ওজন কমানোর জন্য গলদঘর্ম হয়ে অনেককিছুই করি আমরা। কিন্তু খেয়াল রাখা দরকার সবচেয়ে সহজ করণীয়গুলো যেন ভুলে না যাই। আমাদের অনেকে ওজন কমাতে ব্যায়াম শুরু করেন, অনেকে শুরু করেন কঠোর ডায়েটিং।
নিয়মিত চর্চা করলে এমন অনেক কার্যকর উপায় তো আছেই। তবে, জীবনযাপনে সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলে আর কিছু বিষয় মেনে চললেও অনেক সহজেই কমানো যায় ওজন। আটপৌরে জীবনে মেনে চলার এমন সহজ সাতটি বিষয় তুলে ধরা হলো এখানে। একদম শেষে বোনাস হিসাবে রয়েছে যারা ভাত খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য ডায়েট প্ল্যান।
১. স্বাস্থ্যকর খাবার খান
খাদ্যাভ্যাসের প্রধান হিসেবটা হয়ে উঠুক স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি মনোযোগ বাড়ানো। ওজন কমাতে ভালো মতো সকালের নাস্তা খাওয়া খুবই জরুরি। খালিপেটে কুসুম গরম পানিতে লেবু ও মধু মিলিয়ে পান করতে পারেন। ১০.৩০ থেকে ১১টা অর্থাৎ মধ্য সকালে হালকা কোনো খাবার গ্রহণ করুন যেমন ফল/ লেবু দিয়ে রঙ চা/ ডাবের পানি/ শশা/ গ্রিন টি ইত্যাদি। দুপুরে ১-১.৩০টার মধ্যে মধ্যাহ্ন ভোজ শেষ করুন, মেন্যুতে রাখুন অল্প ভাত বা রুটি/ সালাদ/ শাক/ সবজি/ মাছ। বিকালে ৪-৫টার মধ্যে আরেকটি খাবার খাবেন, যা খুবই হালকা হবে, যেমন- বাদাম/ গ্রিন টি/ সুগার ছাড়া বিস্কুট/ ফল/ মাঠা। রাতের খাবার অল্প পরিমাণে খাবেন ৮-৮.৩০টার মধ্যে। রুটি/ সবজি/ মুরগি বা মাছ খেতে পারেন। শোবার আগে টকদই বা ফ্যাট ফ্রি দুধ পান করুন।
২. বেশি বেশি শাকসবজি
ওজন কমানোর প্রসঙ্গ এলে প্রথম চিন্তা হয়ে দাঁড়ায় কী কী খাওয়া যাবে না। বরং ভাবুন কী কী খাবেন। দিনের খাদ্যতালিকায় সবজির পরিমাণ বাড়ান। সকাল-দুপুর-রাত তিন বেলাতেই কিছু না কিছু সবজি রাখুন। যতটা সম্ভব নানা রঙের শাক ও সবজি খান, কেননা একেক রঙের সবজি একেকটা খাদ্যগুণে সমৃদ্ধ। বেশি করে শাকসবজি খাওয়া ওজন কমানোর খুবই কার্যকর একটা উপায়। শাকসবজি মেদ না বাড়ানোর পাশাপাশি দেহকে সুস্থ ও সবল রাখে এবং শক্তি জোগায়।
৩. প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ
নানা রকম বাহারি প্যাকেটজাত খাবার-দাবারের চটকদার বিজ্ঞাপনে ভুলবেন না। ফ্যাট-ফ্রি, লো-ফ্যাট, সুগার-ফ্রি জাতীয় তকমা দেওয়া প্রক্রিয়াজাত খাবারের সমস্যা দুটো—দীর্ঘদিন রাখার জন্য নানা ধরনের প্রিজারভেটিভ দেওয়া এবং কৃত্রিম চিনিসহ নানা কৃত্রিম উপাদানের ব্যবহার। রান্না করা তাজা খাবার না খেয়ে প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়ে বেশি বেশি কেমিক্যাল শরীরে ঢোকানোর কোনো মানে হয় না। এসব খাবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
৪. চিনি খাওয়া ছাড়ুন
ওজন কমাতে চাইলে নিশ্চিত করুন যে, আপনি খাবারদাবারে বাড়তি চিনি মেশাচ্ছেন না এবং কোনো রকম কৃত্রিম চিনিও খাচ্ছেন না। এক টেবিল চামচ চিনিতে ক্যালরির পরিমাণ ১৬ এবং তা আপনার ধারণার চেয়েও দ্রুত গতিতে শরীরে কাজ করতে শুরু করে। খাদ্য তালিকায় চিনির পরিমাণ কমিয়ে আনুন এবং সম্ভব হলে বাড়তি চিনি যোগ করা পুরোপুরি ছেড়ে দিন।
৫. রাতে ঠিকঠাক ঘুমান
ঘুম বঞ্চিত হলে বা ঘুম ঠিকঠাক না হলে আপনার আর ওজন কমানো হচ্ছে না। প্রতিরাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারা আপনার শরীরে করটিসল হরমোনের মাত্রা কমাতে সহায়ক। করটিসলের মাত্রা বেশি হয়ে গেলে শরীর আরও চর্বিযুক্ত, লবণাক্ত এবং চিনিযুক্ত খাবার দাবারের জন্য নিশপিশ করতে থাকে। আর শরীরকে তৃপ্ত করতে সেগুলো খেতে থাকলে ওজন কমানোর দফা রফা। আপনি যতই ব্যস্ত থাকুন না কেন, প্রতি রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাসটা ঠিকঠাক রাখা খুবই জরুরি।
৬. অতিরিক্ত টিভি দেখার নেশা ছাড়ুন
অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখে সময় নষ্ট করার বদ-অভ্যাস থাকলে সেটা আজই বাদ দিন। টিভি না দেখে এমন অনেক কিছুই করার আছে, যা আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। যে সময়টা টিভি দেখে কাটাচ্ছেন, সে সময়টা বাড়িতে বা বাড়ির বাইরে বাচ্চাদের নিয়ে খেলুন। বাইরে হাঁটতে যান, খোলা বাতাসে থাকুন। প্রতিদিন কিছুটা হলেও শারীরিক পরিশ্রম হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন। বাইরে হোক বা ঘরে, শরীরটাকে ঠিকমতো নড়াচড়া করানো ওজন কমানোর জন্য তো বটেই, সুস্বাস্থ্যের জন্যও খুব প্রয়োজনীয়।
৭. সঠিক ব্যায়াম
ব্যায়াম সম্পর্কে দুটো সম্পূর্ণ ভুল ধারণা আছে। প্রথমটি, অনেকেই ভাবেন ব্যায়াম একটা করলেই হয়। সে হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার—যা-ই হোক। দ্বিতীয়ত, ব্যায়াম করে ওজন কমালে সহজে সেই ওজন আর বাড়বে না। এই দুটো ধারণাই ভুল। একবার ব্যায়াম করে সেটি ছেড়ে ইচ্ছেমতো খেলে ওজন বাড়বে। আর যেকোনো ধরনের ব্যায়াম করলেই ওজন কমবে ব্যাপারটি এমনও নয়। আপনার ওজন, শারীরিক গঠন, ওজন আর সুস্থতার ওপর নির্ভর করছে কী ধরনের ব্যায়াম করলে ওজন কমবে এবং কমে যাওয়ার পর কী করতে হবে।
বোনাস: ডায়েট প্ল্যান-যারা ভাত খেতে পছন্দ করেন
অনেকেই আছেন যারা ভাবেন ভাত খেয়ে ওজন কমানো যায় না। কথাটি সম্পূর্ণ ভুল। পরিমিত পরিমাণ ভাত ওজন কমাতে বেশ সহায়ক। নিয়ম করে রাতের বেলা এই চার্ট-টি অনুসরণ করেই দেখুন ওজন কমে কিনা!
১ কাপ ভাত: ভাতের পরিমাণ ১ কাপই হতে হবে। কোনো ভাবেই এর চাইতে বেশী নয়।
১ টুকরো মাছ/ মাংস: মাঝারি আকৃতির এক টুকরো মাছ/মাংস শরীরের আমিষের চাহিদা পূরণ করবে।
১ কাপ সবজি: কম তেলে বা তেলবিহীন সবজিভাজি ফ্যাট অনেকাংশে কমায়। ১ কাপ পরিমাণ সবজি অবশ্যই ডায়েট চার্ট-এ রাখবেন। সবচাইতে ভালো হয় কাঁচা সবজির সালাদ রাখলে।
১ কাপ ডাল: ডাল ফ্যাট কাটতে সহায়তা করে। পাশাপাশি পুষ্টি যোগায় শরীরে।
দই: ১ কাপ টক দই। এটা খাবার হজমে সাহায্য করবে।