এখনকার সময়ে হৃদযন্ত্রের সমস্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিভিন্ন কারণে। যার মাঝে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপযুক্ত জীবন-যাপন, অনিয়ম, শরীরচর্চার অভাব প্রভৃতি সমস্যাগুলোকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গবেষণা মতে, যদি কেউ স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা শুরু করে তবে তার হৃদযন্ত্রের সমস্যা যেমন: হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক থেকে মারা যাবার ঝুঁকি কমে যায় শতকরা ৩৫ শতাংশ।
একইসাথে হার্টফেইল এর সম্ভবনা কমে যায় ২৮ শতাংশ। গবেষণা থেকে আরো দেখা গেছে, সঠিক ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দেবার সম্ভবনা কমে যায় প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত! অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস থেকে উচ্চ কোলেস্টেরল এর সমস্যা এবং উচ্চরক্ত চাপ এর সমস্যাও দেখা দিয়ে থাকে।
শুধুমাত্র শরীরচর্চা করাই হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ, অস্বাস্থ্যকর ও অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস শরীরের উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে তাদের ক্ষতিকর উপাদানের মাধ্যমে। খাদ্যাভ্যাসে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন এবং নিয়ম এনে দিতে পারে সুস্থ হৃদযন্ত্রের বার্তা। আজকের ফিচারে এমন কিছু স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদানের নাম তুলে ধরা হলো, যা হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
ওটস
ওটসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় আঁশ। যা কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। পরিপাক তন্ত্রে এটা অনেকটাই স্পঞ্জের মতো কাজ করে সকল ক্ষতিকর কোলেস্টেরল শোষণ করে নেয়। যার ফলে, রক্তের সাথে কোলেস্টেরল মিশে যাওয়ার সুযোগ পায় না এবং রক্তনালী একদম সুস্থ থাকে। রক্ত চলাচল ব্যহত হয় না বলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াও সচল থাকে এবং সুস্থ থাকে।
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেট হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী হিসেবে বিশেষ পরিচিত। প্রতিদিন স্বল্প মাত্রায় দার্ক চকলেট গ্রহণে হার্ট-অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়। ডার্ক চকলেটে থাকে ফ্ল্যাভনয়েডস। যা রক্তচাপ কমাতে এবং প্রদাহ কমাতে কাজ করে থাকে।
সাইট্রাস ফল
যারা উচ্চ ফ্ল্যাভনয়েডযুক্ত ফল গ্রহন করে থাকেন তাদের স্ট্রোক হবার সম্ভবনা ১৯ শতাংশ কমে যায়। কমলালেবু এবং আঙ্গুর ফলে রয়েছে উচ্চমাত্রায় ফ্ল্যাভনয়েড। এছাড়া রয়েছে ভিটামিন-সি যা হৃদযন্ত্রের সমস্যা কমাতে কার্যকরি।
সয়া
বিভিন্ন ধরণের সয়া খাদ্য উপাদান, যেমন: সয়ামিল্ক হলো প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে স্বাস্থ্যকর প্রোটিন এর অন্যতম উপকারী উৎস। এতে রয়েছে অনেক উচ্চ মাত্রায় পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, আঁশ, মিটামিন সমূহ এবং মিনারেল সমূহ। একইসাথে যারা প্রতিদিন কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করেন, তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে সাহায্য করে সয়া।
বাদাম
কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা বাদামের মতো বাদাম প্রজাতির খাদ্য হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এতে রয়েছে ভিটামিন-ই। যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া, এই সকম বাদামে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা হৃদযন্ত্রের সমস্যা কমাতে কার্যকরি।
আলু
আলু হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম। যা রক্তচাপ কমাতে কাজ করে থাকে। এছাড়া, আলুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ। যা হৃদযন্ত্রের সমস্যা কমাতে কার্যকরি। তবে চেষ্টা করতে হবে ডুবো তেলে ভাজা আলু গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য। কারণ, এতে হিতে বিপরীত ফল দেখা দিয়ে থাকে।
টমেটো
স্বাস্থ্যকর পটাসিয়ামে পূর্ণ হলো প্রাকৃতিক উপাদান টমেটো। এতে রয়েছে লাইকোপেন নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থেকে রক্ষা করে এবং রক্তনালীকাকে প্রশস্ত রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়। এছাড়াও, টমেটো তে চিনি ও ক্যালোরির মাত্রা খুব কম হওয়ায় হৃদরোগের রোগীদের জন্য এটা দারুণ একটি খাদ্য উপাদান।
সবুজ শাক-সবজী
যে কোন ধরণের সবুজ শাক-সবজী সুস্থ হৃদযন্ত্রের জন্য দারুণ প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। বিশেষ করে সবুজ যেকোন শাক ফ্যাট কমানো ও ক্যালোরি কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপকারী। কারণ, সকল ধরণের শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় আঁশ। যা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া সচল রাখতে সাহায্য করে।
অলিভ অয়েল
অলিভ অয়েল কে বলা হয়ে থাকে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক তেল। প্রাত্যহিক খাদ্যাভ্যাসে অলিভ অয়েল গ্রহণের ফলে কোলেস্টেরল এবং মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এর মাত্রা কমে যায়। যা হৃদযন্ত্রের উপরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আপেল
চমৎকার ফল আপেলে রয়েছে কোয়েরসেটিন। যেটা এক ধরণের ফটোকেমিক্যাল উপাদান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রদাহ-বিরোধী উপাদান। যা রক্ত জমাট বাঁধা হতে প্রতিহত করে থাকে। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় একটি করে আপেল গ্রহণ হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।