শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে রসুনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও এটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণেই চিকিৎসকেরা প্রতিদিন সকালে খালি পেটে রসুন খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে অ্যাজমা রোগীরা ভুলেও রসুন খাবেন না ! শুধু তাই নয়, যে কোনও অপারেশনের আগে রসুনকে এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। খেয়াল রাখবেন দিনে ২-৩ টি কোয়ার বেশি রসুন খাওয়া একেবারেই চলবে না!
নিয়মিত এক কোয়া করে রসুন খাওয়া শুরু করলে শরীরের যে উপকারগুলি হয়ে থাকে, সেগুলি হল…
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে: রসুনে উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস, যা দেহের আনাচে-কানাচে জমতে থাকা ক্ষতিকর টক্সিক উপাদানদের বের করে দেয়। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটতে সময় লাগে না। আর একবার ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে উঠলে একদিকে যেমন সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, তেমনি ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
২. রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে রসুনের মধ্যে থাকা বায়োঅ্যাকটিভ সালফার, রক্তচাপ কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে শরীরের অন্দরে সালফারের ঘাটতি দেখা দিলে তবেই রক্তচাপ বাড়তে শুরু করে। এই কারণেই তো দেহের অন্দরে সালফারের ঘাটতি মেটাতে নিয়মিত এক কোয়া করে রসুন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
৩. রক্তকে পরিশুদ্ধ করে: প্রতিদিন এক গ্লাস গরম পানির সঙ্গে দুটো রসুনের কোয়া খেলে রক্তে থাকা নানা বিষাক্ত উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে ধীরে ধীরে ত্বক এবং শরীর উভয়ই চাঙ্গা হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, যারা ওজন কমানোর কথা ভাবছেন, তারা দু কোয়া রসুন খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক গ্লাস গরম পানি লেবু চিপে সেই পানি পান করুন। এমনটা করলে দেখবেন নিমেষে ওজন কমে যাবে।
৪. হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: শুনে একটু অবাক লাগছে, তাই তো? কিন্তু একথার মধ্যে কোনও ভুল নেই যে নিয়মিত রসুন খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি প্রপাটিজের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে একদিকে যেমন নানাবিধ যন্ত্রণা কমে, তেমনি হাড়ের ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৫. ভাইরাল ফিবারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে: ওয়েদার চেঞ্জের সময় যারা সর্দি-কাশিতে খুব ভুগে থাকেন। তারা আজ থেকেই দু কোয়া রসুন অথবা গার্লিক টি খাওয়া শুরু করুন। তাহলেই দেখবেন আর কোনও দিন এমন ধরনের শারীরিক সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে না। কারণ রসুন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে খুব শক্তিশালী বানিয়ে দেয়। ফলে ভাইরাসদের আক্রমণে শরীরের কাহিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে।
৬. ক্যান্সারের মতো রোগ দূরে থাকে: একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে প্রতিদিন রসুন খেলে পাকস্থলী এবং কলোরেকটাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। তাই যাদের পরিবারে এই ধরনের ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে তারা রসুন খাওয়া কোনও দিন বন্ধ করবেন না। দেখবেন উপকার পাবেন।
৭. হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে: রসুনে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রপাটিজ রয়েছে। এই উপাদানটি একদিকে যেমন শরীরে উপস্থিত খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়, তেমনি উচ্চ রক্তচাপকেও নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর একথা তো সবারই জানা আছে যে এই দুটি জিনিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে তো হার্টের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটার আশঙ্কা একেবারেই থাকে না। প্রসঙ্গত, রক্তে শর্করার মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখার মধ্যে দিয়ে ডায়াবেটিসের মতো রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেও রসুনের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।
৮. যে কোনও ক্ষত সারায়: কেটে গেলে এবার থেকে ক্ষতস্থানে এক টুকরো রসুন রেখে ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। তাহলেই দেখবেন জ্বালা-যন্ত্রণা কমে যাবে। সেই সঙ্গে ক্ষতও সারতে শুরু করবে। আসলে রসুনে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান প্রদাহ কমাতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। তাই তো যন্ত্রণা কমাতে এটি এতটা কাজে লাগে।
৯. ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে: গত ৭০০০ বছর ধরে প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে রসুনের ব্যবহার হয়ে আসেছে। আর কেন হবে নাই বা বলুন, এতে উপস্থিত একাধিক কার্যকরি উপাদান ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস সহ একাধিক জীবাণুর সংক্রমণ আটকাতে যে কোনও আধুনিক মেডিসিনের থেকে তাড়াতাড়ি কাজে আসে। তাই তো প্রতিদিন ১-২ কোয়া রসুন খেলে এমন ধরনের সব রোগের খপ্পরে পরার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না।
১০. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: শরীরে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান বা টক্সিনের কারণে ত্বকের যাতে কোনও ধরনের ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখে রসুন। সেই সঙ্গে কোলাজিনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখার মধ্য়ে দিয়ে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়। অন্যদিকে প্রায় প্রতিদিন যদি থেঁতো করা রসুন চুলে লাগানো যায়, তাহল দারুন উপকার মেলে। একবার ভাবুন আকারে ওইটুকু, কিন্তু কত কাজেই না আসে।