সুন্দর ফর্সা উজ্জ্বল ও মসৃণ ত্বকের অধিকারী হওয়া সবার একটা স্বপ্ন। স্বপ্ন পূরণের পথে অনেক সময় অন্তরায় হয় ব্ল্যাকহেডস বা কাল আঁচিল। গ্রাম্য অথবা শহুরে উভয় জীবনে বর্তমানে এটি একটি মারাত্মক সমস্যা। মানসিক অশান্তির কারণও বটে। ব্ল্যাকহেডস বা কাল আঁচিল কি, কেন বা তা হয়, ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে এর প্রতিকার সম্ভব? আসুন জেনে নিই
ব্ল্যাকহেডস বা কালো আঁচিল কি?
আমাদের নাকের দু’পাশে, কপালে, গালে, চিবুকে, থুতনির উপর, ঠোঁটের আশেপাশে যে ছোট ছোট বাদামি অথবা কালো এবং ত্বকের থেকে অল্প উঁচু অংশ থাকে তাকেই ব্ল্যাকহেডস বলে। অনেক সময় এই সমস্যা শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যায়।
কেন হয়? যেকোনো বয়সে ধুলাবালির আক্রমণে ব্ল্যাকহেডস হতে পারে। মূলত মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার না করলে ব্ল্যাকহেডস হয়। অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হিসেবেও ব্ল্যাক হডেস হতে পার। তেল-ময়লা জমে বন্ধ হয়ে যাওয়া ত্বকের ছিদ্র এবং মৃত কোষের সমষ্টি, বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে কালো হয়ে ব্ল্যাকহেডস এর রূপ নেয়। প্রাথমিক অবস্থায় ব্ল্যাকহেডস এর ছিদ্র কম থাকে, যত্নাভাবে পরবর্তীতে তা সারামুখে ছড়িয়ে পড়ে।
ব্ল্যাকহেডস দূর করার কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতি –
অনেকে নখ দিয়ে চেপে ব্ল্যাকহেডস বের করার চেষ্টা করেন, কেউ কেউ স্ট্রিপ লাগিয়ে তা তুলে ফেলেন। তবে তাতে ব্যথা লাগে, দাগ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে। এসব প্রক্রিয়ায় চিরতরে ব্ল্যাকহেডস প্রতিকার করা যায় না। কেটে-ছিঁড়ে যায় এমনভাবে ত্বক স্ক্রাব করা ঠিক না, এতে ইনফেকশন হবার সম্ভাবনা থাকে। বরং ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে ব্ল্যাকহেডস দূর করা হতে পারে উত্তম সমাধান।
ডিমের ফেসপ্যাকঃ একটি ডিমের সাদা অংশ ও এক চা চামচ মধু ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। ত্বকে লাগিয়ে শুকনো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে মুখ ফেলুন। এভাবে সপ্তাহে দুবার মুখে লাগান। ডিমের সাদা অংশে যে অ্যালবুমিন থাকে, তা ত্বকের ছিদ্রগুলিকে টাইট রাখে, ফলে ব্ল্যাকহেডস হয় না। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে এটি খুব উপযোগী।
অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারী পাতাঃ ঘৃতকুমারীর পাতা মাঝখান থেকে কেটে নরম শ্বাস বের করে নিন। পেস্ট তৈরি করুন এবং আলতো করে মুখে প্রলেপ দিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ব্ল্যাকহেডস দূর হয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে।
স্ট্রবেরি, মধু ও লেবুর রসঃ একটি স্ট্রবেরি, আধা চা চামচ মধু আর আধা চা চামচ লেবুর রস একসঙ্গে মিশান। তারপর সেটা ব্ল্যাকহেডসের উপর প্রলেপ দিন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। টমেটোর খোসা ও চিনিঃ টমেটোর খোসা ছাড়িয়ে হামানদিস্তায় থেঁতো করে নিন। সঙ্গে হালকা পরিমাণ পানি ও চিনি মিশান। ব্ল্যাকহেডস আছে এমন জায়গায় সারারাত লাগিয়ে রাখুন। ঘুম থেকে জেগে ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
স্টিম মেশিন বা গরম পানির ভাপঃ লোমকূপ উন্মুক্ত করার জন্য স্টিম মেশিন বা গরম পানির ভাপ দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্টিম মেশিন না থাকলে কাঁচের বোতলে অথবা মগে ভরে গামছা বা তোয়ালের উপর দিয়ে ব্ল্যাকহেডস এ তাপ দিতে হবে। তবে খুব বেশি তাপ দিলে ত্বকের ক্ষতি হবে। টক দই, ধনেপাতা ও হলুদঃ টক দই, ধনপোতা ও হলুদের মিশ্রিত পেস্ট দিয়েও ব্লাকহেডস দূর করা সম্ভব। এক্ষেত্রে মুখ ভালোভাবে ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে। প্রতিদিন ১-২ ঘণ্টা ব্যবহারে ব্লাকহেডস থেকে মুক্তি মিলতে পারে।
অর্গানিক নারকেল তেলঃ শুষ্ক ত্বকের জন্য অর্গানিক নারকেল তেল দিয়ে দুই-এক মিনিট ব্ল্যাকহেডসের উপর ম্যাসেজ করুন। মৃত কোষ ঝরে ব্ল্যাকহেডস থেকে মুক্তি মিলবে। দারচিনির গুঁড়া, ময়দা ও লেবুর রসঃ এক চিমটি দারচিনির গুড়া ও ময়দার সঙ্গে সমপরিমাণ লেবুর রস দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। ব্ল্যাকহেডসের উপর সারারাত লাগিয়ে রাখুন। সকালে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ব্ল্যাকহেডস মুক্ত থাকতে করণীয়ঃ বাসা থেকে বের হবার পূর্বে ও বাসায় ফিরে ভালোভাবে মুখ ধুয়ে ফেলুন। অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন। মেকআপ ব্যবহারের পর ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার পোশাক ব্যবহার করুন। মুখ শরীরের জন্য আলাদা গামছা-তোয়ালে ব্যবহার করুন। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করুন, অত্যধিক তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
তথ্যসূত্র: আরটিভি অনলাইন