প্রতিষ্ঠিত হতে মানুষকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বয়স যখন ৩০, টগবগে যৌবন, তখন ব্যক্তিগত বা পরিবারের দৈনন্দিন খরচ, বাড়ি-গাড়ি নিয়ে ভাবতে হয় আপনাকে। এগুলোর কিছুটা চাহিদা মিটলে আপনি মনে করতে পারেন সবকিছু ঠিকঠাক আছে।
কিন্তু এ বয়সে আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি হয়তো কিছু ভুল করছেন। এনডিটিভির অনলাইনে এক প্রতিবেদনে এমনই ১০টি আর্থিক ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে:
১. ভুল বিনিয়োগ
কোথাও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সঞ্চয়ের কথা মাথায় রাখতে হবে। আপনি কোথায় বিনিয়োগ করতে চান তা আগে ভাবুন। সেইসাথে কর সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করুন। বিনিয়োগের শেষ পর্যায়ে ভাবলে পিছিয়ে পড়বেন। এ ধরনের আচরণ আপনার ব্যবসার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে। আর যেখান থেকে আয় বেশি না আসে, সেখানে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত আপনার উঠতি সময়ের জন্য কিছুটা হলেও ভুল।
যেমন—অনেকে বিনিয়োগের ঝুঁকি নিতে চান না কিংবা বেশি কর দিতে চান না বলে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) করেন।
যেহেতু আপনার বয়স এখন ৩০ বছর, তাই জীবনে প্রতিষ্ঠার জন্য আপনার হাতে আরো সময় রয়েছে। ফলে কর-সঞ্চয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই আপনি এমন কোথাও বিনিয়োগ করুন, যাতে প্রতিযোগিতার এই যুগে আপনি ভালো ফল পেতে পারেন।
২. পর্যাপ্ত বিমা নিশ্চিত না হওয়া
অনেকেই বিমা গ্রহণ করেন, তবে তা নিয়মিত পর্যালোচনা করেন না। এটি একটি ভুল। পরিবারের জরুরি অবস্থায় যাতে পর্যাপ্ত আর্থিক নিরাপত্তার থাকে, সেটা আপনাকেই নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার দায়ও বিমার আওতায় থাকা উচিত। যদি আপনি কোনো ঋণ নেন, তবে সেভাবেই বিমানীতিও গ্রহণ করা উচিত। মেয়াদি বিমা কিনুন, যা অল্প খরচেই সম্ভব।
৩. জীবন বিমা গ্রহণ না করা
৩০ বছরের কাছাকাছি যাঁদের বয়স, তাঁদের মধ্যে খুব কমই জীবন বিমা গ্রহণ করে থাকেন। তবে যেকোনো সময় আপনার দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আর বর্তমানে চিকিৎসার যে খরচ, তাতে ছোট একটি দুর্ঘটনায়ও আপনার অনেক খরচ হয়ে যেতে পারে। তাই একান্ত প্রয়োজনেই আপনাকে জীবন বিমা গ্রহণ করা উচিত। অবশ্য এ ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রের বিমার ওপর নির্ভর করা উচিত নয়। কারণ, আপনি বর্তমান চাকরিতে পরবর্তী সময়ে নাও থাকতে পারেন।
৪. খরচের খাতগুলো চিহ্নিত না করা
আয় বাড়লে অধিকাংশ মানুষই প্রয়োজন না থাকলেও খরচ করে থাকেন। তখন কোথায় কোথায় খরচ করা উচিত, তা চিহ্নিত করা হয় না। এই প্রবণতা ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হয়। আর আয়ের চেয়ে খরচ নিয়মিতই বাড়তে থাকে।
৫. আগে ব্যয়, পরে সঞ্চয়
৩০ বছর বয়সের বেশির ভাগ মানুষকেই তাঁর পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করতে হয়। ফলে তাঁরা সঞ্চয় করতে পারেন না।
সনদধারী আর্থিক পরিকল্পনাকারী বিবেক কার্ভা বলেন, ‘বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ আগে ব্যয় করে, পরে সঞ্চয় বা বিনিয়োগের কথা ভাবে। কিন্তু যাঁরা জ্ঞানী, তাঁরা আয় থেকে বিনিয়োগ বাদ দিয়ে যা থাকে তা-ই ব্যয় করেন।
প্রতি মাসেই একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আপনাকে সঞ্চয় বা বিনিয়োগের জন্য নির্ধারণ করতে হবে। আপনি একা বা যৌথ বিনিয়োগও করতে পারেন।
৬. লক্ষ্য চূড়ান্ত না করা
বেশির ভাগ মানুষই জানেন তাঁদের লক্ষ্যগুলো কী। তবে সেসব লক্ষ্যের কয়টি বাস্তবে অসম্ভব, তা নির্দিষ্ট করা হয় না। আর যেগুলো সম্ভব বলে মনে করা হলো, সেগুলো কত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন সম্ভব, তা চূড়ান্ত করা হয় না। আর মনে রাখতে হবে, শুধু লক্ষ্য জানাই যথেষ্ট না। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কত কী খরচ হবে, কত সময় লাগবে তা আগেই নির্দিষ্ট করা উচিত।
৭. অবসর বা অবকাশের জন্য সঞ্চয় না করা
এখন আপনার বয়স ৩০। এখন আপনি যেভাবে পরিশ্রম করতে পারবেন, বয়সের ভার একটু বাড়লে একই ভাবে পরিশ্রম করতে পারবেন না। তবে এ সময় আপনার মনে হতে পারে এখন খরচের সময়, পরে সঞ্চয় করব। কিন্তু এখন সঞ্চয় শুরু না করলে বড় ভুল করবেন। তাই একটু একটু করে সঞ্চয় শুরু করা উচিত। আয় বাড়লে সঞ্চয় বাড়ানো উচিত।
৮. অপ্রয়োজনীয় ঋণ নেওয়া
বেশির ভাগ মানুষের আয় দ্বিগুণ হলেও একটি সাধারণ ভুল করে বসেন। তখন এমন কিছু শুরু করা হয়, যা আয়ের চেয়ে বেশি দায় বাড়ায়।
সনদধারী আর্থিক পরিকল্পনাকারী বিশাল ধাওয়ান বলেন, বেশির ভাগ উঠতি পরিবারে ছেলেমেয়ের মধ্যে আয়ের চেয়ে ব্যয়ের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
৯. জরুরি প্রয়োজনের জন্য তহবিল না রাখা
যেকোনো সময়ে আপনার জরুরি প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। হঠাৎ বন্যা-ভূমিকম্প হতে পারে, চাকরি চলে যেতে পারে ও চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এর জন্য তহবিল গঠন থাকলে প্রয়োজনের সময় আপনি ভালোভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবেন।
১০. দক্ষতা বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগ না করা
৩০ বছরের পর আর ৪০ বছর বয়সের আগে আপনার বেশি আয়ের প্রয়োজন হবে। তাই আগে বিনিয়োগ না করা এবং নিজের দক্ষতা বাড়াতে খরচ না করা একটি বড় ভুল।