অন্য ক্যান্সারের মতোই লিভার ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোন লক্ষণ প্রকাশ পায়না । ক্যান্সার কোষ ক্রমশ বড় হতে থাকলে বা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়লে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায় । লিভার ক্যান্সারের এমন কিছু সাধারণ লক্ষণের কথাই আজ জেনে নিব ।
১) পেটে ব্যথা
যদি আপনার পেটে ব্যথা অনুভব করেন , বিশেষ করে পেটের ডান পাশে নিয়মিত ব্যথা হলে তা হতে পারে লিভার ক্যান্সারের জন্য । একজন অনকোলজিস্ট বা লিভার বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন সঠিক কারণ জানার জন্য এবং নিরাময়ের জন্য ।
২) পেটে কোন ফোলা বা পিন্ড দেখা গেলে
উপরের বা নীচের পেটে ফোলা বা পিন্ডের মত অংশ দেখা দিলে তা হতে পারে লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ । এর পাশাপাশি পেট ভরা থাকার অনুভূতি থাকলে তা লিভার ক্যান্সারের প্রধান লক্ষণ হতে পারে ।
৩) পেট ফুলে যাওয়া
পেট ফুলে গেলে তা অবহেলা করা উচিৎ নয় । কারণ এটি হতে পারে ক্যান্সার কোষের অতিরিক্ত বৃদ্ধির কারণে অথবা লিভারে তরল জমে যাওয়ার কারণে । এর ফলে পেটে ও লিভারের মধ্যে চাপ বৃদ্ধি পায় । এতে শুধু লিভারের কাজেই প্রভাব পড়েনা বরং লিভারের অকার্যকারিতাও দেখা দিতে পারে ।
৪) জন্ডিস
যদিও জন্ডিসে আক্রান্ত হলেই তা লিভার ক্যান্সারের জন্য হবে এমন নয় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি লিভার ড্যামেজের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ করে । যা পরবর্তীতে লিভার ক্যান্সারে পরিণত হতে পারে । ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া , ফ্যাকাসে মল ও গাঁড় প্রস্রাব হলে অবহেলা করা উচিৎ নয় বরং দ্রুত নিরাময়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ ।
৫) অবসাদ
অবসাদ অনুভব করা লিভার ক্যান্সারের তেমন কোন তীব্র লক্ষণ প্রকাশ করেনা । কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্রাম নেয়ার পরেও অনেক বেশি ক্লান্ত অনুভব করা অথবা দৈনন্দিন টুকিটাকি কাজ করলেই পরিশ্রান্ত হয়ে পড়লে অবহেলা করা উচিৎ নয় । এগুলোর পাশাপাশি যদি পেটে ব্যথা ও জ্বর থাকে তাহলে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন ।
৬) জ্বর
জ্বরকে লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ হিসেবে গণ্য করাটা কঠিন । কারণ অনেক রোগের বা ইনফেকশনের সাধারণ লক্ষণ হচ্ছে জ্বর । পেট ফুলে যাওয়া বা পেটে ব্যথা হওয়ার সাথে যদি নিম্ন মাত্রার জ্বরে ভুগে থাকেন তাহলে আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন মূল কারণ নির্ণয়ের জন্য ।
৭) ক্ষুধা কমে যাওয়া
কিছু ক্ষেত্রে পেট ভরা অনুভব করা বা ক্ষুধা কমে যাওয়া লিভার ড্যামেজের বা লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে । ক্ষুধা কমে গেলে শরীরের ওজন কমে যায় । শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের না হয়ে লিভারের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করে বলে এমন হয় ।
নারীর চেয়ে পুরুষের লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে । ক্রনিক ইনফেকশন যেমন – হেপাটাইটিস সি বা হেপাটাইটিস বি থাকলে লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় । লিভারে অনেক বেশি আয়রন জমা হয়ে গেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় , যাকে হেমোক্রোমাটোসিস বলে , এটি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত রোগ । এছাড়াও লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হলে , ডায়াবেটিস থাকলে , লিভারের রোগে আক্রান্ত স্থূল মানুষদের , টোব্যাকো ও অ্যালকোহল সেবন করলে এবং দীর্ঘদিন যাবত এনাবোলিক স্টেরয়েড সেবন করলে লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় ।
MRI , CT স্ক্যান , আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে লিভার ক্যান্সার নির্ণয় করা যায় । টিউমারের গঠন ও ছড়িয়ে পড়ার উপর লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে । টিউমারের আকার বৃদ্ধি পেলে নিরাময়ের হার কমতে থাকে । লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা সার্জারি , রেডিয়েশন থেরাপি , কেমোথেরাপি বা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট এর মাধ্যমে করা হয় ।