়েছেন নিশ্চয়ই যে আমরা আজকে কি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি? হ্যাঁ, পিঁয়াজ কাটা নিয়ে। একলা থাকুন বা দোকলা, রান্নাটা আজকাল সবাইকেই জানতে হয়। আর রান্না মানেই পিঁয়াজ। এই বস্তু কাটতে গিয়ে জীবনে কয়েকবার নাজেহাল হননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। নারীরা তাও নাহয় নিজেদের সহনশীলতা দিয়ে সামলে নেন, কিন্তু পুরুষদের যে কি হাল হয় সেটা অনেকেই বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জানেন। তবে কান্না ছাড়া পিঁয়াজ কাটার টিপস জানার আগে আপনাকে জানতে হবে মূল কারণটা আসলে কি।
কেন চোখে পানি আসে পিঁয়াজ কাটার সময়ে?
কারণ পিঁয়াজের গোড়ায় আছে এক প্রকারের একজাইম। যখন পিঁয়াজের এই গোড়ায় আঘাত লাগে অর্থাৎ কাটা হয়, তখন এই এনজাইম নিঃসৃত হয়। সেই এনজাইম পুরো পিঁয়াজের সাথে বিক্রিয়া করে একরকম গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাস যখন আপনার চোখের পানির সংস্পর্শে আসে, তখন আপনার চোখ জ্বলতে শুরু করে।
মানুষের চোখে এমনিতেই আদ্রর্তা ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পানির উপস্থিতি থাকে। এই পানির সাথে গ্যাসের বিক্রিয়ার ফলে চোখ যখন জ্বলতে শুরু করে, তখন সেই জ্বলন উপশমের জন্য আরও পানি জমা হয়। আর ফলাফল? আপনার চোখ জ্বলছে ও আপনি কাঁদছেন। লক্ষ্য করে দেখবেন যে সর্দি হলে কিন্তু চোখের সাথে নাকও জ্বালা করে, কেননা নাকের অভ্যন্তরভাগও তখন ভেজা থাকে। বলা যায় যে এটা হচ্ছে মূলত পিঁয়াজের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা।
এই তো গেল কান্নাকাটির কারণ গুলো। এখন আসুন জেনে নেই যে কি করে কান্না ছাড়াই পিঁয়াজ কাটতে পারবেন আপনি?
১)প্রথমেই যেটা করা যায় যা হলো পিঁয়াজের গোড়ার অংশটি (অর্থাৎ যেখানে মূল থাকে) ভালো করে করে ফেলে দেয়া। ছুরির মাথা দিয়ে সাবধানে কয়েতে পুরো অংশটি ফেলে দিলেও হবে। সেই সাথে পিঁয়াজের উপরের আস্তরটিও ফেলে দিন। কেননা বেশির ভাগ এনজাইম থাকে এই গোড়ায় ও ওপরের আস্তরে।
২) পিঁয়াজ কুচি করতে চান? ছিলে টুকরো করে পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। বেশ খানিকটা সময় পর পানি বদলে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তারপর কাটুন, চোখ জ্বলবে না। ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে পারলে আরও ভালো হবে। পানিতে নিঃসৃত এনজাইম ধুয়ে যাবে, ফলে চোখ জ্বলবে না।
৩) পিঁয়াজ ছিলে নিয়ে আধ ঘণ্টার মতন ফ্রিজে রেখে দিন। তারপর ভালো করে ধুয়ে নিয়ে টুকরো করুন বা কুচি করুন। ঠাণ্ডায় পিঁয়াজের এনজাইম নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, ফলে চোখ জ্বলার সম্ভাবনা কমে যায়।
৪) চপিং বোর্ডে ভিনেগার মাখিয়ে নিয়ে তারপর পিঁয়াজ কাটুন। ভিনেগারের এসিড এনজাইমকে নিষ্ক্রিয় করে দেবে। এনজাইম নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে গ্যাসও নির্গত হবে না, চোখও জ্বলবে না।
৫) পিঁয়াজ কাটার সময়ে একটি মোমবাতি বা চুলা জ্বালিয়ে রাখতে পারেন কাছে। এতে নির্গত গ্যাস আপনার চোখের পানির সাথে বিক্রিয়া করার আগেই আগুনের শিখা তাকে আকর্ষণ করবে।
৬) চোখে যারা লেন্স পরেন, তাঁদের চোখ জ্বলবে না পিঁয়াজ কাটার সময়ে।
৭) ধারালো ছুরি বা বটি ব্যবহার করুন পিঁয়াজ কাটার সময়ে। কেননা এতে কোষগুলো কম ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ফলে এনজাইম কম নিঃসৃত হবে আর গ্যাসও কম নির্গত হবে। ফলে চোখ জ্বলবে কম।
8) পিঁয়াজ কাটার সময় জোরে ফ্যান ছেড়ে নিন। তাতে গ্যাস আপনার চোখ পর্যন্ত নির্বিঘ্নে পৌছাতে পারবে না।
৯) পিঁয়াজ লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন মিনিট পনেরো, তারপর কাটুন। লবণ পানি নিষ্ক্রিয় করে ফেলবে চোখ জ্বলার জন্য দায়ী এনজাইমকে।
১০) মুখ দিয়ে নিঃশ্বাস নিন নাকের বদলে। এতেও চোখে পানি আসা ও জ্বলুনি অনেকটাই কমবে।