পৃথিবীজুড়ে রয়েছে অসংখ্য দ্বীপ। তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপ কোনটি- তা বলা মুশকিল। প্রকৃতির আপন খেয়ালে সেজেছে প্রতিটি দ্বীপ। তাই সব দ্বীপই নিজস্ব বৈচিত্রি অনন্য।
সম্প্রতি পাঠকদের পছন্দের ভিত্তিতে পৃথিবীর ১০টি অদ্ভূত সুন্দর দ্বীপের তালিকা করেছে ভ্রমণ বিষয়ক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন কন্ডে নাস্ট ট্রাভেলার। এক প্রতিবেদনে ওই ১০ দ্বীপের নাম প্রকাশ করেছে ডেইলি মেইল। সেগুলো হলো-
১. মালদ্বীপ
তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেছে মালদ্বীপ। এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে ছোট দেশ। ভারত মহাসাগরের বুকে ছোট ছোট ১২০০ প্রবালদ্বীপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেশটি। প্রতিবছর পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। স্বচ্ছ জলরাশি, সাদা বালির সৈকত, আকাশ ও সমুদ্রের অসম্ভব সুন্দর নীল রং মাতিয়ে রাখে পর্যটকদের। ছুটি কাটানো ও রোমান্টিক মুহূর্ত পার করার আদর্শ জায়গা।
২. গ্রিক আইল্যান্ড
এজিয়ান সাগরে অবস্থিত গ্রিক দ্বীপগুলো ভ্রমণ-পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় হয়েছে। চমৎকার আবহাওয়া, গ্রিক আতিথেয়তা, উপকূলবর্তী ছবির মতো সুন্দর গ্রাম এবং উন্নত অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এসব দ্বীপ বিদেশি পর্যটকদের দারুণভাবে টানে। বিভিন্ন স্থানে প্রাচীন ইউরোপীয় সভ্যতার নিদর্শনসমূহ সাজিয়ে রাখা হয়েছে চমৎকারভাবে। যা সমৃদ্ধ গ্রিক সভ্যতা সম্পর্কে পর্যটকদের কৌতুহল মেটায়।
৩. সিসিলি
ইটালির অন্তর্ভুক্ত ভূ-মধ্যসাগরের সবচেয়ে বড় দ্বীপ সিসিলি। নীলাভ জলরাশি, নরম বালুর সৈকত ও দ্বীপের মনোরম পরিবেশ পৃথিবী বিখ্যাত। দ্বীপের অন্যতম আকর্ষণ হলো আগ্নেয়গিরি মাউন্ট এটনা। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৩ হাজার ৩৫০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই আগ্নেয়গিরিটি ইউরোপে সর্বোচ্চ। মাউন্ট এটনা পৃথিবীর সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর একটি। পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় এটি রয়েছে তৃতীয় স্থানে।
৪.সেন্ট বার্থ আইল্যান্ড
পুরো নাম সেন্ট বার্থেলেমি আইল্যান্ড। সংক্ষেপে সেন্ট বার্থ। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সবচেয়ে ব্যযবহুল ও অভিজাত দ্বীপটি এক সময় ফ্রান্সের দখলে ছিলো। দ্বীপটির নাম ‘বার্থেলেমি’ ও ফরাসি। বিখ্যাত ও বিত্তবানদের শ্যাম্পেন পানের আসর হিসেবেই এটির খ্যাতি। দ্বীপের নির্জন সাদা বালির সৈকত ও ফিনফিনে বাতাস পর্যকটকদের মনে আনে প্রশান্তি।
৫. বেল্যারিক আইল্যান্ডস
ইবিজা, মেজরকা, মেনরকা এবং ফরমেন্তেরা। পশ্চিম ভূ-মধ্যসাগরের এই ৪টি দ্বীপ নিয়ে স্পেনের বেল্যারিক দ্বীপমালা। প্রতিটি দ্বীপের রয়েছে স্বতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য। উদ্দাম নাইট ক্লাবের জন্য ইবিজা বিখ্যাত। শান্ত পরিবেশ ও গোপনীয়তার জন্যও এই দ্বীপের কদর রয়েছে। রূপালি পর্দার তারকাজুটিদের গোপন অভিসারের আদর্শ জায়গা এটি। নয়নাভিরাম সৈকত, সবুজের সমাহার ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুণে অন্য ৩টি দ্বীপও অনন্য।
৬. সিশ্যালস
আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ১৫৫টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত দ্বীপরাষ্ট্র সিশ্যালস। ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপমালায় কিছু কিছু জায়গায় এখনও মানুষের পা পরেনি। সিশ্যালস ভ্রমণ মানেই নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার মতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ। এখানে সৈকতের পাশে রয়েছে সুউচ্চ প্রাচীন নারকেল ও পাম গাছের সারি। অবাক করার মতো তথ্য হলো, মাত্র ১৭৭ বর্গমাইলের এই ভূ-খণ্ডেও ইউনেস্কো স্বীকৃত ২টি ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট রয়েছে।
৭. ক্যাপ্রি
প্রাচুর্যময় পরিবেশ আর হালকা জলবায়ুর অসাধারণ একটি দ্বীপ ক্যাপ্রি। এটি ইতালির নাপোলি শহরের দক্ষিণে অবস্থিত। পৃথিবীর নামকরা সব লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী এই দ্বীপের নিসর্গে মজেছেন। তাদের বর্ণনায় দ্বীপের সৌন্দর্য এমনভাবে ফুটে উঠেছে, যারা কখনো দেখেননি, তারাও কল্পনায় দ্বীপের সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারবেন।
৮. বার্বাডোজ
ঘন ক্রান্তীয় সবুজ গাছপালা, উষ্ণ নীল জল এবং সোনলী রোদ্দুর- সবকিছু মিলে বার্বাডোসের সাদা বালুকাময় সৈকতে আপনি যতদিন খুশি কাটাতে পারেন; বিরক্তি আসবে না। ঘুরতে ঘুরতে খেয়ে দেখতে পারেন এখানকার সুস্বাদু উড়ন্ত মাছ। হারিয়ে যেতে পারেন ভিড়ের মাঝে। আসলে হারাবেন না। সারতে পারেন কেনাকাটা। নানা রকম পানীয়তে গলা ভেজানোর জন্য রয়েছে বার। আর আপনার মন ভেজানোর জন্য রয়েছে পুরো দ্বীপের নৈসর্গিক রূপ।
৯. মরিশাস
পরিবার নিয়ে ভ্রমণের জন্য মরিশাসের মতো দ্বীপ আর হয় না। হানিমুন স্পট হিসেবেও যুগলদের কাছে এটি চরম আকর্ষণীয়। পর্যটক আকষর্ণের যাবতীয় আয়োজন সেরে রেখেছে আফ্রিকার এই দ্বীপ দেশ। শান্ত সমুদ্র, নিরাপদ সৈকত, আকর্ষণীয় মোটেল, অবারিত সবুজ- কী নেই মরিশাসে।
শান্ত আবহাওয়ার জন্য বছরজুড়েই থাকে পর্যটকদের আনাগোনা।
১০. মাল্টা
আরামদায়ক জলবায়ু, অসংখ্য বিনোদন স্পট, আর দ্বীপজুড়ে থাকা অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মনুমেন্টের জন্য মাল্টা জনপ্রিয় পর্যটক গন্তব্য। মনুমেন্টগুলো ঐতিহাসিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। দ্বীপটিতে কেবল ইউনেস্কোর স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ঐতিহাসিক স্থাপনাই আছে কমপক্ষে ৯টি। দ্বীপের রাজধানী ভেলেট্টা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচাইতে ছোট। এছাড়া হরেক রকমের বাগান ও চার্চের জন্যও এটি বিখ্যাত।
সকল দ্বীপপুঞ্জ গঠন এক নয়। কোনো কোনো দ্বীপের সৌন্দর্য সেই দ্বীপটি ঘিরে থাকা সমুদ্রের উপর নির্ভর করে। কোনো দ্বীপ বিমোহিত করে তার স্ফটিক স্বচ্ছ জলরাশির দ্বারা, কোনোটি তার সমৃদ্ধ প্রবাল সাম্রাজ্য দ্বারা, কোনটির থাকে প্রাচুর্যময় অরণ্য, কোনটির মখমলের মত কোমল সুউচ্চ চূড়া। পৃথিবীর কিছু কল্পলোকের মত সুন্দর দ্বীপের কথা জেনে নিন।
মালদ্বীপ
পৃথিবীর সবচেয়ে মোহসঞ্চারি দ্বীপ হচ্ছে মালদ্বীপ। এই দ্বীপের চারপাশের সমুদ্রটিই একে সত্যিকার ভাবে স্ফুরিত হতে সাহায্য করেছে। ভারত মহাসাগরে উঁকি দেয়া দীপ্তিময় সবুজ জলরাশিকে ঘিরে মালদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জটি গঠিত যার আছে চকচকে সাদা উপকূল এবং যাতে আছে ২৬টি প্রাকৃতিক প্রবাল প্রাচীর। এই দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দাদের একটি সুনাম হচ্ছে এরা এই গ্রহের সর্বনিম্ন মিথ্যাচারী জাতি। সাগর থেকে মাত্র তিন মিটার উঁচুতে এই দ্বীপটি অবস্থিত। প্রতিবছরই এটি সংকোচিত হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ বিলাসী মানুষ বিশেষ করে ডুব সাঁতারুরা এই দ্বীপের প্রবাল প্রাচীর ও অতলান্ত মোহময় জলের টানে এখানে যায়। সার্ফিং এর জন্য ও এটি আদর্শ স্থান। এই দ্বীপপুঞ্জে আছে বিলাসবহুল রিসোর্ট যা থেকে সমুদ্র কে দেখা যায়। কিন্তু পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই দ্বীপপুঞ্জটি হুমকির মুখে আছে।
পালাওয়ান
ফিলিপাইন এর স্বর্গ হল পালাওয়ান দ্বীপ। এই দ্বীপটি বর্ণীও থেকে দক্ষিণ পশ্চিমে প্রসারিত। এই দ্বীপের মণি মুক্তার মত স্বচ্ছ সাগর থেকে উঠে এসেছে কঠিন চুনাপাথরের শৃঙ্গ। পানির উপরিভাগ থেকে মাছের চলা ফেরার দৃশ্য স্পষ্ট ভাবে দেখা যায়। চিক চিক করা সাদা বালুর উপর পাম গাছের ছায়া জঙ্গল পরিবেষ্টিত এই দ্বীপের বৈশিষ্ট্য। প্রবাল প্রাচীর, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মাছের বৈচিত্র্য এবং ডাইভিং এর জন্য সবচেয়ে ভালো স্থান হল পালাওয়ান দ্বীপ। এই দ্বীপের অন্য আকর্ষণীয় বিষয় গুলো হচ্ছে অনন্য বন্যপ্রাণী, পান্না হ্রদ এবং অদ্ভুত মাছ ধরার গ্রাম। মনোমুগ্ধকর দ্বীপ মালার সারিতে আছে উন্নতমানের রিসোর্ট। পালাওয়ানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে Puerto Princesa Subterranean River National Park, যা বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় আছে। এই পার্কে আছে চিত্তাকর্ষক চুনা পাথরের গুহা এবং ভূগর্ভস্থ নদী।
সান্তোরিনি
অ্যাজিয়ান সাগরে অবস্থিত সাইক্লেড দ্বীপ সান্তোরিনি। গ্রীসের এই দ্বীপটির নীলকান্ত জলরাশি, মিছরি রঙের বাড়ি, চকচকে সাদা বিল্ডিঙের নীল রঙের অর্ধ গোলাকার ছাদ ও ঝড়ো আকাশ মুগ্ধতা সৃষ্টি করে। কালো বালির সৈকত বা গ্রামের পথ আপনাকে শান্তি দেবে। সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত Oia এই দ্বীপেই অবস্থিত।
কুক আইল্যান্ড
আপনি যদি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ভ্রমণে যেতে চান তাহলে কুক আইল্যান্ড আপনার জন্য। ১৫টি দ্বীপ নিয়ে এই দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। পান্না উপহ্রদ, সৈকতে পাম গাছের সারি, আগ্নেয়গিরির শৃঙ্গ আছে এই দ্বীপে। পাহারের পাশের গ্রাম গুলোতে গোলাপের অসংখ্য গাছ দেখা যায়। রবিনসন ক্রুসোর মত ফ্যান্টাসি চাইলে ঘুরে আসুন এই কুক আইল্যান্ডে।
এছাড়াও ইন্দোনেশিয়ার বালি ও গিলি দ্বীপ, ক্রোয়েশিয়ার ডালমেশিয়ান আইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ফিজি ও ক্যাঙ্গারু দ্বীপ, ফ্রেন্স পলিনেশিয়ার তাহা, নিউজিল্যান্ডের স্টুয়ারট আইল্যান্ড, জাপানের মিয়াকো আইল্যান্ড, ওয়াশিংটনের লোপেজ আইল্যান্ড, নিকারাগুয়ার লিটেল কর্ণ দ্বীপ, থাইল্যান্ডের কো ইয়ায়ো আইল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের ইজলি অফ স্কাই, ইটালির লেম্পেডুসা ইত্যাদি দ্বীপগুলো সুন্দর দ্বীপগুলো নিজস্ব স্বকীয়তায় অনন্য।