যেকোনো পরিস্থিতে মাথাব্যথা দূর করার ১০টি সহজ কৌশল…

মাথাব্যথা দূর করার – গবেষণা বলছে, মানবজাতির অর্ধেকের কাছাকাছি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বছরে অন্তত একবার মাথাব্যথায় আক্রান্ত হয়। বিভিন্ন প্রকারের মাথাব্যথা রয়েছে, যেমন- মাইগ্রেন, সাইনাস, ক্লাস্টার হেডেক এবং দুঃশ্চিন্তা ও চোখের সমস্যা থেকে সৃষ্ট মাথাব্যথা। দুশ্চিন্তা থেকে তৈরি হওয়া মাথাব্যথা সবচেয়ে বেশি হতে দেখা যায় এবং বিশ্বজুড়ে প্রায় ১.৬ বিলিয়ন লোক এতে আক্রান্ত।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাথাব্যথা শুরুর আগে সতর্ক হওয়ার ময় পাওয়া যায় না। যেহেতু মাথাব্যথা শুরুর আগে আপনি জানবেন না কখন মাথাব্যথা শুরু হতে পারে তাই আপনাকে জানতে হবে কিভাবে মাথাব্যথা দ্রুত সারিয়ে তোলা যায়। তাই আপনার জন্য থাকছে যেকোনো পরিস্থিতে মাথাব্যথা সারিয়ে তোলার ১০টি কৌশল। তবে প্রথমে নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনার রক্তচাপ স্বাভাবিক রয়েছে। রক্তচাপ স্বাভাবিক না থাকলে এই কৌশলগুলো কাজে লাগাবেন না।

তাপমাত্রা থেরাপি

গরম পানিতে গোসল করলে আমাদের মাংসপেশি নমনীয় হয় এবং এতে মাথাব্যথা কমে যায়। কিন্তু সবসময় তো আর গোসল করার সুযোগ থাকে না, সেই ক্ষেত্রে তোয়ালে গরম করে মাথা মুড়ে নিন। দেখবেন ভালো লাগতে শুরু করেছে।

অ্যারোমাথেরাপি

অ্যারোমা মানে সুগন্ধি। অর্থাৎ সুগন্ধি আপনার মাথাব্যথা সারিয়ে তুলতে পারে। অ্যারোমাথেরাপিতে ব্যবহার হয় বিভিন্ন রকম এসেনশিয়াল অয়েল। বিশেষ করে ল্যাভেন্ডার অয়েল মাথাব্যথা সারিয়ে তোলার ব্যাপারে বেশ কার্যকর। হাতে ল্যাভেন্ডার অয়েল নিয়ে কপাল এবং চোয়ালে মেখে ঘরের আলো নিভিয়ে কিছুক্ষণ নিঃশ্চুপ নিরিবিলিতে শুয়ে থাকুন। দেখবেন ধীরে ধীরে ব্যথা কমে যাচ্ছে।

ইরানের সিরাজ ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, পিপারমেন্ট অয়েলও মাথাব্যথা সারিয়ে তুলতে সক্ষম। এই তেল মাইগ্রেনের ব্যথাও সারিয়ে তুলতে সমান দক্ষতা দেখিয়েছে।

পানি পান করুন

পানি স্বল্পতা মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। মাথাব্যথা দূরে রাখতে চাইলে, নিজেকে সতেজ রাখুন। যখনই মনে হবে মাথাব্যথা শুরু হচ্ছে, পানি পান করতে হবে। তবে এ সময় মাথায় রাখবেন, যেন অতিরিক্ত পানি পান করা না হয়। এতে হাইপোনেট্রেমিয়া হয়ে যেতে পারে। হাইপোনেট্রেমিয়া হলো রক্তে উপস্থিত সোডিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। এর ফলে মাথাব্যথা, বমিভাব এবং হেঁচকির মত ঘটনা ঘটতে শুরু করে, যা পানি স্বল্পতাজনিত মাথাব্যথার সাথে গুলিয়ে ফেলেন অনেকে।

ভেষজ চিকিৎসা

সাধারণ মাথাব্যথা থেকে শুরু করে মাইগ্রেনের মত তীব্র ব্যথা সারাতেও প্রাচীন কাল থেকে আদার ব্যবহার হয়ে আসছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায়ও এর প্রমাণ মিলেছে। মাথাব্যথা শুরু হলে, আধা চা চামচ আদা দিয়ে তৈরি এক গ্লাস আদার জুস পান করুন।

ইউনিয়ন ভ্যালিতে মাসাজ

যেকোনো পরিস্থিতে মাথাব্যথা দূর করার ১০টি সহজ কৌশল

কিভাবে চিহ্নিত করবেন: এই বিন্দুটি পাওয়া যাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং তর্জনীর মধ্যবর্তী স্থানে যে বাক তৈরি হয় সেখানে।

পদ্ধতি: প্রথমে বিন্দুটি খুঁজে বের করুন এবং খুব আস্তে চাপ দিতে থাকুন। এরপর ১০ সেকেন্ড চেপে ধরে রাখুন। ১০ সেকেন্ড পর, জায়গাটি বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাসাজ করে দিন। ঘড়ির কাটার দিকে ১০ সেকেন্ড, আর ঘড়ির কাটার বিপরীতে ১০ সেকেন্ড করে মাসাজ করুন।

আপনার অন্য হাতেও একই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। এই আকুপ্রেশার পয়েন্টটি দুঃশ্চিন্তাজনিত মাথায় এবং ঘাড়ের ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকর।

সিন ইয়ান জিয়াও পয়েন্টে আকুপ্রেশার

যেকোনো পরিস্থিতে মাথাব্যথা দূর করার ১০টি সহজ কৌশল

কিভাবে চিহ্নিত করবেন: এই আকুপ্রেশার পয়েন্টটি গোড়ালি থেকে ৪ আঙ্গুল উপরে অবস্থিত।

পদ্ধতি: পয়েন্টটি খুঁজে বের করুন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে হালকা চাপ দিয়ে ৪-৫ সেকেন্ড মাসাজ করুন। এই পয়েন্টে চাপ প্রয়োগ করলে মানসিক চাপ কমে এবং মন প্রশান্ত হয়।

চেতন বিন্দুতে চাপ

যেকোনো পরিস্থিতে মাথাব্যথা দূর করার ১০টি সহজ কৌশল

কিভাবে চিহ্নিত করবেন: ঘাড়ের পেছনে লম্বা হয়ে নেমে আসা দুটি মাংসপেশি এবং মাথার খুলির মাঝে যে ফাঁকা অংশ সেখানে এই বিন্দুটি অবস্থিত।

পদ্ধতি: উভয় হাতের তর্জনী এবং মধ্যমা দিয়ে হালকা করে ১০ সেকেন্ড দুই পাশ থেকেই চাপ দিয়ে ধরে রাখুন। ১০ সেকেন্ড পর ছেড়ে দিন এবং আবার করুন। এতে মানসিক চাপজনিত মাথাব্যথা কমে যাবে। এই কৌশল মাইগ্রেনের ব্যথাতেও সমান কার্যকরী।

ড্রিলিং ব্যাম্বু পয়েন্টে মাসাজ

যেকোনো পরিস্থিতে মাথাব্যথা দূর করার ১০টি সহজ কৌশল

কিভাবে চিহ্নিত করবেন: এই বিন্দুটি নাকের উভয় পাশে অবস্থিত, যেখানে নাক দুই ভ্রুর সাথে গিয়ে মেশে।

পদ্ধতি: আপনার তার্জনি দিয়ে দুইপাশে ধারাবাহিক ভাবে আলতো করে চাপ দিন এবং ১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন। ১০ সেকেন্ড পর ছেড়ে দিন এবং কয়েক মুহূর্ত পর আবার চাপ দিয়ে ধরুন।

এই চাপ বিন্দুটিতে মাসাজ করে চোখের চাপজনিত ব্যথা এবং সাইনুসাইটিসের ব্যথাও নিরাময় করা সম্ভব।

সোল্ডার ওয়েল লোকেশনে মাসাজ

যেকোনো পরিস্থিতে মাথাব্যথা দূর করার ১০টি সহজ কৌশল

কিভাবে চিহ্নিত করবেন: ঘাড় এবং কাঁধের মিলনস্থলে এই বিন্দুটি অবস্থিত।

পদ্ধতি: আপনার বাম পাশে অবস্থিত বিন্দুটি ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে ১ মিনিট ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মাসাজ করুন। ১ মিনিট পর একই প্রক্রিয়ায় ডান পাশের বিন্দুতেও মাসাজ করুন।

এই মাসাজের ফলে ঘাড় ও কাঁধের শক্ত হয়ে যাওয়া পেশী নমনীয় হবে এবং এর কারণে সৃষ্ট মাথাব্যথাও দূর হয়ে যাবে।

চোখের দু’পাশে মাসাজ

যেকোনো পরিস্থিতে মাথাব্যথা দূর করার ১০টি সহজ কৌশল

কিভাবে চিহ্নিত করবেন: এই বিন্দুটি উভয় চোখের বাইরের দিকের কোনায় অবস্থিত।

পদ্ধতি: তর্জনী এবং মধ্যমা দিয়ে চোখের দু’পাশের এই বিন্দু দুটি সমান তালে ব্যথা না কমা পর্যন্ত ডলতে থাকুন।

এই মাসাজটি মাইগ্রেনের কারণে সৃষ্ট মাথাব্যথায় বেশ ভালো কাজ করে।

শেষ কবে মাথাব্যথা করেছিল আপনার? কিভাবে মুক্তি পেয়েছিলেন সে সময়? নিচের কমেন্টে আমাদের জানান।

Related Posts

রোজা রেখে অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হলে কী করবেন!

রোজার মাসে সবাই যেন খাবারের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। সারা দিন না খাওয়ার অভাবটুকু ইফতারে পুষিয়ে নেওয়ার জন্য কি এই প্রতিযোগিতা? কে কত খেতে বা রান্না করতে পারে।…

গলার অতিরিক্ত চর্বি কমানোর ১০টি সহজ উপায়…

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই লক্ষ্য করছেন তো জিনিসটা? আর ভাবছেন কী বাজে লাগছে মুখটা! অতিরিক্ত কী একটা ঝুলছে! আজ্ঞে হ্যাঁ, আমি গলায় জমে থাকা…

জানেন কি গরমে খাবারের চার্ট কেমন হওয়া উচিত?

গরমে অস্বস্তিতে সবাই। এরমধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অনেকের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শারীরিক অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। তাই গরমে সুস্থ থাকতে ঠিকঠাক খাবার চার্ট খুবই জরুরি-…

বয়স অনুযায়ী আপনার শিশুর প্রতিদিন কতটুকু পানি প্রয়োজন

বাচ্চার কতটুকু পানি প্রয়োজন সেটি আসলে নির্ভর করে বাচ্চার অবস্থা, ওজন ও বয়সের ওপর। জ্বর বা অসুখের সময় পানির বেশি প্রয়োজন। বেশি গরম পড়লে, খেলাধুলা করলে বেশি…

শারীরিক সৌন্দর্য বারাতে ও ওজন কমাতে রইল ১৪ টি সহজ ঘরোয়া উপায়

মাঝে মাঝে ব্যয়াম ও কখনো কখনো ডায়েট করে ওজন কমানোর লক্ষ্য অর্জন করাটা আসলেই দুঃসাধ্য।শরীরের বাড়তি মেদ নিয়ে আজকাল অনেকেই চিন্তিত। সুস্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, শারীরিক সৌন্দর্যের…

ওভেনের খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়!

কম সময়ে খাবার গরম করতে মাইক্রোওয়েভ ওভেনই ভরসা। আধুনিক এই যন্ত্রটি জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। নামমাত্র সময়ে ঠান্ডা খাবার গরম করার এর চেয়ে ভাল উপায় আর নেই।…