এই আচারগুলো সব ঋতুতে সারা বছরই খাবারের স্বাদ-গন্ধ বাড়িয়ে তুলবে বহুগুণ, এমনকি মাছ-মাংসের সাধারণ তরকারিতেও স্বাদের বাহার নিয়ে হাজির হবে এই আচারের পদগুলো।
রসুনের আচার
উপাদান:
রসুনের কোয়া- দুই কাপ,
তেঁতুলের ক্বথ বা তেঁতুলগোলা পানি- আড়াইশ গ্রাম,
সরিষার তেল- এক কাপ,
আদা বাটা, ধনে গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো- অর্ধেক চা চামচ করে,
শুকনো মরিচের গুঁড়ো ও মৌরি- এক চা চামচ করে,
ভিনেগার- এক টেবিল চামচ,
সাদা সরিষাবাটা- এক টেবিল চামচ,
পাঁচফোড়ন- অর্ধেক চা চামচ,
চিনি- এক টেবিল চামচ,
লবণ- স্বাদমতো,
কয়েকটি শুকনো মরিচ।
প্রস্তুতপ্রণালী:
প্রথমে তেঁতুলের ক্বথ প্রস্তুত করে নিতে হবে। এজন্য আড়াইশ গ্রাম তেঁতুল আধা ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর হাতে চটকে পানির সাথে মেশাতে হবে। শেষে বড় ছাঁকনিতে ছেঁকে ফেললেই তেঁতুলের বিচি ও শাঁস আলাদা হয়ে কাঙ্ক্ষিত ক্বথ পাওয়া যাবে। ফ্রিজে রাখা তেঁতুলের ক্ষেত্রে আরো বেশিক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ভালো হয়। অন্যদিকে রসুনের কোয়াগুলোর গায়ে হালকা ছিদ্র করে নিলে ভালো হয়।
কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে তাতে পাঁচফোড়ন ও শুকনো মরিচের কুঁচি দিয়ে একটু নাড়লেই তেল ফুলে উঠতে শুরু করবে। এতে রসুনের কোয়াগুলো দিয়ে দিন।
এই আচার চুলার উঁচু আঁচে বানানো হয়। এরপর এতে আদা বাটা, ধনে গুঁড়ো, মরিচ বাটা, হলুদ গুঁড়ো দিয়ে দিতে হবে। একটু নেড়ে স্বাদমতো লবণ যোগ করে দুই বা তিন মিনিট জ্বাল দিয়ে ভিনেগার মেশাতে হবে।
এরপর সাদা সরিষাবাটা ও তেঁতুলের ক্বথ যোগ করে নিতে হবে। তাতে চিনি দিয়ে পানি শুকানো পর্যন্ত চুলায় সাবধানে নাড়তে থাকতে হবে। সাবধানে না নাড়লে রসুনের কোয়া ভেঙে ও গলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পানি শুকিয়ে গেলে আচারের ওপরে ভাঙা মৌরির গুঁড়ো ছিটিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে। আচার অন্য একটি পাত্রে ঢেলে নিয়ে ঠাণ্ডা করতে দিতে হবে।
বোয়ামে একটু সরিষার তেল দিয়ে ঠাণ্ডা আচার তাতে ঢেলে দিলেই হবে। এই আচার বানাতে অন্যান্য আচারের চেয়ে একটু বেশিই তেল লাগে। বোয়ামে ঢালার সাতদিন পর থেকে এই আচার খাওয়া শুরু হয়।
এই আচারের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এই আচার ফ্রিজে নয়, স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই সংরক্ষণ করা হয়।
কাঁচা মরিচের ঝাল-মিষ্টি আচার
উপকরণ:
এই আচারটির জন্য এক বিশেষ মসলা আলাদা করে প্রস্তুত করে নিলে ভালো হয়। সেজন্য লাগবে-
এক টেবিল চামচ শুকনো মরিচ গুঁড়ো,
এক চিমটি হলুদ গুঁড়ো,
এক চা চামচ লবণ,
অর্ধেক চা চামচ করে আদাও রসুন বাটা,
এক চা চামচ ভাজা জিরার গুঁড়ো,
এক টেবিল চামচ সাদা সরিষা বাটা,
অর্ধেক কাপ ভিনেগার।
এবার এই সকল উপাদান চামচ দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে।
এছাড়াও প্রয়োজন হবে আড়াইশ গ্রাম বড় ও তাজা কাঁচা মরিচ, সরিষার তেল, অর্ধেক চা চামচ পাঁচফোড়ন, ১৫/২০টি রসুনের কোয়া, দুই টেবিল চামচ চিনি।
প্রস্তুতপ্রণালী:
প্রথমে কাঁচা মরিচগুলো ভালো করে ধুয়ে বোঁটা ও আগা ফেলে দিয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। কড়াইতে দু কাপ পরিমাণ সরিষার তেল গরম করে তাতে পাঁচফোড়ন দিয়ে একটু ভাজতে হবে।
এতে রসুনের কোয়াগুলো দিয়ে একটু নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। এতে পূর্বে প্রস্তুতকৃত বিশেষ মসলাটি দিয়ে এক থেকে দেড় মিনিট মাঝারি আঁচে রান্না করে নিতে হবে।
এ সময় ভালো করে নাড়তে থাকতে হবে, যেন তলায় লেগে না যায়। এতে পানি ঝরানো মরিচগুলো দিয়ে সাবধানে নাড়তে থাকতে হবে।
এবার এতে চিনি দিয়ে চার থেকে পাঁচ মিনিট রান্না করতে থাকতে হবে। মরিচের রঙ একটু পরিবর্তন হয়ে সব মরিচের রঙ একরকম হয়ে যাবে।
এবার চুলা বন্ধ করে অন্য একটি পাত্রে ঢেলে ঠান্ডা করতে দিতে হবে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে কাঁচের বোয়ামে ঢেলে সাতদিন পর্যন্ত রোদে দিতে হবে।
এরপরেই খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেল কাঁচা মরিচের ঝাল-মিষ্টি আচার।
শুকনো মরিচের আচার
উপকরণ:
শুকনা মরিচের গুঁড়ো- আধা কাপ,
সরিষার তেল- দুই কাপ,
রসুন কুঁচি- দুই টেবিল চামচ,
চিনি- এক চা চামচ (এটা ঐচ্ছিক)
প্রস্তুতপ্রণালি:
অত্যন্ত অল্প সময়ে, কম পরিশ্রমে এবং সহজে তৈরি করা যায় এই আচারটি। মরিচ রোদে দিয়ে শুকানোর চেয়ে চুলার পাশে রেখে শুকনা করে গুঁড়ো করে নিলে এই আচারটি ভালো হয়।
তবে আচারের মরিচ আলাদা করে ভেজে নেওয়া যাবে না। এবার কড়াইতে তেল গরম করে তাতে রসুন কুঁচি দিয়ে বাদামী করে ভেজে নিতে হবে।
এবার চুলা বন্ধ করে দিয়ে এতে সামান্য লবণ দিয়ে ঠাণ্ডা হতে দিতে নিতে হবে। কারণ তেল বেশি গরম থাকলে মরিচ পুড়ে স্বাদ ও রঙ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
ব্যস, ঠাণ্ডা আচার বোয়ামে ঢেলে নিলেই প্রস্তুত হয়ে গেল অত্যন্ত সহজ শুকনা মরিচের আচার। একদম অন্য ধাঁচের একটি আচার হলেও ভাজি, সবজি বা খিচুড়ির সাথে খেতে এই আচারের জুড়ি নেই।
আবার মেয়নিজ বা সসের সাথে মিশিয়ে অন্যান্য খাবারও করে তুলতে পারেন ঝাল ঝাল কিন্তু সুস্বাদু। তবে এই আচারের স্বাদ বহুগুণ বেড়ে যায়, যখন এটি কোনো ভর্তার সাথে ব্যবহার করা হয়।
কাঁচের বোয়ামে এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় এই আচারটি।
পাঠক লক্ষ করবেন, আমরা সবসময়ই আচার কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণের জন্য বলি। এটা এজন্য যে প্লাস্টিক বা অন্যান্য বোতলের চেয়ে কাঁচের বোয়ামেই আচার সবচেয়ে ভালোভাবে এবং সবচেয়ে বেশিদিন সংরক্ষিত থাকে। আচার সংরক্ষণের জন্য আরেকটা জরুরি বিষয় হলো, খেয়াল রাখতে হবে এতে যেন কোনো ভেজা বা এঁটো চামচ বা হাতের স্পর্শ না লাগে।