অবিশ্বাস্য রূপান্তর ঘটে গিয়েছে স্বপ্নার। কুৎসিত তিনি কোনও দিনই ছিলেন না। কিন্তু এখন তিনি রীতিমতো আকর্ষণীয়া তন্বী। নিজের ওজন কমানোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এখন অন্য মেদসম্পন্ন মানুষদেরও রোগা হওয়ার পরামর্শ ও ট্রেনিং দিচ্ছেন।
স্থূলতার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র দাবি অনুযায়ী, সারা পৃথিবীতে ১৫০ কোটি মানুষ বর্তমানে স্থূলতার সমস্যায় ভুগছেন। নানা শারীরিক সমস্যার জন্ম দেয় অতিরিক্ত ওজন। সেই কারণে অতিরিক্ত মেদ শরীর থেকে ঝরিয়ে ফেলতে চান অনেকেই।
কিন্তু সবার পক্ষে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ সংকল্প ও সদিচ্ছা থাকলে নিজের শরীরের আমূল পরিবর্তন যে সম্ভব, তা হাতে নাতে প্রমাণ করে দিয়েছেন স্বপ্না ব্যাস প্যাটেল নামের এক তরুণী। এক বছরে মোট ৩৩ কেজি ওজন কমিয়ে তিনি চমকে দিয়েছেন সকলকে।
স্বপ্না নিজেও একজন ফিটনেস ট্রেনার। রিবক সার্টিফায়েড ফিটনেস প্রফেসনাল তিনি। বর্তমানে তিনি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট-এ পিএইচডি গবেষণা চালাচ্ছেন। নিজের শরীরের এই আশ্চর্য রূপান্তরের কাহিনি স্বপ্না নিজেই জানিয়েছেন তাঁর ব্লগে। জানিয়েছেন, ‘‘আমার মোটা শরীর নিয়ে আমার কোনও অভিযোগ ছিল না। সব রকম পোশাক আমাকে মানাত না ঠিকই, কিন্তু সেই নিয়ে কোনও দিন মন খারাপ করিনি।
আত্মীয় বন্ধুরা আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করত, সেটা খারাপ লাগত, কিন্তু বিষয়টাকে আমল দিতে চাইতাম না। তবে বড়সড় চেহারার কারণে আমাকে বয়সের তুলনায় অনেক বেশি বয়স্ক দেখাত। একবার মনে আছে, আমার তিন বছরের ভাইঝিকে নিয়ে বেরিয়েছি, একজন রাস্তায় আমায় দেখে বলল, ‘আপনার বাচ্চাটা খুব মিষ্টি’। অথচ আমার বয়স তখন মাত্র ১৯। ঘটনাটা খুব আঘাত দিয়েছিল আমায়। সেই সময়েই স্থির করি, নাঃ, এবার ওজন কমানোর ব্যাপারে আমাকে সচেষ্ট হতেই হবে।’’
তবে ওজন কমানোর রাস্তাটা মসৃণ ছিল না মোটেই। ‘প্রথমে আমি ডায়েট কন্ট্রোল করা শুরু করি। কিছুটা ওজন তাতে কমে ঠিকই, কিন্তু সারাদিন তখন আমার খিদে পেত। দেখলাম, এভাবে হবে না। দেহের পুষ্টি, ব্যায়াম ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। তারপর থেকে দিনে এক ঘন্টা হাঁটা আর ওজন নিয়ে ব্যয়াম করতাম। প্রতি দু’ ঘন্টা অন্তর খেতাম। কিন্তু কী খাচ্ছি এবং কতটা খাচ্ছি, সেদিকে থাকত কড়া নজর। খুব ভেবেচিন্তে খাবার নির্বাচন করতাম সেই সময়ে,’ জানাচ্ছেন স্বপ্না।
যথাযথ ডায়েট ও নিয়মিত ওয়ার্ক আউটের ফলে দ্রুত কমতে থাকে স্বপ্নার ওজন। স্বপ্না বলছেন, ‘ওজন যত কমছিল, তত বাড়ছিল আমার আত্মবিশ্বাস।’ ফ্যাট রিডাকশন এবং বডি স্কাল্পটিং-এর দিকেও নজর রেখেছিলেন স্বপ্না। ‘আর সেই কারণেই আমার শরীরে কোনও স্ট্রেচ মার্ক, কালো দাগ, কিংবা আলগা চামড়ার মতো সমস্যা নেই,’ জানালেন স্বপ্না।
কিন্তু ঠিক কতটা ওজন কমেছে স্বপ্নার? তিনি জানালেন, ‘বছর খানেক আগে আমার ওজন ছিল ৮৬ কেজি। আর এখন আমার ওজন ৫৩ কেজি। অর্থাৎ এক বছরে মোট ৩৩ কেজি ওজন কমেছে আমার।’
প্রায় অবিশ্বাস্য রূপান্তর ঘটে গিয়েছে স্বপ্নার। কুৎসিত তিনি কোনও দিনই ছিলেন না। কিন্তু এখন তিনি রীতিমতো আকর্ষণীয়া তন্বী। নিজের ওজন কমানোর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এখন অন্য মেদসম্পন্ন মানুষদেরও রোগা হওয়ার পরামর্শ ও ট্রেনিং দিচ্ছেন। মোটা মানুষরাও চোখের সামনে স্বপ্নাকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। দৃঢ় সংকল্পের সাহায্যে কীভাবে নিজেকে আমূল বদলে ফেলা যায় তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ যে স্বপ্না।