ওজন কমানোর প্রচেষ্টায় অনেকেই শরীরচর্চা করার পাশাপাশি এমনকি তাদের প্রধান বেলার খাবার খাওয়াও বাদ দিয়ে দেন! আর এটা এমন একটি বড় ভুল যা কাউকেই ওজন কমাতে সহায়তা করবে না। খাবার খাওয়া বাদ দিলে বরং ওজন আরো বাড়বে!
সুতরাং শরীরচর্চার পাশাপাশি সঠিক খাবার খাওয়াটাও ওজন কমানোর জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ।তবে চর্বিবহুল, ক্যালোরি সমৃদ্ধ এবং অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটস আছে এমন খাবার বাদ দিতে হবে।
আসুন জেনে নেওয়া এমন ২০টি খাবারকে যেগুলো ওজন কমাতে সহায়ক।
১. লেবু পানি
ক্যালোরি কম থাকায় এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান বেশি হওয়ায় লেবু ওজন কমাতে সহায়ক। এজন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করা।
২. ওটমিল পানি
খাদ্য আঁশ এবং ভিটামিন ও খনিজপুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ায় ওটমিল ওজন কমাতে সহায়ক। ৩-৪ টেবিল চামচ ওটমিল এক গ্লাস পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। এতে আপনি দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধামুক্ত থাকতে পারবেন।
৩. অ্যালোভেরার সঙ্গে লেবু
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ হওয়ায় অ্যালোভেরা বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে এবং দেহ থেকে বিষ বের করে দেয়। একটি সাধারণ আকারের তাজা অ্যালোভেরা পাতার ওপরের আবরণটি চেঁছে ফেলুন এবং ভেতরের জেলটুকু বের করে নিন।
এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন।
৪. সবজি জুস
গাজর, শসা এবং সেলারি শাকের জুস শরীর থেকে অতিরিক্ত চর্বি ঝেড়ে ফেলে ওজন কমায়। সঙ্গে ধনিয়া গুড়ো মিশিয়ে নিতে পারেন।
৫. গমের শিষের জুস
গমের শিষে আছে প্রচুর খাদ্য আঁশ। যাতে নেই কোনো চর্বি এবং ক্যালোরি। কয়েকটি গমের শিষ থেকে রস বের করে এর সঙ্গে আধা গ্লাস পানি ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।
৬. আপেল সিডার ভিনেগার এবং বেকিং সোডা
এই দুটি উপাদান ওজন কমাতে দারুণ কার্যকর। এগুলো ক্ষারীয় এবং এসিডযুক্ত। ভিটামিন এ ও বি, মৌলিক ফ্যাটি এসিড, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজপুষ্টিসমৃদ্ধ। দুই চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার, এক চা চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে এক কাপ পানি মিশিয়ে পান করুন।
৭. দারুচিনি পানি
এই মশলাটি এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রদাহরোধী উপাদানের জন্য পরিচিত। আধা চা চামচ দারুচিনি পাউডার এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন।
৮. সালাদ (নাশতার বিকল্প হিসেবে)
সালাদ খাদ্য আঁশ এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। ক্যালোরি এবং চর্বিও কম। সকালে নাশতা হিসেব সালাদ খাওয়া চর্বি গলানো এবং ওজন কমানোর একটি ভালো উপায়।
৯. বন গম
খাদ্য আঁশ, প্রোটিন এবং নানা খনিজপুষ্টি ও অ্যামাইনো এসিডে সমৃদ্ধ বন গম ওজন কমানোর সেরা একটি খাদ্য। এক বাটি বন গম নিয়ে গরম পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে তা ভালোভাবে গুলিয়ে জুস তৈরি করে খারি পেটে খেয়ে ফেলুন।
১০. ভুট্টার জাউ
এতে আছে জটিল কার্বোহাউড্রেটস যা দীর্ঘক্ষণ আপনাকে ক্ষুধামুক্ত রাখবে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখবে। এটি গ্লুটেনমুক্ত এবং ভিটামিন ও খনিজপুষ্টিসমৃদ্ধ। সকালে এক বাটি ভু্ট্টার জাউ খেলে সারাদিনে আর জলখাবার হিসেবে কোনো জাঙ্কফুড খেতে হবে না।
১১. কাজুবাদাম
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড এবং জরুরি ভিটামিন ও খনিজপুষ্টিতে সমৃদ্ধ সেরা বাদাম এটি। জলখাবার হিসেবে এক মুঠো কাজুবাদাম অতুলনীয় যদি আপনি ওজন কমানোর প্রচেষ্টায় রত থাকেন।
১২. গমের অঙ্কুর
এটি খাদ্য আঁশসমৃদ্ধ। এতে প্রায় সবগুলো জরুরি ভিটামিন ও খনিজপুষ্টি আছে। ১-২ চা চামচ গম অঙ্কুর নিয়ে আপনার ব্রেকফাস্ট সিরিয়েল-এ যুক্ত করুন।
১৩. ডিম
ডিমে ক্যালোরি এবং ফ্যাট কম। এছাড়া ভালো প্রোটিনে সমৃদ্ধ এবং দেহের বিপাকীয় প্রক্রিয়া বাড়ায়। অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ায়। প্রতিদিন সকালে ১-২টি সেদ্ধ ডিম খেলে ওজন কমবে চোখে পড়ার মতো।
১৪. তরমুজ
এতে আছে প্রচুর পানি এবং আঁশ। ক্যালোরি এবং চর্বিও কম। সকালে তরমুজ খেলে দীর্ঘসময় ক্ষুধামুক্ত থাকা যায়।
১৫. ব্লুবেরি
এতে ক্যালোরি অনেক কম। খালি পেটে ব্লুবেরি খেলে ওজন কমে। আঁশ এবং অন্যান্য জরুরি পুষ্টিউপাদানে সমৃদ্ধ এই খাবার বিপাকীয় প্রক্রিয়া শক্তিশালী করে এবং এঁটে থাকা চর্বি পোড়ায়।
১৬. পূর্ণশস্য পাউরুটি
পাউরুটি সাধারণত স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলেই বিবেচিত হয়। তবে সঠিক ধরনের পাউরুটি খেলে ওজন কমে। পূর্ণশস্য খাদ্যে ক্যালোরি কম এবং আঁশ বেশি।
১৭. আখরোট এবং ম্যাকাড্যামিয়া বাদাম
এদুটি খাবার স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং ভিটামিন ও খনিজপুষ্টিসমৃদ্ধ। সকাল বেলাতেই একমুঠো খেলে দিনভর আর কোনো জাঙ্কফুড খাওয়া হবে না।
১৮. মধু
প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস হালাক গরম পানিতে এক চা চামচ মধু এবং কয়েকফোটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন। এটি জমে থাকা চর্বি গলাতে সহায়ক।
১৯. পেপে
পেপে এর পরিশোধনকারী ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানের জন্য পরিচিত। এছাড়া আঁশ, জরুরি ভিটামিন এবং খনিজসমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ওজন কমাতে সহায়ক এবং সেললাইট এর বিরুদ্ধে লড়াই করে।
২০. গ্রিন টি
গ্রিন টিতে আছে ক্যাটেচিন নামের একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে এবং চর্বি পোড়ায়। সুতরাং সকালে খালি পেটেই এক কাপ গ্রিন টি পান করুন।
সূত্র: টিপ্সনিড