সুখে থাকার পূর্বশর্তই হলো সুস্থ থাকা। কিন্তু সুস্থ থাকা খুব একটা সহজ কাজ নয়। কারণে বা অকারণে শরীরে বাসা বাঁধে বিভিন্ন ধরণের রোগ। যত বয়স বাড়তে থাকে, রোগগুলোও বাড়তে থাকে তাল মিলিয়ে।
তিরিশ বছর পার হতে না হতেই রোগের তীব্রতা যেনো জেঁকে বসে একবারে। বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। অস্টিওপোরোসিস এমনই একটা রোগ। বয়সকালীন সমস্যার মধ্যে অন্যতম অস্টিওপোরোসিস। তুলনামূলক মহিলারাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
অস্টিওপোরোসিস এর প্রধান সমস্যা অল্প আঘাতেই হাড় ভাঙা বা চিড় ধরা। তবে সঠিক সময় চিকিৎসা শুরু করলে এই ডিজেনারেটিভ অসুখ অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। আর তাই জেনে নেয়া দরকার অনেক কিছুই।
অস্টিওপোরোসিস কী?
ইংরেজিতে অস্টিও কথার অর্থ হাড়। ‘পোরস’ অর্থাৎ ছিদ্র। এই রোগে হাড়ের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম ছিদ্রের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যায়। যার ফলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। তাই অল্প চোট-আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সাধারণত ষাটোর্ধ্ব মহিলা ও সত্তরোর্ধ্ব পুরুষ অস্টিওপোরোসিসে আক্রান্ত হন।
উপসর্গ
অন্যান্য অর্থোপেডিক সমস্যার মতো এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ দেখা যায় না। এই অসুখের প্রথম লক্ষণই হল অল্প আঘাতে পিঠ, কোমর কিংবা কবজির হাড়ে ফ্রাকচার হওয়া।
এই রোগের কখন ঝুঁকি কখন থাকে
· দীর্ঘদিন স্টেরেয়ড জাতীয় ওষুধ খেলে।
· রিউম্যাটয়েড আথ্রাইটিস থাকলে।
· অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপানে অভ্যস্ত হলে।
· নিয়মিত শরীরচর্চা না করলে।
· ভিটামিন ডি’র অভাব থাকলে।
· পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার না খেলে।
জটিলতা কেমন হয়
অস্টিওপোরোসিসের প্রধান সমস্যা কোমরের হাড় ফ্রাকচার। সাধারণত রাতে ঘুমানোর সময় অসাবধানতাবশত নড়াচড়া হলে কিংবা কোথাও পড়ে গেলে অল্প আঘাতেই কোমরের হাড় ভেঙে যায়। একে নেক ফিমার ফ্রাকচার বলে। এছাড়া কোমর ও পিঠের হাড় চেপে যেতে পারে। এতে মানুষ কুঁজো হয়ে যায়।
রোগ নির্ণয় পদ্ধতি
অস্টিওপোরোসিস শনাক্তকরণের আদর্শ পরীক্ষা ডেক্সা স্ক্যান। এছাড়া রক্তে ক্যালসিয়ামের ও ভিটামিন বি এর মাত্রা নির্ধারণ করে এবং বোন মিনারেল ডেনসিটি (বিএমডি) পরীক্ষা করে অস্টিওপোরোসিসের অবস্থা বোঝা যায়।
চিকিৎসা পদ্ধতি
এর প্রধান চিকিৎসা প্যারাটয়েড হরমোন থেরাপি। এছাড়া পিঠ ও কোমরের হাড় বসে গেলে বেলুন কাইফোপ্লাস্টি করে হাড় সোজা করা হয়। তবে অনেক সময় কবজি, পা কিংবা কোমড়ের হাড় ফ্রাকচার হলে তা সার্জারি করে ঠিক করার ব্যবস্থা করা হয়।
কিছু করণীয়
· অনেক সময় অস্টিওপোরোসিসের জন্য রোগী কুঁজো হয়ে যান এবং পিঠ-কোমরে ব্যথা হয়। ব্যথা কমার ওষুধ খেলে ব্যথা আরও বেড়ে যায় এবং স্টেরয়েড থাকার জন্য হাড় আরও ভঙ্গুর হয়।
· রিউম্যাটয়েড আর্থাইটিসে দীর্ঘদিন ওষুধ খেলে কিংবা স্টেরয়েড নিলে বোন ডেনসিটি টেস্ট করিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
· দুধ, ছোট মাছ, ছানা, আটার রুটি, মাংস, ডিম, ফল, শাক-সবজি ও প্রচুর ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেতে হবে।
· নিয়মিত শরীরচর্চা জরুরি।
· পায়ে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো লাগাতে হবে।
· বয়স হলে অযথা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করবেন না। আস্তে ধীরে চলাফেরা করুন।
· আগে কোনও জায়গায় চোট লাগলে আরও সতর্ক থাকুন।
· মহিলারা মেনোপজের পর অস্টিওপোরোসিসে বেশি আক্রান্ত হন, তাই সাবধান।
· ধূমপান ও মদ্যপান এড়িয়ে চলতে হবে।