বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি হলেও এখনো একটি দুরারোগ্য ব্যাধির নাম হচ্ছে ক্যান্সার যা এখনো অনেক মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ। প্রতি বছর দুই লাখ নতুন ক্যান্সারের রোগী শনাক্ত হয় যার মধ্যে বিশ থেকে ত্রিশ ভাগই ঘাড় ও মাথার ক্যান্সার এবং এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে মুখের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার। এছাড়াও মানব দেহের কোন কোন ক্যান্সার পরীক্ষা-নিরীক্ষাকেও ধোঁকা দিতে পারে। যেমন-
প্রোস্টেট ক্যান্সার
পুরুষদের মাঝে এ সমস্যা বেড়েই চলেছে। আমেরিকার প্রতি ৮ জন পুরুষের একজন প্রোস্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত। এটা লক্ষণ প্রকাশ করে না বললেই চলে। তাই বুঝে ওঠা খুবই কঠিন। বোঝার আগেই তাব হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে চিকিৎসা কঠিক হয়ে যায়। তবে মূত্রনালীতে সংক্রমণ, মূত্রের চাপ কমে যাওয়া এবং রক্ত আসার মাধ্যমে লক্ষণ কদাচিৎ প্রকাশ পায়।
ব্লাডার ক্যান্সার
মূত্রথলীর ক্যান্সারও লক্ষণ প্রকাশ করে না। তা ছাড়া এই ক্যান্সার নিয়ে খুব বেশি আলোচনাও হয় না। তাই সবার অগোচরেই থেকে যায়। সাধারণত বয়স্কদের মাঝে বেশি দেখা যায়। তামাক, কলকারখানার ধোঁয়া, বর্জ্য, রং এবং সংশ্লিষ্ট রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এই ক্যান্সার হয়ে থাকে। সাধারণ লক্ষণটি হলো মূত্রের সঙ্গে রক্ত আসা।
প্যানক্রিয়েটিক ক্যান্সার
অগ্ন্যাশয় ছোট একটি প্রত্যঙ্গ। যা পেটের মাঝামাঝিতে থাকে। খাবার হজম থেকে বিশেষ হরমোনের ক্ষরণ ঘটিয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখে। প্যানক্রিয়েটিক এমন এক ক্যান্সার যার কোনো লক্ষণ রোগী বুঝতে পারে না। প্রাথমিক অবস্থাতে তো কোনো অবস্থাতেই বোঝা যায় না। পেটের ওপরের দিকে ব্যথা, অবসাদ ও বমিভাবের মাধ্যমে লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। যারা এ রোগে আক্রান্ত তাদের মল অস্বাভাবিক হতে পারে।
কোলন ক্যান্সার
মলের সঙ্গে রক্ত আসার বিষয়টি অনেকেই জানেন। এটা কোলন ক্যান্সারের অতি সাধারণ লক্ষণ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রক্ত উজ্জ্বল রং নিয়ে আসে। তাই বোঝা যায় না এটি রক্ত কিনা। তার লক্ষণটাও ধরা কঠিন হয়। এ ক্যান্সার হলে মল গাঢ়, কালো ও ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
কিডনি ক্যান্সার
এই ক্যান্সার কথা হয়তো আগে শোনেননি। হাজার হাজার নারী-পুরুষ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। লক্ষণ ধরা যায় না। যখন ধরা পড়ে তখন তা ইতিমধ্যে মারাত্মক অবস্থায় চলে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিডনি ক্যান্সারে জ্বর, অবসাদ, আচমকা ওজন কমা ইত্যাদি লক্ষণ হতে পারে।
পাকস্থলীর ক্যান্সার
ব্যথা আর অবসাদ ভাব প্রকাশ করে পাকস্থলীর ক্যান্সার। অনেকেই আবার গ্যাসট্রিকের ব্যথা অনুভব করেন। আসলে চারটি ভিন্ন ধরনের পাকস্থলীর ক্যান্সার দেখা যায়। বেশিরভাগই পাকস্থলীর অভ্যন্তরীন দেয়ালে দানা বাঁধে। প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ রয়েছে বলে বোঝাই যায় না। তবে অনেকের ক্ষুধা মরে যায়। খেতে মন চায় না। বুক জ্বলার সমস্যাও দেখা দেয়।
ঘাড় ও মাথার ক্যান্সার
বাংলাদেশে প্রতি বছর দুই লাখ নতুন ক্যান্সারের রোগী শনাক্ত হয় যার মধ্যে বিশ থেকে ত্রিশ ভাগই ঘাড় ও মাথার ক্যান্সার এবং এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে মুখের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার। আশঙ্কাজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের মুখের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে পান, সুপারি, বিভিন্ন তামাক মিশ্রিত জর্দা, খৈনি ও বিভিন্ন রকমের পান মসলা জাতীয় খাবার।