পেঁপের শক্তি নিয়ে কোনও সন্দেহ কারও মেন আছে বলে তো মনে হয় না।তাই তো আজ ফলকে নিয়ে নয়, তার এক অন্তরঙ্গ সঙ্গীর বিষয়ে আলোচনা করা হবে এই প্রবন্ধে, যে সঙ্গী থাকে লোক চক্ষুর আড়ালে, যার নাম-ইজ্জত নেই।
তবু সে লড়াই চালায় হাজারো রোগের বিরুদ্ধে।
একাদিক গবেষণায় দেখা গেছে শুধু ডেঙ্গু ভাইরাসকে মারতেই নয়, একাধিক রোগকে দূরে রাখতেও পেঁপে পাতার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এখনও বহু মানুষ এই প্রকৃতিক উপাদানটির গুণাগুণ নিয়ে খোঁজ রাখেন না। তাই তো এই প্রবন্ধটি লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া।
“হিলিং ফুড” নামক এক বইযে পেঁপের পাতার বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক বলছেন,হজম ক্ষমতার উন্নতির পাশাপাশি শরীরকে সব দিক থেকে বাঁচাতে বাস্তবিকই পেঁপে পাতা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।এখানেই শেষ নয়, এর অন্দরে থাকা একাধিক ভিটামিন শরীরের গঠনেও নিজের খেল দেখিয়ে থাকে।
এবার নিশ্চয় বুঝেছেন, যাকে আমরা সব থেকে বেশি তাচ্ছিল্য করে থাকি, সেই প্রকৃতিক উপাদানটির ক্ষমতা কতটা!
তবে লিস্টটা এখানেই শেষ হয়ে যায় না।পেঁপে পাতা আরও নানাভাবে শরীরের উপকারে লেগে থাকে।
১. ডেঙ্গু রোগকে দূরে রাখে:
একাধিক গবেষণাতে একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে নিয়মিত পেতে পাঁতার রস খেলে শরীরে প্লেটলেট কাউন্ট কমে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাও খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
আর একবার ইউমিন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে উঠলে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাই একেবারে থাকে না বললেই চলে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে যে হারে কলকাতা সহ সমগ্র রাজ্য়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে, তাতে এই প্রকৃতিক উপাদানটিকে কাজে লাগানোর
প্রয়োজনীয়তা যে আরও বেড়েছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
২. ম্যালেরিয়া রোগকে প্রতিরোধ করে:
পেঁপে পাতার অন্দরে মজুত অ্যাসেটোজেনিন নামক অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল প্রপাটিজ শরীরে
প্রবেশ করার পর ভেতর থেকে শরীরকে এতটা শক্তিশালী করে তোলে যে ম্যালেরিয়া মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
তাই মশার উপদ্রোপ থেকে বাঁচতে পেঁপে পাতার সঙ্গ ছাড়লে চলবে না কিন্তু!
৩. লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়:
বেশ কিছু কেস স্টাডি করে দেখা গেছে পেঁপে পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান লিভারের অন্দরে থাকা টক্সিক উপাদানদের শরীরে থেকে বের করে দেয়।
সেই সঙ্গে লিভারের কর্মক্ষমতা এতটা বাড়িয়ে দেয় যে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়।
প্রসঙ্গত, জন্ডিস রোগকে দূরে রাখতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়:
পেঁপে পাতায় থাকা প্রোটিস এবং অ্যামিলেস নামক দুটি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর হজমে সহায়ক পাচক রসের ক্ষরণ এতটা বাড়িয়ে দেয় যে হজম ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে।
সেই সঙ্গে পাকস্থলি এবং কোলনের প্রদাহ কমানোর মধ্যে দিয়ে সার্বিকভাবে বাওয়েল মুভমেন্টের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
প্রসঙ্গত, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত পেঁপে পাতার রস পান করেল এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়ারা মারা পরে।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই পেপটিক আলসারের মতো রোগ আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়।
৫. ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে:
রক্তে বাড়তে থাকা সুগারের কারণে কি চিন্তায় রয়েছেন? তাহলে আজ থেকেই নিয়মিত পেঁপে পাতা খাওয়া শুরু করুন।
দেখবেন উপকার মিলবে। কারণ এর মধ্যে থাকা বেশ কিছু উপকারি উপাদান ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।
ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেহে শর্করার মাত্রা বাড়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না।
৬. পিরিয়োডের কষ্ট দূর করে:
এবার থেকে মাসের এই বিশেষ কয়েকটা দিনে নিয়ম করে পেঁপে পাতার রস খাওয়া শুরু করুন। দেখেন ক্র্যাম্প এবং যন্ত্রণা দুইই কমবে।
আসলে পেঁপে পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি প্রপাটিজ একদিকে যেমন দেহের অন্দরে প্রদাহ কমিয়ে যন্ত্রণার প্রকোপ কমায়, তেমনি অন্যদিকে হরমোনাল ইমব্যালেন্স দূর করে অন্যান্য নানাবিধ সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল এমন একটি উপাদান, যা শরীরে থেকে টক্সিক উপাদানদের বের করে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমায়।
আর এই উপাদানটি প্রচুর মাত্রায় মজুত রয়েছে পেঁপে পাতার অন্দরে।
তাই নিয়মিত যদি এর রস খেতে পারেন, তাহলে ক্যান্সার রোগকে কোনও দুশ্চিন্তাই থাকে না।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে পেঁপে পাতায় উপস্থিত বেশ কিছু এনজাইম লিভার, লং, প্যানক্রিয়াটিক এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।