ঘুমের জন্য অপরিহার্য এই বস্তুটি অচিরেই ক্ষতি করতে পারে আপনার স্বাস্থ্যের। আপনি নরম বালিশেই ঘুমোন বা শক্তটিতে, সংকট আসতে পারে যে কোনও ক্ষেত্রেই। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের সঙ্গে যুক্ত ব্রিহ্যাম অ্যান্ড ওমেনস হসপিটালের তন্দ্রা-বিশারদ ড. লরেন্স এপস্টেইন অন্তত সেই কথাই বলছেন। আবার স্পল্ডিং রিহ্যাবিলিটেশন হসপিটালের চিকিৎসক ম্যাথিউ ও’রুরকির বক্তব্য, বালিশে মাথা রেখে ঘুমোতে অভ্যস্ত যারা, তাদের ক্ষেত্রে ঘাড়ে, মাথায় এবং কাঁধে ব্যথা নতুন কোনও ঘটনা নয়। রাতে দীর্ঘ সময় ধরে একই দিকে মাথা বাঁকিয়ে ঘুমোলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যথা হয়। আর নজর না দিয়ে ফেলে রাখলে সে ব্যথা বাড়তে বাড়তে অসহনীয় হয়ে ওঠে।
আরও একটু স্পষ্ট করে বলা যাক।
ঘুম থেকে উঠে যদি ঘাড়ে প্রবল ব্যথা অনুভব করেন, তাহলে এখনই সতর্ক হন। এর কারণ আপনার বালিশও হতে পারে। বিশ্বে একটা বড় সংখ্যক মানুষ ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’য় আক্রান্ত। এই রোগে ঘুমের মধ্যে থাকাকালীনই পর্যায়ক্রমে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম তৈরি হয়, যা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। সুরাহা হিসাবে কাজে লাগে ‘সিপিএপি’ চিকিৎসা। কী এই ‘সিপিএপি’? এই পদ্ধতিতে ঘুমের মধ্যে কারও শ্বাসক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও তা রুখে দেয় অন্য একটি সহায়ক যন্ত্র। মুখোশ। এটি মুখে পরে নিয়ে ঘুমোতে যেতে হয়।
মুখোশের মাধ্যমেই শ্বাস-প্রশ্বাস চলতে থাকে। ভাবছেন, ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ আর ‘সিপিএপি’ চিকিৎসার মধ্যে যোগসূত্রটা কোথায়? উত্তর হল– ধরুন, ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’য় আক্রান্ত কেউ মুখে মুখোশ পরে এবং বালিশে মাথা দিয়ে পাশ ফিরে শুলেন। কোনওভাবে যদি মাথা থেকে বালিশ সরে যায়, মুখোশটিও সরে যাবে। আর সেক্ষেত্রে বিপদ অবধারিত। তাই, ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’য় আক্রান্তদের বালিশ নিয়ে ঘুমোতে না যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। এঁদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা বালিশ ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বয়ং চিকিৎসকরাই।
বালিশ ঘটাতে পারে ঘুমের ব্যাঘাতও। অসমতল কিংবা খুব শক্ত বা খুব নরম বালিশের হেফাজতে মাথা রাখলে ফল ভোগার জন্য তৈরি থাকতেই হবে। অবধারিতভাবে ঘুম তো আসবেই না। সঙ্গে যোগ হবে আরও কিছু সমস্যা। যেমন মেজাজ, চিন্তা শক্তি এবং খাওয়ার ইচ্ছা যাবে কমে। যদি দিনের পর দিন ঘুম না আসে, তাহলে একে একে জন্ম নেবে স্থূলতা, মধুমেহ, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের সমস্যাও।
তবে সমস্যা যেমন আছে, সমাধানসূত্রও রয়েছে। আর তার হদিশ দিচ্ছেন স্বয়ং হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের চিকিৎসকরাই। আর এক্ষেত্রে তাঁদের দাওয়াই হল বিশেষ এক ধরনের বালিশ ব্যবহার। নাম ‘ওয়েজ পিলো’। অনলাইন শপিং সাইটগুলিতে নাম লিখে ‘সার্চ’ দিন। পেয়ে যাবেন। ৩০ ডিগ্রি কোণে হেলানো এই বালিশ ঘাড়ের ব্যথায় আক্রান্ত ‘পেশেন্ট’দের ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে সফলই হয়েছেন ড. জেমস মোজিকা। তাছাড়াও অবশ্য উপায় রয়েছে। আর তা হল নিজের জন্য উপযুক্ত বালিশখানা নিজেই চয়ন করে নেওয়া।
কীভাবে বাছবেন সঠিক বালিশ?
১. বালিশ কী দিয়ে তৈরি, দেখে নিন। ডাউন পালকের তৈরি বালিশে ধূলো কম জমে। কিন্তু সেগুলো খুব তাড়াতা়ড়ি গরম হয়ে যায়। অন্যদিকে সাধারণ তুলো, উল এবং সিন্থেটিক তুলোর বালিশ তুলনামূলকভাবে সস্তা হলেও তাতে ধুলো তাড়াতাডি় পড়ে। সাফাইদের দিকে নজর রাখুন।
২. কীভাবে ঘুমোন, খেয়াল করে বালিশ কিনবেন। পাশ ফিরে শোওয়ার ধাত থাকলে একটু শক্ত বালিশ বেছে নিন। যারা চিত হয়ে ঘুমোন বা পেটের উপর ভর করে উপুড় হয়ে ঘুমোন, তাঁরা একটু নরমসরম বালিশ নির্বাচন করুন। হ্যাঁ, আরাম মুখ্য অবশ্যই। তবে শিরদাঁড়া সোজা করে ঘুমোনোটা শরীরের পক্ষে ভাল।
৩. যাঁরা ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’য় ভোগেন, চিকিৎসকদের পরামর্শমতো সিপিএপি মাস্কযুক্ত বালিশ অবশ্যই ব্যবহার করবেন। আরও একটি কথা। ঘাড়ের ব্যথা দুঃসহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। সুতরাং তা তো করবেনই। মনে করে সেখানেই তুলে ফেলুন বালিশ প্রসঙ্গ। ব্যথার গভীরতা, উপসর্গ বুঝে নিয়ে আপনাকে বালিশ নিয়ে চূড়ান্ত ‘সাজেশন’ তিনিই দেবেন।