বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাবার খেতে হয় আর খাবার-দাবারের উপাদানগুলো আমাদের গ্রহনের উপযোগী ও স্বাদ বৃদ্ধির করার জন্য যে প্রক্রিয়া আমরা অবলম্বন করি সেটাই হচ্ছে রান্না। রান্না আসলে একটা শিল্প। সুন্দর ও রুচিশীল রান্নার কদর বিশ্বব্যাপী। আমাদের জীবনযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে পাল্টাচ্ছে রান্নাবান্নার কৌশল ও ধরণ।
এক সময়ে শুধু মেয়েরাই রান্নাবান্নার সাথে যুক্ত থাকলেও বর্তমান কর্মব্যস্ত জীবনের চাহিদায় আমাদের সবাইকেই কম বেশি রান্না করতে হয়। কর্মব্যস্ততায় সব সময় গুছিয়ে পরিকল্পনা করে রান্না করা সম্ভব হয় না। রান্নার কাজ দ্রুত সেরে যেতে হয় অন্য কোন কাজে। আর এক্ষেত্রে রান্না সম্পর্কিত টুকটাক টিপস জানা থাকলে রান্না যেমন ভাল হয় তেমনি সময় বাঁচে। এজন্য ঘাবড়ানোর কিছু নেই, রেসিপি দেখে রান্না করতে হলে আগেই রেসিপিটা ভালোভাবে কয়েকবার পড়ে নিন। মনে রাখবেন সুন্দর পরিপূর্ণ রান্নার জন্য দরকার সৃজনশীলতা, উপস্থিত বুদ্ধি, সঠিক অনুমান ক্ষমতা আর অভিজ্ঞতা।
টিপসঃ
১। যথা সম্ভব পাতিলে ঢাকানা দিয়ে রান্না করুন, এতে খাবারের পুষ্টিমান ঠিক থাকে।
২। মাংস রান্নার শুরুতেই লবণ না দিয়ে রান্নার মাঝামাঝি সময়ে লবণ দিয়ে ভালভাবে নাড়ুন। এরপর দেখে নিন পরিমান ঠিক হল কিনা।
৩। তরকারির ঝোল ঘন করতে চাইলে কিছু কর্ণ ফ্লাওয়ার পানিতে গুলে ঢেলে দিন। লক্ষ্য রাখুন যেন কর্ণ ফ্লাওয়ারের মিশ্রণটি ভালমত তরকারির সাথে মিশে যায়।
৪। চাল ধোয়ার পর ১০ মিনিট রেখে দিয়ে তারপর রান্না করুন অথবা রান্নার সময় ১ চা চামচ রান্নার তেল দিয়ে দিন। দেখবেন ভাত সুন্দর ঝরঝরে হয়েছে।
৫। মুরগীর ফ্যাট এড়াতে চাইলে চামড়া ছাড়িয়ে মুরগি রান্না করুন। কারন মুরগির চামড়াতেই প্রধান ফ্যাট থাকে।
৬। সবুজ সবজি রান্নার সময় সবুজ রং ঠিক রাখতে চাইলে এক চিমটি চিনি দিন।
৭। রান্না করার জন্য একদিন আগেই মাংস সেদ্ধ এবং ঠান্ডা করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন।
৮। রান্নার সময় গরম পানি ব্যবহার করুন।
৯। ফ্রিজের মধ্যে আঁশটে গন্ধ দূর করতে ফ্রিজে এক টুকরো কাঠ কয়লা রেখে দিন।
১০। মাংস তাড়াতাড়ি সেদ্ধ করতে চাইলে খোসাসহ এক টুকরো কাঁচা পেঁপে তরকারীতে দিন।
১১। মাছ, মাংস বা ডিমের ঝোলে লবণ বেশি হয়ে গেলে তরকারিতে কয়েকটি সিদ্ধ আলু ভেঙে দিন। স্বাদ ঠিক হয়ে যাবে।
১২। মুরগির মাংস বা কলিজা রান্নাইয় ১ টেবিল চামচ সিরকা দিন। এতে মাংসের গন্ধ থাকবে না আবার তাড়াতাড়ি সিদ্ধও হবে।
১৩। মাছ ভাজার সময় তেল ছিটা রোধ করতে একটু লবণ ছড়িয়ে দিন।
১৪। বেরেস্তা করার সময় পেঁয়াজ ভেজে নামানোর আগে সামান্য পানি ছিটিয়ে দিন এতে পেঁয়াজ তাড়াতাড়ি লালচে হবে।
১৫। কাঁচা মাছ বা মাংস ছুরি-চপিং বোর্ডে কাটতে চাইলে বেশ কিছুক্ষণ আগে থেকেই পানিতে ভিজিয়ে নরমাল করে নিন।
১৬। আলু ও ডিম একসঙ্গে সিদ্ধ করুন, আলাদা কাজে ব্যবহার করলেও তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হবে।
১৭। স্যুপ রান্নার সময় পাতলা হয়ে গেলে দুটি সিদ্ধ আলু ম্যাশ করে স্যুপে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন।
১৮। ডাল তাড়াতাড়ি রান্না করতে আগের রাতেই ভিজিয়ে রাখুন।
১৯। সহজে মসলাপাতি খুঁজে পেতে কৌটার গায়ে নাম লিখে রাখুন।
২০। আগামী দিন কী রান্না করবেন তার প্রস্তুতি রাতেই নিনতাহলে সময় বেঁচে যাবে।
২১। রান্না করার সময় অবশ্যই মাছ ও সবজির কম্বিনেশনের ব্যাপারে নজর রাখবেন ।
২২। মাছ রান্না করে কাঁচা ধনিয়া পাতা থাকলে তা কুচি করে কেটে বিছিয়ে দিন, স্বাদ অনেকগুণ গুন বেড়ে যাবে।
২৩। ডালে বাগার দিতে রসুন কুচি তেলে ভেজে ডালে দিয়ে দিন।
২৪। মাংশ জাতীয় রান্না করে শেষে বেরেস্তা (পেঁয়াজ কুচি ভাজি) ছড়িয়ে দিন এতে স্বাদ বেড়ে যাবে।
২৫। ডিম সিদ্ব করতে পানিতে সামান্য লবন দিয়ে নিন এতে ডিম খেতে সুস্বাদু হবে। আর ঠান্ডা করে ডিম ছিলুন তাহলে খোসায় লেগে ডিম নষ্ট হবে না।
২৬। চুলায় হাড়ি পাতিলে ঢাকনা থাকলে তা খালি হাতে ধরবেন না।
২৭। ভর্তা বানাতে মরিচ খালি হাতে ঢলবেন না এতে হাতে জ্বলুনি হবে।
২৮। মাছ ভাঁজতে কড়াই হতে নিদিষ্ট দূরে থাকুন। মাছে পানি থাকলে কিংবা ফুটে আপনার গায়ে বা চোখে তৈল পড়তে পারে।
২৯। শুকনা মরিচ ভাজার সময় মরিচ পোড়ার ঝাঁঝে হাঁচি-কাশি রোধে রান্নাঘরের দরজা জানালা ভাল করে খুলে দিন।
৩০। ভাজিতে তেল বেশী পড়ে গেলে ভাজিগুলো কড়াই বা প্যানের এক দিকে সরিয়ে কড়াই কাত করে কিছুক্ষণ রেখে দিন। তেল ভাজি থেকে ঝরে গেলে সংরক্ষন করে অন্য রান্নায় ব্যবহার করতে পারবেন। মাংসের তরকারীতে যদি তেল বেশী হয়ে পরে তবে উপর থেকে চামচ দিয়ে তেল উঠিয়ে ভাজিতে ব্যবহার করলে ভালোই সুস্বাদু লাগে।
৩১। এলাচ সম্পুর্ণ গুড়ো করে ব্যবহার করা ভাল এতে এলাচ কামড়ে পড়ে খাওয়ার মজা নষ্ট হবে না। আবার রান্নাতেও সুগন্ধ হবে।
৩২। সবজীর রং ঠিক রাখতে পাতিল ঢেকে রান্না না করাই ভাল। আর কিছু সবজিকে সামান্য সিদ্ব করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে কিংবা বরফ কুঁচিতে রাখলে রান্নার পরও রং ঠিক থাকে।
৩৩। কিছু ভাজিতে কড়াইতে তেল গরম হলে যা দেবেন তার সাথে সামান্য লবণ দিয়ে দিন, তেলের ছিটকা উঠবে না।
৩৪। ডালের মজা বৃদ্ধির জন্য বেশি সময় ধরে রান্না করুন, স্বাদ বেড়ে যাবে ।
৩৫। তেলাপিয়া মাছের গন্ধ দূর করতে তেলাপিয়া মাছ হলুদ ও ভিনিগার/লেবুর রস মাখিয়ে মিনিট ১৫ রেখে রান্না করুন।
৩৬। লাল সর্ষে্র ঝাঁঝ বেশী হয়। হলুদ সর্ষে ব্যাবহার করলে তিতা হয়না। সর্ষে বাটার সময় লবন আর কাচামরিচ এক সাথে বাটলে তিতা হয়না।
৩৭। বর্ষাকালে লবণ গলে যায় তাই এক মুঠো পরিষ্কার চাল পুটলি করে বেঁধে লবণের পাত্রে রেখে দিন।
৩৮। কাঁচের গ্লাসে গরম কিছু নিতে গেলে অনেক সময় ফেটে যায় তাই গরম কিছু ঢালবার আগে গ্লাসে একটি ধাতু নির্মিত চামচ রেখে ঢাললে গ্লাস ফাটবে না।
৩৯। আলু এবং আদা বালির মধ্যে ডুবিয়ে রাখলে অনেক দিন পর্যন্ত টাটকা থাকে।
৪০। যে কোনো খাবার রেফ্রিজারেটরে রাখলে ঢাকনা দিয়ে রাখা ভালো, ফলে এক খাবারের গন্ধ আরেক খাবারে যায় না এবং রেফ্রিজারেটও গন্ধ হয় না।
৪১। শিশি বা কৌটোর মধ্যে বিস্কুট রাখার আগে সামান্য চিনি বা মোটা কাগজের ঠুকরো রেখে দিলে বিস্কুট অনেকদিন মচমচে থাকে।
৪২। আঙ্গুর, টমেটো প্রভৃতি ফল ফুটন্ত পানিতে দু’মিনিট রেখে সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডা পানিতে রেখে সহজেই খোসা ছড়ানো যায়।
৪৩। চাল ও ডালের কৌটায় কয়েকটি শুকনো নিমপাতা বা শুকনো মরিচ রাখলে সহজে পোকা ধরবে না।
৪৪। কাঁচকলা ও লেবু প্রতিদিন অন্ততঃ এক ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে বেশিদিন টাটকা থাকে।
৪৫। কাঁচামরিচের বোঁটা ফেলে পানি শুকিয়ে কাপড়ের বা কাগজের প্যাকেটে সংরক্ষণ করলে বেশি দিন ভালো থাকে।
৪৬। চিকেন ফ্রাই, চিকেন রোল—এসব খাবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়িয়ে রাখলে সহজে নষ্ট হয় না।
৪৭। সিরকা ও সোডিয়াম বেনজোয়েট দিলে আচার দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
৪৮। আচার বয়াম থেকে নেওয়ার সময় পরিষ্কার চামচ ব্যবহার করলে আচারে ফাঙ্গাস পড়ে না।
৪৯। চিনির পাত্রের মধ্যে দু-চারটি লবঙ্গ দিয়ে রাখলে পিঁপড়ে ঢুকবে না।
৫০। খাবার পুড়ে পাত্রের তলায় আটকে থাকলে পাত্রটিকে নুনপানিতে ভর্তি করে পানি ফুটালে পোড়া অংশ দ্রুত আলাগা হয়ে উঠে যায়।
আপনার জানা আরও কোন সহজ ও মজার টিপস থাকলে নিচের মতামত অংশে শেয়ার করতে পারেন সবার সাথে।