মাছ ধুতে গেলে সাধারণত হাতে কাঁটা ফুটবেই। আর হাতে আঁশটে গন্ধটাও সহজে যেতে চায় না। কিন্তু কিছু কৌশল ব্যবহার করে এসব বিরক্তিকর পরিস্থিতি থেকে আপনি রক্ষা পেতে পারেন। এখন দেখে নিন রন্ধনশিল্পী মাহামুদা বেগম এর মাছ ধোয়ার সহজ পদ্ধতিটি।
১. মাছ ধোয়ার সময় লবণের সঙ্গে সামান্য হলুদ ব্যবহার করুন। সম্ভব হলে লবণ-হলুদ মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তারপর ধুয়ে নিন পরিষ্কার পানি দিয়ে।
২. হাত না লাগিয়ে মাছ ধোয়ার জন্য কাটা মাছের টুকরাগুলোকে একটি বাটি বা বক্সে রেখে অল্প লবণ-হলুদ দিন। তারপর ভালো করে মুখটা বন্ধ করে হালকাভাবে ঝাঁকান। জোরে ঝাঁকালে মাছের টুকরা নরম হয়ে যাবে, ভেঙেও যেতে পারে। দেখবেন মাছের নোংরা পানি বের হয়ে আসবে।
একইভাবে দু-তিনবার করে অল্প লবণ-হলুদ দিয়ে হালকাভাবে মাছগুলো বক্স বা বাটির ভেতরে ঝাঁকিয়ে নিন, প্রতিবার পানি দিয়ে ধুয়ে আবারো সামান্য হলুদ-লবণ দিন। বাটিতে পানি দিবেন না, দেখবেন লবণ-হলুদের সঙ্গে মাছ থেকে ময়লাসহ পানি বের হয়ে আসবে।
৩. আশাকরি এতক্ষণে আপনার মাছের টুকরাগুলোর বেশির ভাগ পিচ্ছিল ময়লা বের হয়ে গেছে। এবার একটি খোলা ঝাঁঝরিতে হালকাভাবে নেড়ে নেড়ে মাছেরটুকরাগুলো ধুয়ে নিন। দেখবেন ঝাঁঝরির ফুটোর কারণে মাছ থেকে আপনার হাত ছাড়াই কেমন সুন্দর করে পানি ঝরিয়ে নিচ্ছে। ঝাঁঝরিতে রাখা টুকরাগুলো পানির নিচে রেখে ধুয়ে নিন। দেখুন এবার মাছের পিচ্ছিল ভাবটা একদমই নেই। ধোয়া শেষে মাছগুলো ঝাঁঝরিতেই রাখুন যেন পানি ঝরে যায়।
৪. বাজার থেকে মাছ এনেই চেষ্টা করুন ধুয়ে ফেলতে। এসব ঝক্কির কাজ একবারে করে নিতে পারলে সময় যেমন বাঁচে, তেমনি বারবার এসব করতে গিয়ে মেজাজ খারাপের সুযোগ থাকে না।
৫. ছোট মাছের জন্য শুধু লবণ-হলুদ আর ঝাঁঝরি ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।
৬. এভাবে মাছ ধুলে আপনার হাতের কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা একদম নেই আর নখও ভাঙবে না। তবু যদি মনে করেন সুন্দর হাতটা নষ্ট হয়েই যাবে, ঘরে রাখুন ওয়ানটাইম গ্লাভস। অথবা বেশি জরুরি হলে আপাতত পলিথিনের একটা প্যাকেট হাতে জড়িয়েই নিন।
৭. মাছ ধোয়ার পর হাতে গন্ধ হবেই। কি করবেন ভাবছেন? দিনের কাজের শুরুতেই ডাল-চাল ধুয়ে নিন, তাই তো। বরং একটু দেরি করুন। আগে মাছ ধুয়ে এবার চাল কিংবা ডাল ধুতে লেগে পড়ুন। চাল বা ডাল ধোয়া পানি সংরক্ষণ করুন। আর হাত দুটো ভালো করে ডাল-চাল ধোয়া পানিতে ধুয়ে নিন। দেখবেন হাত থেকে মাছের আঁশটে একদম চলে গেছে।
৮. আমরা সবাই বাজার থেকে টাটকা মাছ কেনার চেষ্টা করি। বাজার থেকে যদি মাছ কেটে আনেন, তবে সব একসঙ্গেই ধুয়ে ফেলুন। ভাবছেন টাটকা মাছটা ধুয়ে রেখে দিলে বাসি হয়ে যাবে? একদমই না। ধুয়ে ভালো করে সিল করা ফুডগ্রেড পলিথিন কিংবা বক্সে ভরে রাখুন। দরকার মতো বের করে রাখুন, বরফ ভাঙলে ইচ্ছামতো রান্না করুন। দেখবেন এখনো আপনার মাছ রয়েছে টাটকা আর স্বাদ রয়েছে অটুট। ওদিকে প্রতিদিনের ধোয়ার ঝক্কি থাকলো না।
৯. ছোট বা মাঝারি সাইজের মাছ হলে কাটার আগে একটি বড় বালতি বা পাতিলে পানি ভরে তার ভেতরে মাছটি রেখে তারপর ছুরির সাহায্যে আঁশ ছড়ান। দেখবেন কেউ বুঝবেই না আপনি রান্নাঘরে মাছ কুটেছেন। আঁশগুলোও এদিক-ওদিকে ছড়িয়ে পড়বে না। রান্নাঘর থাকবে একদম পরিষ্কার, গন্ধহীন।
১০. কোনো কারণে ফ্রিজ ছাড়া মাছ তাজা রাখতে হলে নাড়িভুঁড়ি পরিষ্কার করে ধুয়ে নিন। তারপর ভালো করে হলুদ মাখিয়ে রাখুন। সহসা পচে যাবে না।