‘মাছে-ভাতে বাঙালি’, ‘ভেতো বাঙালি’ এমনি এমনি প্রবাদে আসেনি। সত্যিকার অর্থে ভাত ছাড়া বাংলাদেশিরা কিছু ভাবতেই পারেন না। ওবেসিটি কিংবা ব্লাড সুগার যতই বাড়ুক না কেন, ভাত তাদের চাই-ই চায়।
মোটামুটি সবারই জানা, ভাত খেলে মেদ বাড়ে। তারপরও আহারে ভাতই চাই। এসব ভাত খোরদের জন্য সুখবর দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার কলেজ অব কেমিক্যাল সায়েন্সের গবেষকেরা। তাদের দাবি, একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে ভাত রান্না করলে মেদতো হবেই না বরং ভাতে উপস্থিত ক্যালোরি প্রায় ৫০-৬০ শতাংশ কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।
আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির জাতীয় সমাবর্তনে শ্রীলঙ্কান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রধান সুধের জেমস এমনটিই জানিয়েছেন।
তিনি জানান, শর্করার রকমফেরের ওপর ভিত্তি করেই এই গবেষণা করা হয়েছে। বিশ্বের প্রায় ৩৮ রকম চালের ওপর তারা পরীক্ষা চালিয়েছেন।
এই গবেষকদের মতে, এমনিতেই সরল শর্করা হজম করতে যত না সময় লাগে, তার চেয়ে জটিল শর্করা হজমে সময় লাগে অনেক বেশি। আর এতেই শরীরে জমে যায় গ্লাইকোজেন। কতখানি গ্লাইকোজেন শরীরে জমছে, তার ওপরই নির্ভর করে শরীরে মেদ জমার সম্ভাবনা।
গ্লাইকোজেন কমাতে বেশি এনার্জির প্রয়োজন। তাই ভাতের জটিল শর্করাকে সরলে পরিণত করলেই তা কমায় ওবেসিটির ভয়।
নারকেল তেল শরীরে গ্লাইকেজেনকে গলাতে সাহায্য করে। তাই চাল ফোটানোর আগে পানিতে নারকেল তেল দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।
শুধু তা-ই নয়, ভাত রান্নার পর তাকে ১২ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে খাওয়ার আগে গরম করে খেতে বলছেন তারা। এতে শর্করার হাইড্রোজেন বন্ড ভেঙে নতুন আকার নেয়। ফলে শরীরে দ্রবীভূত শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। মেদ জমে না।
আমেরিকার সেই সমাবর্তনে হাজির অন্য গবেষকরাও এতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। নানা দেশে ভাত রান্নার পদ্ধতি ও তাদের খাদ্যাভ্যাসকে মাথায় রেখে এই পরীক্ষা পদ্ধতির আরও প্রয়োগ চেয়েছেন। তাদের আশা, এই নিয়মে ভাত রান্না করলেই তা মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
ভাত রান্নার পদ্ধতি:
ভাতের পানি চুলাই দিন। পানি ফুটে উঠলে চাল দেয়ার আগেই তাতে মেশান নারকেল তেল। আধ কাপ চালের ভাতে এক চা-চামচ নারকেল তেল মেশাতে হবে। চালের পরিমাণ অনুপাতে নারকেল তেলের পরিমাণও হ্রাস-বৃদ্ধি হবে।
রান্না হলে তা খাওয়ার আগে অন্তত ১২ ঘণ্টা ফ্রিজে রাখুন। খাওয়ার আগে পরিমাণ মতো গরম করে নিন।
এবার নিজেই খেয়ে দেখুন, কিভাবে মেদকে ফাঁকি দিচ্ছেন। আর ভাত নিয়ে ভীতি দূর করুন।