প্রতিদিন দই ভাত খাওয়া গরম কালে উচিত কেন জানেন? – মায়ের হাতের রান্না

প্রতিদিন দই ভাত খাওয়া গরম কালে উচিত কেন জানেন? – মায়ের হাতের রান্না

তাপমাত্রা যখন বাড়তে থাকে তখন কী হয়? কী আবার খুব গরম লাগে! একেবারেই! কিন্তু সেই সঙ্গে দেহের অন্দরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে বদ-হজম এবং গ্যাস-অম্বলের প্রকোপ বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে পেট খারাপ হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। এমন পরিস্থিতিতে শরীকে ঠান্ডা রাখতে এবং নানাবিধ পেটের রোগকে দূরে রাখতে দই ভাত কিন্তু নানাভাবে সাহায্য করে থাকে।

দই ভাত খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি সহজে তৈরিও করে ফেলা যায়। আর এই খাবারটি খাওয়া মাত্র যে শুধু পেটের রোগ দূরে পালায়, এমন নয়! সেই সঙ্গে মেলে আরও অনেক উপকার। যেমন ধরুন…

১. হাড় শক্তপোক্ত হয়:
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে দেহের অন্দরে এই খনিজটির ঘাটতি দেখা দিলে হাড় দুর্বল হতে শুরু করে। ফলে অস্টিওপোরোসিস মতো রোগ মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তাই তো ক্যালসিয়ামের ঘাটতি যাতে কোনও সময় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর তার জন্য বেশি করে খেতে হবে দই ভাত। কারণ দইয়ে এই খনিজটি প্রচুর মাত্রায় থাকে, যা ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২. ওজন হ্রাস পায়:
খেয়াল করে দেখবেন দই ভাত খাওয়ার পর অনেকটা সময় পর্যন্ত পেট ভরে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়। সেই সঙ্গে কমে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমার আশঙ্কাও। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা হ্রাস পায়। তাই তো যারা অতিরিক্ত ওজনের কারণে চিন্তায় রয়েছেন, তারা আজ থেকে ডায়েটে দই ভাতের অন্তর্ভুক্ত ঘটাতে পারেন, দেখবেন উপকার পাবেন।

৩. ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি মেটে:
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত দই ভাত খাওয়া শুরু করলে শরীরের ভিটামিন এবং খনিজ শোষণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে দেহের অন্দরে পুষ্টির ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা কমে। সেই সঙ্গে নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। এবার বুঝেছেন তো গরম কালে কোনও এক বেলা দই ভাত খাওয়ার পরামর্শ কেন দেন চিকিৎসকেরা।

৪. হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে দই এবং ভাত মিশে যাওয়ার পর এমন কিছু উপাদানের জন্ম হয় যে তা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র একাধিক পেটের রোগ সেরে যেতে শুরু করে। সেই সঙ্গে বদ-হজমের সমস্যা থাকলে তারও উপশম ঘটে। আসলে দইয়ে উপস্থিত উপকারি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করা মাত্রা তা ধীরে ধীরে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে থাকে। সেই সঙ্গে কনস্টিপেশন এবং তলপেটে অস্বস্তির মতো রোগের প্রকোপ কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ থাকায় দই ভাত খাওয়ার অভ্যাস করলে ধীরে ধীরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মারাত্মক উন্নতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ সংক্রমণের আশঙ্কাও হ্রাস পায়। সেই সঙ্গে এনার্জির ঘাটিতও পূরণ হয়। তাই তো ইচ্ছা হলে অফিস যাওয়ার আগে এক বাটি দই ভাত খেয়েই যেতে পারেন। দেখবেন উপকার পাবেন।

৬. শরীর ভিতর থেকে ঠান্ডা করে:
গরমের সময় শরীরকে ঠান্ডা রাখার মাধ্য়মে সান স্ট্রোকের আশঙ্কা কমাতে দই ভাতের কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে দইয়ের মধ্যে তাপ বিরোধী উপাদান রয়েছে, যা নিমেষে তাপদাহকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে চলে আসে। তাই তো গরমকালে প্রতিদিনে দই ভাত খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

৭. দেহের অন্দরে পুষ্টিকর উপাদানের ঘাটতি মেটে:
দইয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং উপকারি ফ্যাট। অন্য়দিকে ভাতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট। ফলে দই ভাত খেলে একসঙ্গে এতগুলি পুষ্টিকর উপাদান শলরীরে প্রবেশ করে। প্রসঙ্গত, ক্যালসিয়াম হাড়কে শক্তপোক্ত করে। আর কার্বোহাইড্রেট এনার্জির ঘাটতি পূরণ করে।

৮. স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ কমে:
দইয়ে উপস্থিত প্রোবায়োটিকস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং উপকারি ফ্যাট মস্তিষ্কের অন্দরে এমন কিছু পরিবর্তন করে যে চোখের পলকে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। বর্তমান সময়ে যুব সমাজ যেখানে স্ট্রেসের কারণে এত ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছে, সেখানে দই যে তাদের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠতে পারে, তা বলাই বাহুল্য!

কীভাবে বানাতে হবে দই ভাত?
এক্ষেত্রে প্রয়োজন পরবে অর্ধেক বাটি দই, এক বাটি ভাত, ১ চামচ তেল, হাফ চামচ জিরা, ৪-৫ টা কারি পাতা, নুন এবং ধনে পাতা। সবকটি উপাদান জোগাড় করার পর দইয়ের সঙ্গে ভাতটা মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর তাওয়ায় অল্প পরিমাণে তেল নিয়ে তাতে জিরা এবং কারি পাতাটা ফেলে একটু নারিয়ে নিতে হবে। এবার দইভাতে জিরা এবং কারি পাতাটা মিশিয়ে নিতে হবে। সব শেষে স্বাদ অনুসারে নুন মিশিয়ে ভাল করে নাড়াতে হবে। এই সময় ইচ্চা হলে ধনে পাতাও ছড়িয়ে দিতে পারেন। এমনটা করলে স্বাদ আরও বাড়বে।

Related Posts

সারাদিন রোজা রেখে ইফতারের পর ক্লান্তি দূর করার ৫টি ছোট্র টিপস…

সারাদিন এতো লম্বা সময় রোজা রাখার পর ইফতার শেষে একেবারেই গা ঝিমিয়ে পড়ে। রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করে দেহে। ইফতারের পর থেকে রাতের খাবারের সময়টুকু যেনো এক…

রোজাদার নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি ৫টি মাসআলা, যা না জানলেই নয়!

১. প্রসব ব্যথায় রোজা ভাঙা : যদি রোজা না ভাঙলে গর্ভবতী মহিলার অথবা বাচ্চার কোনো ক্ষতি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে ফেলা বৈধ। এ ক্ষেত্রে…

জীবনে খারাপ সময় আসবেই, ভেঙে না পড়ে এই ১০টি কথা মনে রাখুন কাজে লাগবে…

জীবনে খারাপ সময় আসবেই- সাফল্য অর্জনের দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার সময় আমরা এমন অবস্থার সম্মুখীনও হই যখন আমাদের সাথে সব কিছু খারাপ হয়। অবস্থাটা খানিকটা এমন “অভাগা…

দাম্পত্যে জীবন সুখী রাখতে এই ৬টি কাজ আবশ্যক

শান্তিপুর্ণ সংসার গড়ার পুর্ব শর্ত হলো সুন্দর দাম্পত্য জীবন, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ বিষয় বলা যায় একে। কারণ দাম্পত্য একদিনের সম্পর্ক নয়, বরং একে চিরকালের বলেই ধরা হয়।…

ছোট স্তন? ওষুধ ছাড়াই স্বাভাবিক উপায়ে বড় করুন এভাবে…

জিনগত কারণে বা অন্যকিছু আনুষঙ্গিক কারণে অনেকেরই স্তনের আকার স্বাভাবিকের থেকে ছোট থাকে। এই কারণে হিনমন্যতায় ভোগেন অনেক মেয়েরাই। আসলে সুন্দর, সুডৌল স্তন নারীর সৌন্দর্য্যের একটি অন্যতম…

ঘুমের মধ্যে লালা ঝরে? জেনে নিন সঠিক সমাধান!

ঘুম ভালোভাবে হলে দেহ মন ফুরফুরে থাকে। কিন্তু অনেকেই আছেন যাদের ঘুমের সময় লালা ঝরার মতো অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটে। সাধারণত দু একজন বড়দের পাশাপাশি শিশুদের এমনটা দেখা…