মুখ ফোলা। পা ফোলা। আঙুল দিয়ে চাপ দিলে ত্বক দেবে যায়। সাধারণ ধারণা হলো, শরীরে পানি জমা মানেই কিডনি খারাপ। কিন্তু আসলে নানা কারণেই শরীরে পানি জমতে পারে। যাঁদের হৃদ্যন্ত্র ও ফুসফুসে সমস্যা আছে, তাঁদেরও এমন হতে পারে।
ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি রোগ; যেমন: ক্রনিক ব্রংকাইটিস, ব্রংকিয়েকটেসিস, যক্ষ্মার নানা জটিলতা থেকে হৃদ্যন্ত্র আক্রান্ত হলে এই পরিস্থিতিকে বলে কোর পালমোনালি। এতে শ্বাসকষ্ট-জাতীয় সমস্যার সঙ্গে মুখ ও পা, কখনো সারা শরীর ফুলে যায়।
এমনিতে হৃদ্যন্ত্রের কার্যকারিতা কমে গেলেও (কার্ডিয়াক ফেইলিওর) শরীরে পানি আসতে পারে। সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্যন্ত্রের ভাল্বের ত্রুটি, ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজ জটিল হয়ে পড়লে এ সমস্যা দেখা দেয়। এসব রোগীর বুক ধড়ফড়, বুকে ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে। এ ধরনের রোগে শরীরে পানি জমার কারণ খুঁজতে বুকের এক্স-রে, ইসিজি বা ইকোকার্ডিয়ামের প্রয়োজন।
ফুসফুস বা হার্টের সমস্যা ছাড়াও যকৃতের অকার্যকারিতায় অন্ত্রের যক্ষ্মা, পেটের ভেতর কোনো টিউমার বা ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লেও শরীরে পানি আসে। কিডনির সমস্যা, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, রক্তে আমিষের অভাব ইত্যাদি রোগেও পানি জমা বিচিত্র নয়। অনেক সময় কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও শরীরে পানি জমতে পারে।
শরীরে পানি জমলে তাই কারণ অনুসন্ধান করার মধ্য দিয়ে চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
* একেবারে শুরুতে কোথায় পানি জমেছিল তা মনে করার চেষ্টা করুন ও চিকিৎসককে জানান। কিডনির সমস্যায় প্রথমে মুখ ফোলে, আবার যকৃতের সমস্যায় প্রথম পানি জমে পেটে। হার্টের রোগীদের প্রথম দিকে কেবল পা দুটো ফুলে যায়।
* প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, প্রস্রাবের রং পরিবর্তন হলে কিডনি রোগ কি না ভাবতে হবে। আবার শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় হার্ট বা ফুসফুসের সমস্যাকে নির্দেশনা করে। জ্বর, খাদ্যে অরুচি, বমি ভাব, বমি বা মলের সঙ্গে রক্তপাত ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিলে যকৃৎ বা অন্ত্রের কোনো জটিল রোগ হয়েছে কি না খুঁজতে হবে।
* পানি জমার আগে কী কী ওষুধ খেয়েছিলেন (ব্যথানাশক, অ্যামলোডিপিন-জাতীয় রক্তচাপের ওষুধ, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ইত্যাদি) তা মনে করে দেখুন।
* অনেকে শরীরে পানি জমলে ওষুধের দোকান থেকে ল্যাসিক্স-জাতীয় পানি কমার ওষুধ কিনে খান। এতে পানি চলে যায় বটে, কিন্তু কারণ জানা হয় না। ফলে পরে রোগ জটিল হয়ে ওঠে। আর না জেনে এ ধরনের ওষুধ খাবার নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও আছে।