জীবন বড়ই গোলমেলে। কোন বাঁকে যে মৃত্যু লুকিয়ে, তা বোঝা বেজায় কঠিন কাজ। তাই তো সময় থাকতে শরীরের ভাষাকে রপ্ত করতে শিখুন। জানার চেষ্টা করুন শরীরের সেই সব ছোট ছোট লক্ষণকে, যা দেখে সহজেই বোঝা সম্ভব দেহে কোনও রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা। যেমন ধরুন প্রস্রাব। ইউরিন দেখে শরীরের অন্দরের একাধিক গোপন রদবদল সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা করে নেওয়া সম্ভব। শুধু শিখে নিতে হবে শরীরের ভাষাটা। তাহলেই কেল্লাফতে!
অনেকেরই প্রস্রাব করার সময় ফেনা হয়। কেন এমনটা হয় জানা আছে? সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে এক্ষেত্রে প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষ মনে করেন প্রস্রাব খুব স্পিডে বেরোনোর কারণেই এমনটা হয়ে থাকে। যদিও এই ধরণা একেবারে ভুল নয়। তবে প্রস্রাবে ফেনা হওয়ার পিছনে অনেক সময় কোনও না কোনও রোগের ভূমিকাও থাকে। তবে সেক্ষেত্রে ইউরিনে ফেনার হওয়ার সঙ্গে আরও কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন…
প্রস্রাবে ফেনা এবং আরও কিছু:
কোনও রোগের কারণে যদি প্রস্রাবের ধরনে এমন বদল আসে, তাহলে হাতের তালু,পা এবং মুখ ঘামতে শুরু করবে। সেই সঙ্গে ক্লান্তি, ক্ষিদে কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা, বমি, ঘুম কমে আসা, প্রস্রাবের রং গাড় হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলিও প্রকাশ পেতে শুরু করবে।
কী কী কারণে প্রস্রাবে এমন ফেনা হতে পারে?
ব্লাডার থেকে খুব দ্রত গতীতে প্রস্রাব বেরলে সাধারণত এমন ধরনের ফেনা হয়ে থাকে। কিন্তু যদি রোগের প্রসঙ্গে আসেন, তাহলে বলতে হয় শরীরে যখন জলের অভাব দেখে দেয়, তখন প্রথম লক্ষণ হিসেবে ইউরিনে ফেনা দেখা দেয়। তাছাড়া প্রস্রাবে প্রোটিন বা অ্যালবুমিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে, কিডনির কর্মক্ষমতা কমতে থাকলে এবং স্পার্মের ক্ষরণ ঠিক মতো না হলে এমন ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত, কিডনির কাজ হল রক্তে উপস্থিত টক্সিক উপাদান প্রস্রাবের মাধ্যমে বার করে দেওয়া। কিন্তু যখন কিডনির ক্ষমতা কমতে থাকে, তখন প্রস্রাবের সঙ্গে বর্জ্য পদার্থের পাশাপাশি প্রোটিনও বেরোতে শুরু করে। প্রোটিন বায়ুর সংস্পর্শে এলে ফেনায় পরিণত হয়। তাই টানা কয়েক দিন ধরেই যদি ইউরিনে ফেনা হতে থাকে, তাহলে যত শীঘ্র সম্ভব চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।
ভয়ের কারণ আছে কী?
শরীরের ভাইটাল অর্গানগুলির মধ্যে অন্যতম হল কিডনি। তাই এই অঙ্গটি যদি ঠিক মতো কাজ করতে না পারে তাহলে তো বিপদ। সেই কারণেই প্রস্রাবে ফেনা হওয়াটাকে হাল্কা চালে নেওয়া উচিত নয়। প্রসঙ্গত, যে যে কারণে কিডনির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেই কারণগুলি হল- ডায়াবেটিস, ক্রনিক কিডনি ডিজজ, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি। তাই কারও যদি এই রোগগুলির মধ্যে কোনওটা থাকে এবং প্রস্রাবে ফেনা হওয়ার মতো লক্ষণও প্রকাশ পায়, তাহলে সাবধান হতে হবে। এক্ষেত্রে কী কারণে এমন লক্ষণ দেখা দিচ্ছে সে সম্পর্কে জেনে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করতে হবে। না হলে কিন্তু মৃত্যু মুখে পরা ছাড়া কোনও উপায় থাকবে না। প্রসঙ্গত, আরেকটি রোগের কারণেও অনেক সময় প্রস্রাবে ফেনা হয়ে থাকে। কী সেই রোগ? শরীরের নিয়ম অনুসারে স্পার্ম ইউরেটার হয়ে শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু এমনটা না হয়ে যখন সিমেন উল্টো পথে ইউরিনারি ব্লাডারের দিকে চলে যায়, তখন নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। যার অন্যতম হল প্রস্রাবে ফেনা হওয়া। এই রোগকে চিকিৎসা পরিভাষায় রেট্রোগেড ইজেকুলেশন বলা হয়ে থাকে।
ইউরিনে ফেনা হচ্ছে কেন তা জানতে কী করণীয়:
এক্ষেত্রে প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি যদি প্রয়োজন বোধ করেন তাহলে ইউরিনের নমুনা নিয়ে কয়েকটি টেস্ট করলেই ধরা পরে যাবে ফেনা হওয়ার কারণ কী।
এক্ষেত্রে চিকিৎসা কী?
কী কারণে এমনটা হচ্ছে জানার পর সেই মতো চিকিৎসা শুরু করতে হয়। যদি কিডনির কোনও রোগের কারণে প্রস্রাবে ফেনা হয়ে থাকে তাহলে সেই রোগের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। একবার রোগ সেরে গেলেই লক্ষণও কমে যেতে শুরু করবে।
ফেনা কোনও রোগের কারণে হচ্ছে কিনা জানার কোনও সহজ পদ্ধিত আছে?
মাঝে মধ্যে প্রস্রাবে ফেনা হওয়াটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে চিন্তার কোনও কারণ নেই। কিন্তু যদি দেখেন বেশ কয়েকদিন ধরেই এমনটা হচ্ছে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না। এছাড়াও যে যে বিষয়গুলির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, সেগুলি হল, প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পরছে কিনা এবং অন্য কোনও শারীরির অসুবিধা দেখা দিচ্ছে কিনা।