বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচানোর ১০টি টিপস!!! – মায়ের হাতের রান্না

বাচ্চাদের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচানোর ১০টি টিপস!!! – মায়ের হাতের রান্না

অনেক বাবা-মা শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েন।সাধারণত তিন থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের মধ্যে এই সমস্যা প্রবল হয়ে দেখা দেয়। অনেক অভিভাবকই বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের এই সমস্যাটি বুঝতে পারেন না। তাই শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের বিষয়ে বাবা-মার সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য :
কোনো শিশু যদি সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করে ও মল যদি খুব শক্ত হয়ে মলদ্বারে ব্যথা সৃষ্টি করে থাকে তবে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।

কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের লক্ষণ:
মাঝেমধ্যে পেটে ব্যথা হয়
পেট শক্ত হয়ে থাকা বা পেট ফুলে থাকা।
পেটের ওপর হাত দিলে শক্ত মলগুলো অনুভূত হওয়া
মলদ্বার আর্দ্র থাকবে এবং স্পিংটার খোলা থাকবে।
ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়া
শিশু খেতে না চাওয়া
খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা
বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
ওজন কমে যাওয়া

শিশুর কোষ্ঠ্যকাঠিন্য রোধে করনীয়:

১. আঁশ জাতীয় খাবার খাওয়া:
শিশুদের খাদ্যতালিকায় আঁশ জাতীয় খাবার রাখুন।আঁশ হলো খাবারের সেই অংশ, যা পরিপাক হয় না এবং খাদ্য গ্রহণের পর অবশেষ হিসেবে জমা হয়ে মল তৈরি করে। খাদ্যের আঁশ অংশটুকু হজম না হওয়ার কারণে এগুলো পরিপাকতন্ত্রের বেশ কিছু জলীয় অংশ শোষণ করে ধরে রাখে এবং এই জলীয় অংশসহ এগুলো মলের সাথে বের হয়ে আসে। এতে মল নরম হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ হয়। শাক-কচুশাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমিশাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলাশাক, ডাঁটাশাক, লাউয়ের ও মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদিতে প্রচুর আঁশ রয়েছে।

২. বেশি পরিমানে পানি পান:
পানি খাবার হজমে সহায়তা করে। বেশি পানি খেলে মলাশয় পরিষ্কার হয় এবং শরীর নতুন করে খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে সহজেই। প্রতিদিন শিশুকে বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে।শিশু পানি খেতে না চাইলে শরবত, তাজা ফলের জুস বা স্যুপ খাওয়ানো যেতে পারে।

৩. শিশুর মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তোলা:
শিশুকে মলত্যাগ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শিশুকে বকাঝকা না করে প্রতিদিন মলত্যাগের জন্য পুরস্কারের মাধ্যমে তাকে উৎসাহিত করা যেতে পারে। অনেক বাচ্চাই মলত্যাগ করার সময় একটু প্রাইভেসি পছন্দ করে। টয়লেট ব্যবহার করতে শেখেনি এমন বাচ্চাকে ঘরের এক কর্নারে পটিতে বসিয়ে দিন যাতে সে প্রাইভেসি ফিল করে।

৪. শিশুর পছন্দের বাথরুমের ব্যবস্থা করা:
অনেক শিশুই তার নির্দিষ্ট পছন্দের বাথরুম ছাড়া অন্য কোথাও বাথরুম করতে বা যেতে পছন্দ করে না। শিশুকে তার পছন্দের বাথরুম ব্যবহার করতে দিন।

৫. ফাস্ট ফুড বা মাংস জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা:
অনেক শিশুরই ফাস্ট ফুড এবং মাংস জাতীয় খাবার খুবই প্রিয়।কোষ্ঠকাঠিন্য রোধের জন্য শিশুকে এজাতীয় খাবার কম দেয়া উচিত। এ বিষয়ে মা-বাবাকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

৬. দুধের উপর নির্ভশীলতা কমিয়ে আনা:
অনেক শিশুই দুধ খেতে পছন্দ করে।অনেক শিশুকেই দুধ থাওয়ার কারনে দেখা যায় অন্য খাবার খেতে চায় না, বিশেষ করে আঁশ জাতীয় খাবার। এক বছরের বেশী বয়সের শিশুকে দৈনিক আধা লিটার (১৬ আউন্স) থেকে পৌনে এক লিটার (২৪ আউন্স) এর বেশি দুধ খেতে দেয়া ঠিক না।

কারণ দুধে এতো পুষ্টিগুন থাকে যার কারনে বেশি দুধ খেলে শিশু অন্য কোন খাবার খেতে চায় না। ফলে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এজন্য শিশুকে পরিমিত পরিমাণ দুধের সাথে অন্য খাবার বিশেষ করে আশঁ জাতীয় খাবার খাওয়াতে উৎসাহিত করতে হবে।

৭. শারীরিক কার্যক্রম:
শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে প্রতিদিন তার খেলাধুলার ব্যবস্থা করা উচিত। হাত পা নাড়াচাড়া করে খেলছে কিনা সেদিকে নজর রাখুন। শিশু সারাদিন যদি শুয়ে বসে কাটায় তাহলে তার নড়াচড়া কম হবে। সারাদিনে কমপক্ষে ১ ঘন্টা হলেও শিশুর শারীরিক কার্যক্রম না হলে অন্ত্রে নড়াচড়াও স্বাভাবিকভাবে হবে না। তাই এই ব্যাপারে অবশ্যই খেয়াল রাখুন।

৮. ঔষধের প্রতি খেয়াল রাখুন:
সাধারন জ্বর, সর্দি, কাশি বা যেকোনো রোগের জন্য বাচ্চাকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ খাওয়ানো যেতে পারে, তবে লক্ষ্য রাখুন কোনো ঔষধের কারনে শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য হচ্ছে কিনা। যদি হয়, তাহলে তা বন্ধ করুন এবং ডাক্তারকে জানান। এছাড়া ডাক্তারের কাছ থেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের এমন কিছু ঔষধের পরামর্শ নিন যা বাচ্চার উপর ভালো কাজ করে ।

৯. কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে এমন কিছু উপাদান:
শিশুর জন্য রাতের খাওয়ার পর ইসুপগুলের ভূষি গরম দুধে মিশিয়ে খাওয়ানো, অথবা শিশুকে খেজুর খাওয়াতে পারেন। খেজুরে আছে এমন সব পুষ্টি গুন যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে।

১০. শিশুদের পেট নরম করার ব্যবস্থা করুন:
শিশুদের লেক্সেটিভ বা পায়খানা নরম করার ঔষধ দিয়ে হলেও কোষ্ঠকাঠিন্যে দূর করার চেষ্টা করুন। এসব খুব সহজেই কাজ করে এবং নিরাপদও। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াবেন এবং পুরো ডোজ শেষ করবেন। কোষ্ঠকাঠিন্যে ভালো হওয়ার সাথে সাথেই হঠাৎ করে ঔষধ বন্ধ না করে আস্তে আস্তে বন্ধ করুন।

পরিশিষ্ট:
শিশুর মলত্যাগে কষ্ট, ব্যথা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে সমস্যায় পড়েননি এমন মা-বাবা খুবই কম আছেন। তবে এ অবস্থায় মা-বাবা যেন চিন্তামুক্ত থাকেন, অস্থিরতায় না ভোগেন সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।শিশুকে আঁশযুক্ত সুষম খাবারের সাথে প্রচুর পরিমানে পানি খাওয়ানো এবং খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুর শারীরিক পরিশ্রম করছে কিনা, তার দিকে নজর রাখুন। যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থায় কাজ না হয় তখন অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। মা-বাবা একটু সচেতন হলেই ‍শিশুর অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারেন।

Related Posts

রোজা রেখে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে কী করবেন!

রোজার মাসে সবাই যেন খাবারের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। সারা দিন না খাওয়ার অভাবটুকু ইফতারে পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কি এই প্রতিযোগিতা? কে কত খেতে বা রান্না করতে পারে।…

গলার অতিরিক্ত চর্বি কমানোর ১০টি সহজ উপায়…

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই লক্ষ্য করছেন তো জিনিসটা? আর ভাবছেন কী বাজে লাগছে মুখটা! অতিরিক্ত কী একটা ঝুলছে! আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি গলায় জমে থাকা…

জানেন কি গরমে খাবারের চার্ট কেমন হওয়া উচিত?

গরমে অস্বস্তিতে সবাই। এরমধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। তাই গরমে সুস্থ থাকতে ঠিকঠাক খাবার চার্ট খুবই জরুরি-…

বয়স অনুযায়ী আপনার শিশুর প্রতিদিন কতটুকু পানি প্রয়োজন

বাচ্চার কতটুকু পানি প্রয়োজন সেটি আসলে নির্ভর করে বাচ্চার অবস্থা, ওজন ও বয়সের ওপর। জ্বর বা অসুখের সময় পানির বেশি প্রয়োজন। বেশি গরম পড়লে, খেলাধুলা করলে বেশি…

শারীরিক সৌন্দর্য বারাতে ও ওজন কমাতে রইল ১৪ টি সহজ ঘরোয়া উপায়

মাঝে মাঝে ব্যয়াম ও কখনো কখনো ডায়েট করে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করাটা আসলেই দুঃসাধ্য।শরীরের বাড়তি মেদ নিয়ে আজকাল অনেকেই চিন্তিত। সুস্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, শারীরিক সৌন্দর্যের…

ওভেনের খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়!

কম সময়ে খাবার গরম করতে মাইক্রোওয়েভ ওভেনই ভরসা। আধুনিক এই যন্ত্রটি জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। নামমাত্র সময়ে ঠান্ডা খাবার গরম করার এর চেয়ে ভাল উপায় আর নেই।…