মুনজের আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য থেকে : ৩৬ বছর আগে এক ব্রিটিশ তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ছওয়াব আলী। বছর দুয়েক পর তাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেলেও এরই মধ্যে এই দম্পতির কোল আলো করে জন্ম নেয় সন্তান জেইমি। কিন্তু ভাগ্যের বিড়ম্বনার শিকার ছওয়াব আলীকে জেল খাটতে হয় ছয় বছর।
হারিয়ে ফেলেন স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ। এরপর আর ছেলের দেখা পাননি ছওয়াব আলী। বাবার সন্ধান করতে করতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে এসে জেইমি খোঁজ পান বাবার স্বজনদের। আর তারই সূত্র ধরে ৩৫ বছর পর বাবা-ছেলের মিলনের সাক্ষী হলো যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিমানবন্দর।
গল্পের মতো এই ঘটনা ঘটেছে গত মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি)। এদিন মা অ্যানকে নিয়ে ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে হাজির হন জেইমি। আগে থেকেই খবর পাওয়া ছওয়াব আলীও হাজির হয়েছিলেন ছেলেকে স্বাগত জানাতে। সেখানেই ৩৫ বছর পর মিলন ঘটলো বাবা-ছেলের।
ছওয়াব আলীর চাচাত ভাই মো. আবদুর রউফ জানান, লন্ডনে ব্রিটিশ শ্বেতাঙ্গ তরুণী অ্যান জোলিকে ৩৬ বছর আগে বিয়ে করেন ছওয়াব আলী। এক বছর পর জোলির কোলজুড়ে আসে জেইমি। বছরখানেক পর অবশ্য অ্যানের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে ছওয়াব আলীর। পরে কারাবরণ করতে হয় তাকে। স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে তার আর কোনও যোগাযোগ ছিল না।
এদিকে, বিচ্ছেদের পর ছেলেকে নিয়ে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারে স্থায়ী হন অ্যান। জেইমিও বেড়ে উঠতে থাকে বাবার সহচর্য ছাড়াই। মায়ের কাছে বাবার সন্ধানও পায়নি কিশোর জেইমি। পরে উচ্চ শিক্ষা নিতে অস্ট্রেলিয়ায় ঠাঁই হয় জেইমির। পড়ালেখা শেষ করে সেখানেই কর্মরত তিনি।
ছোটবেলা থেকেই বাবাকে কাছে না পেলেও বাবার সন্ধান চালিয়ে যেতে থাকেন জেইমি। যখন জানতে পারেন, তার বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, শেষ পর্যন্ত তিনি বছরখানেক আগে বাংলাদেশেই চলে আসেন।
আবদুর রউফ জানান, সুনামগঞ্জের ছাতকে গিয়ে বাবা ছওয়াব আলীর আত্মীয়-স্বজনদের খুঁজে পান জেইমি। তার মধ্যে আশার সঞ্চার হয়, হয়তো বাবাকে খুঁজে পাবেন। স্বজনদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন বাবার বিভিন্ন তথ্য। জানতে পারেন, তার বাবা এখন বসবাস করছেন যুক্তরাজ্যের রচডেলে।
ছওয়াব আলীর ভাতিজা কাপ্তান মিয়া জানান, অবশেষে বাবা-ছেলের মধ্যে যোগাযোগ হয় গত সপ্তাহে। তারই সূত্র ধরে মা অ্যান জোলি আর ভাই জ্যাসনকে নিয়ে জেইমি ম্যানচেস্টারে যাবেন বলে জানান। গত মঙ্গলবার তারা পৌঁছান ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে। এসময় ছওয়াব আলী ও রচডেলে থাকা তার আত্মীয়-স্বজনরা জেইমি-অ্যানকে স্বাগত জানাতে হাজির হন বিমানবন্দরে।
কাপ্তান মিয়া বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাবা-ছেলের মিলনের মুহূর্তটি ছিল অত্যন্ত আবেগঘন। বাবাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে জেইমি তাকে জড়িয়ে ধরে। অনেকক্ষণ ধরে তারা কেউ কথাই বলতে পারছিলেন না। দু’জনের চোখের জলেই যেন সব কথা হয়ে যাচ্ছিল। পাশে দাঁড়ানো জেইমির মা ও ভাইয়ের চোখেও তখন ছিল অশ্রু।
আবেগ সম্বরণ করে জেইমি বলেন, ‘বাবা আর পরিবারের আপনজনদের কাছে পেয়ে আমি আপ্লুত। আর কখনও আমি আমার বাবাকে হারাতে চাই না।’
অ্যানের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আর সংসারমুখী হননি ছওয়াব আলী। ছেলেকে কাছে পেয়ে একাকী-নিঃসঙ্গ জীবন কাটানো ছওয়াব আলীর মুখেও ভাষা নেই। তিনি বললেন, ‘অ্যানের সঙ্গে আমার যখন বিচ্ছেদ হয়, জেইমির বয়স তখন মাত্র তিন মাস। এরপর ছয় বছর জেল আমার জীবনকে এলোমেলো করে দেয়। আজ ৩৫ বছর পর সন্তানকে কাছে পেয়ে আমি বাকরুদ্ধ, হতবিহ্বল।’ বাংলা ট্রিবিউন
সূত্রঃ এমটিনিউজ