কামিজ কাটিং ও সেলাই করার পদ্ধতি – মায়ের হাতের রান্না

কামিজ কাটিং ও সেলাই করার পদ্ধতি – মায়ের হাতের রান্না

যে কোন বয়সের মহিলারাই এখন কামিজ ব্যবহার করে থাকে । আজকাল দেখা যায় ছোট ছোট বাচ্চারাও এই পোশাক ব্যবহার করে । সুতি , সিল্ক , জর্জেট ইত্যাদি যেকোনো ধরনের কাপড় দিয়ে কামিজ বানানো যায় যার সাথে সালোয়ার বলে আরেকটি পোশাকও পরতে হয় । প্রথমে কামিজ ও তারপর সালোয়ার কিভাবে তৈরি করতে হবে তা আলোচনা করা হবে । প্রথমে জানা যাক ১৫-২০ বছর বয়সের একটি মেয়ে পরবে এরকম দুই হাত , আড়াই হাত বা তিন হাত বহরের একটি কামিজের মাপ কি হবে , কিভাবে তা কাটতে হবে এবং কিভাবে কাটা কাপড়টি সেলাই করতে হবে । প্রথমে বলা যাক ১৫-২০ বছর বয়সী মেয়ের কামিজের আনুমানিক সাইজ কেমন হবে ।

  • কামিজের ঝুলের মাপ হবে – ৪৮ ইঞ্চি
  • কামিজের বুকের মাপ হবে – ৩৬ ইঞ্চি
  • কামিজের কাঁধের মাপ হবে – ১৬ ইঞ্চি
  • কামিজের নিচের ঘেরের মাপ হবে – ৪২ ইঞ্চি
  • কামিজের গলার লম্বার মাপ হবে – ৫ ইঞ্চি
  • কামিজের গলার চওড়ার মাপ হবে – ২১/২ ইঞ্চি
  • কামিজের কোমরের মাপ হবে – ৩০ ইঞ্চি
  • কামিজের হাতার মুহুরীর মাপ হবে – ১২ ইঞ্চি
  • কামিজের হাতার লম্বা হবে – ১১ ইঞ্চি
  • কামিজের হাতার চওড়ার মাপ হবে – ১৬ ইঞ্চি
  • কামিজের হিপের মাপ হবে – ৪০ ইঞ্চি

এখন কিভাবে কামিজের জন্য নির্ধারিত কাপড়টি কাটতে হবে তার নিয়মগুলো হল :

•প্রথমে আড়াই হাত বহরের (ধরে নেই) আড়াই গজ কাপড় নিতে হবে। কাপড়টিকে আড়াআড়িভাবে চার ভাঁজ করতে হবে।
•এরপর ৪৮ ইঞ্চি ঝুল রাখার জন্য কাপড়টি লম্বায় ৪ঌ ইঞ্চি ও চওড়ায় ১১ ইঞ্চি মেপে দাগ দিতে হবে। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত ১ ইঞ্চি কাপড় লাগবে ঝুল মুড়ে সেলাই করার জন্য।
•এবার নিমার মত একইভাবে কাপড়ের ভাঁজ লাইনের দিক থেকে গলার মাপ নিতে হবে। সামনের গলার জন্য লম্বার মাপ নিয়ে দাগ ৫ ইঞ্চি আর চওড়ায় মাপ নিয়ে ২১/২ ইঞ্চি দাগ দিতে হবে।
•লম্বা ও চওড়ার মাপ যেখানে মিলেছে সেখান থেকে ভিতরের দিকে ১/২ ইঞ্চি মেপে ছোট একটি দাগ দিতে হবে।
•এবার এই দাগের উপর দিয়ে বাঁকা করে দাগ দিতে হবে যা হবে সামনের গলার মাপ।
•কামিজের পিছনের গলার জন্য লম্বার মাপ নিয়ে দাগ দিতে হবে ৩ ইঞ্চি। এরপর আগের মত একইভাবে নিচের দিকে বাঁকা করে দাগ দিতে হবে। মনে রাখবেন, সামনের গলা সবসময় কমপক্ষে ১ ইঞ্চি বেশি কাটতে হয়।
•এবার গলার দিক থেকে কাপড়ের চওড়ার দিকে ৮ ইঞ্চি লম্বা মেপে দাগ দিতে হবে যা হবে কাঁধলাইন।
•আগের মত কাঁধলাইনের শেষ মাথা থেকে নিচের দিকে ১/২ ইঞ্চি মেপে দাগ দিতে হবে। এবার এই দাগের সাথে গলার দাগ যোগ করে একটি লাইন টানতে হবে।
•তারপর কাঁধলাইনের উপর দিক থেকে নিচের দিকে ৮১/২ ইঞ্চি মেপে দাগ দিতে হবে। এই মাপ নেওয়ার নিয়ম হচ্ছে- (কাঁধের অর্ধেক ৮ ইঞ্চি + সেলাইয়ের জন্য বেশি নিতে হবে ১/২ ইঞ্চি)= মোট ৮১/২ ইঞ্চি৷
•এখন কাপড়ের ভাঁজলাইন থেকে চওড়ার দিকে ১১ ইঞ্চি মেপে দাগ দিতে হবে। এটা হল বুকলাইনের মাপ। এই কামিজের বুকের মাপ হচ্ছে ৩৬ ইঞ্চি যার ৪ ভাগের ১ ভাগ (ঌ ইঞ্চি + ঢিলা ১ ইঞ্চি + ১ ইঞ্চি সেলাই) = ১১ ইঞ্চি।
•তারপর একটি দাগ টেনে বুকলাইন ও কাঁধলাইন যোগ করতে হবে। এই ২টি দাগ যেখানে মিলেছে তার সামনের দিকে ১ ইঞ্চি মেপে একটি ছোট দাগ দিতে হবে।
•এবার বাঁকা করে কামিজের পিছনের বগলের ঘেরের মাপ হিসেবে দাগ দিতে হবে।
•একইভাবে কামিজের সামনের বগলের জন্য প্রথম বাঁকা দাগের পিছনের দিকে ১/২ ইঞ্চি মেপে বাঁকা করে দাগ দিতে হবে।
•এবার কোমরের সেপের জন্য মাপ নিতে হবে। এজন্য কাঁধ থেকে ঝুলের দিকে লম্বায় ১৪ ইঞ্চি ও চওড়ায় ৮ ইঞ্চি মেপে দাগ দিতে হবে।
•এবার হিপের সেপের জন্য কাঁধলাইন থেকে হিপ (কোমরের নিচের অংশ) পর্যন্ত ১২ ইঞ্চি লম্বা আর চওড়ায় ১০ ইঞ্চি মেপে দাগ দিতে হবে।
•তারপর কাঁধলাইন থেকে ঝুল পর্যন্ত লম্বায় ৪৮ ইঞ্চি আর কামিজের ঝুলের ঘেরের জন্য চওড়ায় ১১ ইঞ্চি মাপ নিয়ে দাগ দিতে হবে।
•এবার বগলের শেষ মাথা থেকে বুকের দাগ পর্যন্ত (যেখানে ৮ ইঞ্চি চওড়া মেপে দাগ দেওয়া হয়েছে) বাঁকাভাবে দাগ টেনে দিতে হবে।
•এরপর ঐ বাঁকা দাগের শেষ মাথা থেকে হিপ পর্যন্ত (যেখানে ১০ ইঞ্চি চওড়া মেপে দাগ দেওয়া হয়েছে) বাঁকাভাবে দাগ দিতে হবে।
•এরপর হিপ থেকে ঝুল পর্যন্ত (যেখানে ১১ ইঞ্চি চওড়া মেপে দাগ দেওয়া হয়েছে) দাগ দিতে হবে। এবার নিমার মত কামিজের পিছনের গলা, কাঁধলাইন ও বগল কাটতে হবে।
•এরপর বগল থেকে ঝুল পর্যন্ত দাগ অনুযায়ী কাটতে হবে।
•এই কামিজের দুইটি অংশ আছে। সেজন্য উপর থেকে দাগ দেওয়া কাপড়টি নিয়ে নিমার মত একইভাবে সামনের অংশের গলা ও বগল কাটতে হবে।
•কামিজ কাটার কাজ শেষ হবার পর কামিজের হাতার মাপ নিতে হবে। এজন্য অবশিষ্ট কাপড়টি ৪ ভাঁজ করতে হবে। এই কাপড় থেকে হাতার লম্বার মাপ  ১১ ইঞ্চি আর চওড়ার মাপ  ৮১/২ ইঞ্চি নিতে হবে।
•এবার হাতার বগল কাটার জন্য মাপ নিতে হবে। এজন্য কাপড়ের লম্বার দিক থেকে ৩১/২ ইঞ্চি মাপ নিয়ে দাগ দিতে হবে।
•এবার বগলের সেপের জন্য ছবির মত বাঁকা করে দাগ দিতে হবে।
•গলা ও বগলের মত হাতার সামনের অংশের জন্য পৌনে এক ইঞ্চি বেশি কাটতে হয়। সেজন্য ঐ বাঁকা দাগের মাঝখান থেকে পিছনের দিকে পৌনে এক ইঞ্চি মেপে ছোট দাগ দিয়ে তার উপর দিয়ে বাঁকা করে আরেকটি দাগ দিতে হবে।
•এবার ভাঁজলাইনের দিক থেকে হাতার ঘেরের জন্য ৬ ইঞ্চি মেপে দাগ দিতে হবে। এই কাপড়টি কাটলে দুটি হাতা পাওয়া যাবে।
•এবার কাপড়ের ভাঁজলাইনের দিক থেকে প্রথম বাঁকা দাগের উপর দিয়ে বগল কাটতে হবে।
•এরপর বগল থেকে হাতার মুহুরী পর্যন্ত দাগের উপর দিয়ে কাটতে হবে। এখানে দুটি হাতা একই সাথে আছে। এবার গলা ও বগলের অংশের মত দুই হাতার সামনের অংশ একইসাথে কাটতে হবে।

এবার কিভাবে কাপড়টি কামিজের মত করে সেলাই করতে হবে তা জানা দরকার। এজন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবেঃ
•প্রথমে কামিজের ২ কাঁধ ১/২ ইঞ্চি চওড়া করে সেলাই করতে হবে।
•এরপর ১/২ ইঞ্চি চওড়া করে কামিজের দুই পাশ সেলাই করতে হবে। কামিজের দুই পাশের যে অংশটুকু খোলা রাখতে চান ঐ অংশটুকু সেলাই ছাড়া রাখতে হবে।
•এবার কামিজের ২ হাতার মুহুরী সেলাই করতে হবে।
•কামিজের দুই হাতার লম্বার দিকে সেলাই করতে হবে।
•সেলাই করা কামিজটি হাত দুটোসহ সোজা করে নিতে হবে। কামিজের বগলের ভিতর দিয়ে হাতাটা এমনভাবে ঢুকিয়ে দিতে হবে যেন কামিজের বগলের উপর হাতার বগল থাকে। এরপর কামিজের বগলের সাথে হাতের বগল সেলাই করে জোড়া দিতে হবে।
•এরপর কামিজের হুক লাগাতে হয় অথবা হুক ছাড়াও রাখা যায়। হুক না দিলে কামিজের গলা দিয়ে মাথা ঢুকবে এরকম বড় গলা করতে হয়।
•এবার গলা সেলাইয়ের জন্য কোণাকুণিভাবে কয়েক টুকরা কাপড় কাটতে হবে। এই কাপড়ের টুকরাগুলো সেলাই করে জোড়া দিতে হবে।
•এরপর কামিজের গলার সাথে টুকরা কাপড় সেলাই করে জোড়া দিতে হবে। কামিজে নিচের ঘের বা মুহুরীও সেলাই করতে হবে।
•এরপর কমিজের দুই পাশে খোলা অংশটুকু ১ ইঞ্চি ভাঁজ করে সেলাই করতে হবে। এভাবেই ধাপে ধাপে কামিজটি তৈরি হয়ে যাবে ।

সুবিধার জন্য নানা বয়স অনুযায়ী কামিজের কয়েকটি সাইজের আদর্শ মাপ নিচে দেওয়া হলো –

কামিজ কাটিং ও সেলাই করার পদ্ধতি , জেনে নিন সবাই

Related Posts

তীব্র গরমে মাত্র ৫ মিনিটে ঘর ঠাণ্ডা করার সহজ কয়েকটি উপায়…

গরম থেকে বাঁচতে এখন এসির ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু নানা কারণে অনেকে এসি ব্যবহার করতে পারেন না। আবার গরমে দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তিতে ফেলেছে। ঘর ঠান্ডা রাখতে…

রান্নাকে সুস্বাদু করার সাতটি ম্যাজিক ট্রিক্স

রান্না একটি শিল্প৷ কিন্তু সবসময় নিপুন হয় না শিল্পকর্ম৷ ঠিক তেমনই রাঁধুনীও সব রান্না সবসময় সুস্বাদু করতে পারেন না৷ অথবা সবসময় মনোসংযোগ ঠিক হয় না৷ তার ফলে…

জানেন কি এইসব খাবার মাইক্রোওয়েভে গরম করলে বিপদ হতে পারে?

প্রতিদিন বাজার করে টাটকা খাবার খাওয়ার মতো সময় এখন আর আমাদের নেই। একবারে অনেক খাবার কিনে রেফ্রিজারেটরে রাখা আবার সেই খাবার রান্না করে ফ্রিজিং। তারপর যখন দরকার…

উৎসবে হোক স্বাস্থ্যকর রসনাবিলাস, জেনে নিন কিছু টিপস!

আসুন জেনে নিই সুস্থভাবে নির্বিঘ্নে উৎসব উদযাপন করার জন্য আপনার রসনাবিলাস কেমন হতে পারে সেই সংক্রান্ত কিছু দরকারি টিপস। ১) উপকরণ বাছাইয়ে সচেতন হোন মেন্যুটি যেন স্বাস্থ্যসম্মত…

তরমুজ মিষ্টি কিনা চিনবেন যেভাবে!

তরমুজ কিনতে গিয়ে ঠকে যান অনেকে। বুঝতে পারেন না কোনটি মিষ্টি ও খেতে সুস্বাদু তরমুজ। অনেক তরমুজ ফ্যাকাশে, খেতেও পানসে হয়।তাই দেখে শুনে তরমুজ কিনুন। আসুন জেনে…

খিচুড়ি ঝরঝরে করবেন যেভাবে

ভুনা খিচুড়ি রান্না করতে যা যা লাগবে ১) ১ কাপ বাসমতি চাল ২) আধা কাপ মুগডাল ৩) পাঁচফোড়ন ৪) আদা কুচি ৫) সয়াবিন তেল ৬) লবন ও…