রোজার দিনে ইফতারি মানেই হরেক রকমের খাবারের সমাহার। প্রতিদিনের ইফতারির মেন্যুতে থাকা চাই ভিন্নতা। বুট, পেয়াজু আর বেগুনী তো অত্যাবশ্যকীয়, ইফতারিতে “মাস্ট বি থাকা চাই” আইটেম। এর পাশাপাশি থাকতে হবে নানা পদের খাবার।
আমরা সকলেই জানি, বাইরের খাবার খাওয়া খুব একটা স্বাস্থ্যসম্মত না। আর রোজার দিনে আমাদের খাবার দাবারের ব্যাপারে একটু বেশিই সতর্ক থাকতে হয়। তাই রোজার দিনে আমরা চেষ্টা করি ইফতারির খাবারগুলো ঘরে বানানোর। ঘরেই থাকে এমন সব উপকরণ নিয়ে আমি আজকে আপনাদের সাথে ছয়টি রেসিপি শেয়ার করব। আশা করি সবার কাজে আসবে।
আসুন জেনে নেই রেসিপিগুলো-
প্রণ বল
উপকরণঃ
১. পাউরুটি – ৬/৭ স্লাইস
২. ডিম – ১ টি
৩. চিংড়ি – ২৫০ গ্রাম
৪. ধনেপাতা কুচি – পরিমাণ মত
৫. পিঁয়াজ কুচি – ১/৪ কাপ
৬. কাঁচামরিচ কুচি – ১ টেবিল চামচ
৭. আদা বাটা – ১/২ চা চামচ
৮. রসুন বাটা – ১/২ চা চামচ
৯. লবণ – পরিমাণ মত
১০. ধনে গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
১১. জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
১২. তেল – পরিমাণ মত
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমে পাউরুটির টুকরোগুলোকে ছোট ছোট কিউব করে কাটতে হবে। এরপর একটি পাত্রে একে একে পিঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ কুচি, ধনেপাতা কুচি, আদা বাটা, রসুন বাটা, লবণ, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া দিয়ে, একসাথে সব মেখে নিতে হবে ভালো করে। এরপর ডিম এবং খোসা ছাড়ানো চিংড়িগুলোকে মিশ্রণের সাথে যোগ করতে হবে। কিছুক্ষণ (১৫ মিনিট) ঢেকে রেখে দিতে হবে। এরপর কিউব করে কাটা কিছু পাউরুটি হাতে নিয়ে এর ওপর কিছুটা মিশ্রণ নিয়ে এর ওপর আবার কিছু পাউরুটির টুকরো দিয়ে বলের আকার দিতে হবে। পাউরুটিগুলোকে ভালো করে চেপে চেপে গোল করতে হবে, নাহলে তেলে ছাড়লে ছড়িয়ে যাবে। এরপর তেল গরম করে হালকা আঁচে বলগুলি ভাজতে হবে। জ্বালের ব্যাপারে একটু সতর্ক থাকতে হবে যেন তেল খুব বেশি গরম না হয়ে যায়। নয়ত ভেতরের চিংড়ি সিদ্ধ হবে না। লাল লাল রঙের হয়ে আসলে নামিয়ে ফেলতে হবে।
ব্যাস তৈরি হয়ে গেল প্রণ বল। টমেটো সস বা হোয়াইট সসের সাথে গরম গরম পরিবেশন করুন।
ধনেপাতার বড়া
উপকরণঃ
১. ধনেপাতা পাতা – ১ আঁটি
২. বেসন – ১ কাপ
৩. কর্ণফ্লাওয়ার – ১/২ কাপ
৪. আদা বাটা – ১/২ চা চামচ
৫. রসুন বাটা – ১/২ চা চামচ
৬. লবণ – পরিমাণ মত
৭. মরিচ গুঁড়া – ১ টেবিল চামচ
৮. ধনে গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
৯. জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
১০.গোলমরিচ গুঁড়া – সামান্য
১১. জাফরান রং – এক চিমটি
১২. তেল – পরিমাণ মত
১৩. পানি – পরিমাণ মত
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমে একটি পাত্রে বেসন, কর্ণফ্লাওয়ার, আদা বাটা, রসুন বাটা, লবণ, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, গোলমরিচ গুঁড়া, জাফরান রং সব একসাথে নিতে হবে। এরপর পরিমাণমত পানি মিশিয়ে একটি ঘন গোলা বানাতে হবে। ধনেপাতাগুলো ভালো করে ধুয়ে (গোড়ার দিকটা কেটে ফেলতে হবে) পানি শুকিয়ে নিতে হবে। পাত্রে তেল দিয়ে গরম করে নিতে হবে। এরপর একটি ধনে পাতার ডাল নিয়ে গোলায় চুবিয়ে তেলে ছাড়তে হবে। গাঢ় বাদামী রং হয়ে এলে নামিয়ে ফেলতে হবে। এভাবে বাকি ধনেপাতাগুলোও ভেজে ফেলতে হবে।
গরম গরম মুচমুচে ধনেপাতার বড়া পরিবেশন করুন ইফতারের টেবিলে।
চিকেন কাটলেট
উপকরণঃ
১. মুরগীর বুকের মাংস – ১/২ কেজি
২. ব্রেড ক্রাম্ব – পরিমাণ মত
৩. টক দই – হাফ কাপ
৪. টমেটো সস – ২ টেবিল চামচ
৫ সয়া সস – ২ টেবিল চামচ
৬ চিলি সস – ২ টেবিল চামচ
৭ আদা বাটা – ১ চা চামচ
৮. রসুন বাটা – ১ চা চামচ
৯. লবণ – পরিমাণ মত
১০. মরিচ গুঁড়া – ২ টেবিল চামচ
১১. ধনে গুঁড়া – ১ চা চামচ
১২. জিরা গুঁড়া – ১ চা চামচ
১৩.গোলমরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
১৪. গরম মশলা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
১৫. ডিম – ১ টা
১৬. তেল – পরিমাণ মত
প্রস্তুত প্রণালীঃ
প্রথমে বুকের মাংস পাতলা স্লাইস করে কেটে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর এর মধ্যে টক দই, টমেটো সস, সয়া সস, চিলি সস, আদা বাটা, রসুন বাটা, লবণ, মরিচ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, গোলমরিচ গুঁড়া এবং গরম মশলা গুঁড়া একে একে দিয়ে দিতে হবে। সব উপকরণ দিয়ে মুরগীটা ভালো করে মেরিনেট করে ১ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে ডিম ভালো করে ফেটিয়ে নিতে হবে এবং অপর পাত্রে ব্রেডক্রাম্ব নিতে হবে। মুরগীর টুকরোগুলো ডিমে চুবিয়ে, ব্রেডক্রাম্বে গড়িয়ে নিতে হবে। একটি পাত্রে তেল দিয়ে, গরম হলে তাতে টুকরোগুলো ছেড়ে দিতে হবে, লাল রং ধারণ করলে নামিয়ে নিতে হবে। হয়ে গেল চিকেন কাটলেট।
ঝাল পিঠা
উপকরণঃ
১. চালের আটা – ১ কাপ
২. ডিম – ১টা
৩. মসুর ডাল বাটা – ১/৪ কাপ
৪. ধনেপাতা কুচি – ১ টেবিল চামচ
৫. পিঁয়াজ কুচি – দেড় টেবিল চামচ
৬. কাঁচামরিচ কুচি – পরিমাণ মত
৭. আদা বাটা – ১/২ চা চামচ
৮. রসুন বাটা – ১/২ চা চামচ
৯. লবণ – পরিমাণ মত
১০. ধনে গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
১২. জিরা গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
১৩. পানি – পরিমাণ মত
১৪. তেল – পরিমাণ মত
প্রস্তুত প্রণালীঃ
একটি পাত্রে প্রথমে পিঁয়াজ, মরিচ, ধনেপাতা, আদা বাটা, রসুন বাটা, লবণ, ধনে গুঁড়া এবং জিরা গুঁড়া দিয়ে ভালো করে মেখে নিতে হবে। এরপর মসুর ডাল বাটা এবং ডিম দিয়ে দিতে হবে। সবগুলো উপকরণ ভালো করে মেখে নিয়ে এর মধ্যে চালের আটা এবং পানি দিয়ে দিতে হবে। মিশ্রণটি খুব ঘন বা পাতলা করা যাবে না। এবার ফ্রাই প্যানে অল্প তেল দিয়ে তাতে পরিমাণ মত মিশ্রণটি দিয়ে ছড়িয়ে দিতে হবে। যেন ফ্রাই প্যানের পুরোটা জায়গায় ছড়িয়ে যায়। মচমচে হয়ে আসলে, তুলে নিতে হবে পিঠাগুলো। এভাবে বাকি মিশ্রণগুলো দিয়ে পিঠা বানিয়ে ফেলতে হবে।
সুজির বড়া
উপকরণঃ
১. সুজি – ২৫০ গ্রাম
২.ডিম – ১টা
৩. চিনি – পরিমাণ মত
প্রস্তুত প্রণালীঃ
সবগুলো উপকরণ একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে চিনিটা যেন সম্পূর্ণ গলে যায়। এরপর ফ্রাই প্যানে তেল দিয়ে অল্প আঁচে রাখতে হবে। সুজির মিশ্রণ থেকে অল্প অল্প করে নিয়ে বড়ার আকারে তেলে ছাড়তে হবে। প্রথমে অনেকটা নরম থাকবে, পুরোপুরি ভাজা হয়ে গেলে শক্ত হয়ে যাবে। মজাদার সুজির বড়া তৈরি। বক্সে করে রেখে দুই তিন দিন খেতে পারবেন।
টক দইয়ের শরবত
উপকরণঃ
১. টক দই – ১ কাপ
২. গুঁড়া দুধ – ৩ টেবিল চামচ
৩. লবণ – ১/২ চা চামচ
৪. চিনি – ১/২ কাপ
৫. পানি – পরিমাণ মত
৬. কিছু বরফের টুকরো
প্রস্তুত প্রণালীঃ
সবগুলো উপকরণ একসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ঠান্ডা ঠান্ডা এক গ্লাস শরবত আপনার সারদিনের রোজা শেষে, ক্লান্তিকে মুহূর্তেই দূর করে দিবে।
তো আজ এটুকুই থাকলো। আগামি দিনগুলোতে হাজির হবো ইফতার ও সেহরির আরো বেশ কিছু মজার রেসিপি নিয়ে, ভালো থাকবেন। সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা।