আমরা যখন খারাপ অভ্যাস সম্পর্কে চিন্তা করি, তখন আমরা সাধারণত ধূমপান বা জাংক ফুড খাবার খাওয়ার কথা বলে থাকি, কিন্তু আমাদের এমন বেশ কিছু অভ্যাস রয়েছে যেগুলো আমরা বুঝতেও পারি না যে, সেগুলো আমাদের কতটা ক্ষতি করছে। আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসে আপনি ভালোর চেয়ে খারাপ অভ্যাসগুলো বেশি দেখতে পাবেন। চেক করে দেখুন তো আপনার দৈনন্দিন অভ্যাসগুলো কি কি?
আজকে আমরা এমন কতকগুলো দৈন্দদিন অভ্যাসের তালিকা সংগ্রহ করেছি, যে অভ্যাসের খারাপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনেকেই জানেন না।
১. পোশাক পরে ঘুমানো
জামা-কাপড় পরে ঘুমানো আসলেই ভালো আইডিয়া না। টাইট টী-শার্ট রক্ত সঞ্চালনকে প্রভাবিত করতে পারে এবং অবশেষে আপনার খুব গরম এবং অস্বস্তিবোধ লাগতে পারে। এমনকি আপনি জেগে না উঠলেও, এটি আপনার ঘুমের মানকে ডিস্টার্ব করতে পারে।
২. জোর দিয়ে ব্রাশ করা
এটা মনে হতে পারে যে, জোর দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে বেশি পরিষ্কার হবে, তবে এটা ঠিক নয়। বেশি জোর দিয়ে ব্রাশ করলে দাঁতের এনামেল এবং মাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাছাড়া টুথব্রাশের ব্রিসেলস যদি বেশি শক্ত হয় তাহলে তা দাঁত ও মাড়ির জন্য ক্ষতিকর।
৩. একসাথে একাধিক কাজ করা
সব নারীই একসাথে একাধিক কাজ করতে পারে এই ধারণা সম্পূর্ণরূপে সঠিক নয়। গবেষণা মতে, মাত্র ২% নারী সত্যিকারে এই ধরনের কাজ কার্যকরভাবে করতে পারে। তাই, আপনি যে ২% লোকের মধ্যে একজন তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত একসাথে একাধিক কাজ করার চেষ্টা করবেন না। যেসময় যে কাজটি করছেন সেদিকে আপনার মনোযোগ স্থির রাখুন এবং আপনি শীঘ্রই আপনার দক্ষতার উন্নতি লক্ষ্য করতে পারবেন।
৪. আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরের জিনিসের উপর নজর রাখা
অন্য ব্যক্তিরা কি করছে তা আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। আপনি যদি সেটি নিয়ে মাথা ঘামান, তারপরও সেটা পরিবর্তিত হবে না। তা আপনার মূল্যবান সময় এবং শক্তি নিজের উন্নতির জন্য ব্যবহার করুন। তাই বলে এটা মনে করবেন না যে, আমরা আপনাকে উদাসীন থাকতে বলছি না। আমরা এটা বুঝাতে চাচ্ছি যে, যেখানে আপনার নিয়ন্ত্রণ করার কোন ক্ষমতা থাকবে না সেই বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না।
৫. আক্রমণাত্মক
এটা হল পূর্ববর্তী পয়েন্টের পরের প্রতিক্রিয়া। অবিরত স্ট্রেসে থাকলে আপনি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারেন। কারণ স্ট্রেস হরমোন শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সব ধরনের জন্য দায়ী, যেমন- উদ্বেগ, বিষণ্ণতা, গ্যাস্টো সমস্যা এবং এমনকি হৃদরোগ।
৬. দীর্ঘসূত্রতা
সত্যি কথা বলতে, আমাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘসূত্রতায় অভ্যস্ত, অর্থাৎ দিনের কাজ দিনে না করে জমিয়ে রাখা, কিন্তু একসময় এই অভ্যাস আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আপনি আপনার নিজের প্রকল্প এবং কার্যভারগুলো সঠিক সময়ের আগে সম্পাদন করতে না পারলে আপনার কর্মক্ষেত্রে বা স্কুল কলেজে বড় সমস্যা হতে পারে।
৭. নেতিবাচক শারীরিক অঙ্গভঙ্গি
আমরা কমবেশ সবাই এই বাক্যটি শুনেছি যে, ‘প্রচ্ছদ দেখে একটি বই বিচার করবেন না’, কিন্তু বাস্তব জীবনে আমরা চোখে যা দেখি তাই বিশ্বাস করি। আসলে, বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করনে যে আমাদের অধিকাংশ যোগাযোগ শারীরিক অঙ্গভঙ্গির উপর নির্ভর করে। তাই নিজেকে বিশ্লেষণ করুন এবং আপনার কোন নেতিবাচক শারীরিক অঙ্গভঙ্গি করার অভ্যাস লক্ষ্য করেন (যেগুলো ভুল ব্যাখ্যা করা যেতে পারে) তাহলে সেগুলো সক্রিয়ভাবে নির্মূল করার জন্য চেষ্টা করুন।
৮. সবসময় ব্যথার ওষুধ খাওয়া
ব্যথা হলে অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পেইনকিলার (ব্যথার ওষুধ) খেয়ে থাকেন। যা কখনোই করা উচিত নয়। কারণ ব্যথার ওষুধের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। সেইসাথে একটু ব্যথাতে বারবার ওষুধ খেলে শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং কিছু পেইনকিলারের অপব্যবহারে আলসার এবং অভ্যন্তরীণ রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
৯. প্রতিদিন হাইহিল বা ফ্লিপ-ফ্লপ পরা
হাইহিল দেখতে দারুণ লাগে, পা লম্বা দেখায় এবং আপনাকে সুন্দর ও মার্জিত মনে হয়। একারণে ফ্যাশন জগতে মেয়েদের কাছে হাই হিল জুতা খুবই জনপ্রিয়। কিন্তু প্রতিদিন হাইহিল পরলে মেয়েদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এটা পরলে গোড়ালি দুটোতে যে চাপ পড়ে যার কারণে হাঁটু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়াও হাইহিল পরে হাতলে মেয়েদের কোমর ও হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে অতিরিক ওজন বহন করার মতো চাপ পড়ে এবং এতে অস্টিও আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
১০. সকালের নাস্তায় স্মুদি
অনেকেই মনে করেন যে, সকালের নাস্তায় স্মুদি রাখা স্বাস্থ্যকর। কিন্তু পুষ্টিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, সাধারণ স্মুদি রেসিপিগুলতে প্রধানত ফল, পানি এবং বাদামি দুধ থাকে, অর্থাৎ সেখানে বেশি পরিমাণ চিনি রয়েছে। ফল স্বাস্থ্যের জন্য ভাল হলেও, একসাথে প্রচুর পরিমাণে খেলে সেটা রক্তে সুগারের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে তুলে। এক কথায় ওজন বৃদ্ধি করে।