গোড়ালিতে হঠাৎ ব্যথা- আমাদের শরীরের সবটা ভার সারাদিন যে অঙ্গটিকে বয়ে বেড়াতে হয় সেটি হচ্ছে পা। হাঁটবার সময় আমাদের স্বাভাবিক ওজনের ১.২৫ গুন বেশি ও দৌড়বার সময় স্বাভাবিক ওজনের ২.৭৫ গুন বেশি ওজন আমাদের শরীর পায়ের ওপর ফেলে।
তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিদিনের নানা কাজ কর্মের পর গোড়ালিতে বা পায়ের নীচে ব্যথা হওয়াটা বেশ সাধারণ ব্যাপার।
১. প্লান্টার ফেসিয়াটিস লিগামেন্ট গোড়ালির হাড়ের সাথে যুক্ত থাকে। এই লিগামেন্টে খুব বেশি চাপ পড়লে গোড়ালির সাথে যুক্ত টিস্যুগুলি উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে, যার ফলে ব্যথা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পর বা সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর ব্যথা বেশি অনুভব হয়।
২. পায়ের পাতা ফ্ল্যাট হলে গোড়ালিতে ব্যথার সম্ভাবনা বাড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টিনএজারদের এই সমস্যা হয়। এই বয়সে গোড়ালির হাড় পূর্ণতা পায় না। খুব দ্রুত ক্ষয় হয়।
৩. গোড়ালির হাড় সম্পূর্ণ গঠন হওয়ার আগে বেশি হিল জুতো পরলেও ব্যথা হয়। দীর্ঘদিন ধরে খুব শক্ত জুতো ব্যবহারের ফলে গোড়ালিতে চাপ পড়ে। এতে গোড়ালির পেছন দিক থেকে অথবা গোড়ালির ভেতর থেকে ব্যথা অনুভব হয়। পরে ক্রমশই বাড়তে থাকে।
৪. পায়ের পেছনের দিকে নার্ভে চাপ পড়লেও গোড়ালি ব্যথা হয়।
৫. খুব বেশি এক্সারসাইজ, খেলাধুলো এবং হাঁটাচলা করে কাজ করলে গোড়ালির হাড়ে খুব চাপ পড়ে, যা থেকে হাড়ে চিড় ধরে। মূলত যারা দৌড়ায় তাদের এই সমস্যা থেকে গোড়ালিতে ব্যথা হয়।
৬. বিভিন্ন অসুখ থেকে হতে পারে হিল পেইনের সমস্যা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ৭-১৫ বছরের মধ্যে বাচ্চাদের গোড়ালিতে ব্যথা হয়। অস্টিওস্পোরোসিস থাকলেও গোড়ালিতে ব্যথা হয়।
৭. রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে, বোন সিস্ট থাকলে হিল পেন হয়।
জেনে নিন কখন ডাক্তার দেখাবেন?
১. গোড়ালি ফুলে গেলে।
২. জ্বরের সাথে গোড়ালিতে ব্যথা ও অসাড় হলে।
৩. হাঁটার সমস্যা হলে, পা ভাঁজ করতে অসুবিধা অথবা টো দিয়ে দাঁড়াতে সমস্যা হলে।
৪. এক সপ্তাহের বেশি গোড়ালিতে ব্যথা থাকলে, হাঁটা কিম্বা দাড়ানো অবস্থা ছাড়াও ব্যথা করলে দেরি না করে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
গোড়ালির ব্যথায় কী করবেন?
১. হিল পেইনের সমস্যা থেকে বাঁচতে নরম জুতো ব্যবহার করুন। শক্ত জুতো বা উঁচু-নিচু জায়গায় বেশি হাঁটা চলবে না।
২. মাসল পেইন থাকলে অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
৩. ভিটামিনের অভাব থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
৪. ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই বেশি করে খেতে হবে।
৫. বেশি করে সবুজ শাক-সবজি ফল খাওয়া উচিত।
৬. ব্যথা এড়াতে কর্ড লিভার অয়েল উপকারি।
৭. সামুদ্রিক মাছ খেতে হবে।
৮. বেশি করে পানি পান করতে হবে।
৯. তেল-ঝাল জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া চলবে না।
১০. ডাবের পানি ও ফল বেশি করে খেতে হবে।
বেশিদিন স্থায়ী ব্যথা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।