প্রাকৃতিক উপায়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার পরিবর্তে বর্তমানে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সিজারের সাহায্য নিতে দেখা যায় । কিন্তু সিজারের পর কী হয়, তার ব্যাপারে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই । জেনে নিন সিজার করানোর ব্যাপারে দরকারি কিছু তথ্য ।
সিজার করে সন্তান জন্ম দিলে চার দিনের মতো হাসপাতালে থাকতে হতে পারে । এ ব্যাপারে জানিয়েছেন আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হসপিটালের ডাক্তার আয়েশা নূর মিলি । তিনি জানান, অনেক মা-ই জানেন না যে সিজার করানোর পরেও যৌনাঙ্গ থেকে রক্তপাত হয় । তবে এই রক্তপাতের পরিমাণ হবে সীমিত । খুব বেশি রক্তপাত, অতিরিক্ত দুর্গন্ধ এবং গাড় রঙের রক্ত যাচ্ছে কী না সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে, কারণ এগুলো ইনফেকশনের লক্ষণ ।
- সিজার করানোর পর মা-কে ভিটামিন এ খাওয়ানো হয় । তা খাওয়ানো হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে মা এবং তার পরিবারকে সতর্ক থাকতে হবে ।
- সিজার করানোর পরে আরেকটি সমস্যায় মেয়েদের ভুগতে দেখা যায় তা হলো পরের দিন পা ফুলে যাওয়া । এক্ষেত্রে ঘুমানোর সময়ে বা শুয়ে থাকার সময়ে পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে পা একটু উঁচু করে রাখতে হবে। তাহলে পা ফোলা কমে যাবে ।
- সিজার করানোর পর অনেক মা-ই সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান না । সিজার করানোর পর তিন দিনের মাঝে বুকের দুধ না খাওয়ালে এ সময়ে স্তনে চাকা চাকা অনুভূত হয় এবং ব্যাথা হতে পারে । সমস্যার সমাধানে তোয়ালে গরম করে সেঁক দেওয়া যেতে পারে । এছাড়াও দুধ বাচ্চাকে না দিলেও বের করে ফেলে দিতে হবে বা রেখে দিতে হবে ।
- আরেকটি ব্যাপার যা অনেক মা-ই জানেন না, তা হলো বুকের দুধ ফিডারে রেখে খাওয়ানো । মায়ের দুধ ফিডারে করে ফ্রিজে রেখে দিলে তা বাচ্চাকে দেওয়া যাবে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত । ঠাণ্ডা দুধ তো অবশ্যই বাচ্চাকে দেওয়া যাবে না । কিন্তু এটা চুলায় ফুটিয়ে বা ওভেনে গরম করেও দেওয়া যাবে না । গরম পানিতে ফিডার রেখে এই দুধ গরম করে দিতে হবে ।
এ ছাড়াও সিজার করার পর আরও বেশ কিছু ব্যাপারে জেনে রাখা ভালো –
১) ক্যাথেটার
সিজার করানোর পর একটি ক্যাথেটার ব্যবহার করা হতে পারে তার শরীরে । এটা শুধু প্রথম দিনেই রাখা হয় । পরের দিন খুলে ফেলা হয় ।
২) সেলাইয়ের দাগ
সেলাইয়ের দাগটা থেকে যায় অনেকদিন, অনেক বছর পর্যন্ত । তবে অস্ময়ের সাথে তা অনেক হালকা হয়ে যায়, আগের মতো উঁচুও হয়ে থাকে না । অপারেশনের পর এই কাটা দাগ শুকাতে দিতে হবে কমপক্ষে ছয় সপ্তাহ । পুরো শুকিয়ে গেলে তারপরেই কেবল দাগ দূর করার জন্য তেল মালিশ বা দাগ দূর করার ক্রিম লাগানো যেতে পারে ।
৩) অপারেশনের পর টয়লেটের কাজ সারা
এটা বেশ বড়সড় একটা অপারেশন সুতরাং অনেকেই এই অপারেশনের পর টয়লেটের কাজ সারতে ভয় পান । প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে । প্রয়োজন হলে ডাক্তার কিছু ওষুধ দেবেন যা সহজে টয়লেটের কাজ সারতে সাহায্য করবে ।
৪) হাঁটাচলা
সিজারের পর রক্ত জমাট বাঁধার ভয় যেন না থাকে তার জন্য পরের দিন হালকা হাঁটাচলা করাটা ভালো ।
৫) শরীরে কাঁপুনি
শরীর থেকে অ্যানেসথেসিয়ার প্রভাব কেটে যাবার সময়ে অনেকের কাঁপুনি দেখা যায় । শরীরের নিম্নাগশে বিশেষ করে পায়ে অসাড়তা অনুভব হতে পারে । কয়েক ঘন্টার মাঝে এই অনুভুতি কেটে যাবার কথা ।
৬) রক্তপাত
প্রাকৃতিকভাবে সন্তান জন্ম না দিলেও রক্তপাত হবেই । একে বলা হয় পোস্টপারটাম ব্লিডিং । এটা খুব বেশি হলে ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে ।
৭) ভারী কাজ নিষেধ
বাচ্চার চাইতে ভারী কিছু আপনি তুলতে পারবেন না প্রথম ২-৩ সপ্তাহ । ৪-৬ সপ্তাহ ব্যায়াম বন্ধ । আর শারীরিক সম্পর্ক বন্ধ রাখতে হবে প্রথম ছয় সপ্তাহ ।
৮) হাঁচি-কাশিতে ব্যাথা হতে পারে
সার্জারির পর হাঁচি-কাশি দিতে গেলে পেটে ব্যাথা লাগতে পারে । এ সময়ে পেটের ওপর বালিশ চেপে ধরে রাখলে ব্যাথা কম হবে । অনেকেই এ সময়ে বেল্ট পরে থাকেন । এই বেল্টও ব্যাথা কমাতে সহায়ক । প্রথম সপ্তাহে এই সমস্যা বেশি হবে । পরে কমে যাবে ।