আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ’ বলেছিলেন, “ফ্যাশন হলো অনুকরণের মহামারী রোগ।” তিনি হয়তো জানতেন না রোগের সাথে ফ্যাশনের তুলনা করা কতটা সঠিক হয়েছিলো। এটা প্রমাণিত যে, প্রতিদিনের ফ্যাশন ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বহু আগে থেকে আঁটসাঁট ব্রা পরার প্রচলন থাকলেও এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর একটি কাজ।
আমরা আপনার স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে ফ্যাশন সচেতন মানুষের ব্যবহার করা ক্ষতিকর পোশাক পরিচ্ছদ নিয়ে লেখাটি সাজিয়েছি। আপনার হয়তো ধারণাই নেই এসব পোশাক পরিচ্ছদ আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১. আঁটসাঁট জিনস্
জিনস্ হলে পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচিত পোশাক। অনেক মেয়ে এবং নারীরা তাদের কোমর এবং পায়ের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার জন্য আঁটসাঁট জিনস্ পরে থাকেন। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত, এই জিনসের কারণে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল ব্যাহত হয় যা ভেরিকোস ভেইন এবং সেলুলাইটের মতো সমস্যা সৃষ্টি হয়। ত্বকের সাথে কাপড় লেগে থাকায় ত্বকের অতি প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও ঠিক ভাবে সম্পন্ন হতে পারে না।
২. হাই হিল
মেয়েরা যখন হাই হিলের জুতো পরে, তখন তারা সাথে সাথেই পাল্টে যায়: তাদের আরো রমণীয় এবং ফিট দেখায়। তার মানে এই নয়, তাকে প্রতিদিন হাই হিলের জুতো পরে ঘুরতে হবে। ফ্যাশন করে এই জুতো প্রতিদিন পরলে কোমর, পিঠ এবং পায়ে ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি পা ফুলেও উঠতে দেখা যায়। অনেক সময় এর কারণে মেরুদণ্ডের আশেপাশে হার্নিয়া হয়ে থাকে।
৩. সমান তলার জুতো
মনে হতে পারে সমান তলার জুতো মোটেই ক্ষতিকর নয়। কিন্তু চিকিৎসকরা দাবি করেন, এই জুতো স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ এতে আপনার পায়ের ভার অসমান হবে। এসব জুতো আঘাত সহনশীল না হওয়ায় নিয়মিত পরার ফলে পায়ের পাতা নিজেই সমান হয়ে যায়। এতে পায়ে এবং পিঠে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে প্লান্টার ফাসাইটিসের কারণে গোড়ালি, পায়ের তালুতে অসহ্য যন্ত্রণা সৃষ্টি হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়।
৪. পুশ-আপ ব্রা
মেয়েদের মধ্যে এই ব্রা খুবই জনপ্রিয়। এই ব্রা পরলে স্তন আরো বেশি সুগঠিত, গোল এবং বড় দেখায়। কিন্তু পুশ-আপ ব্রা নিয়মিত পরলে স্তনের স্বাভাবিক আকার নষ্ট হয় এবং সাপোর্ট নিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। তাছাড়া স্তনের উপর চাপ বেড়ে যাওয়ায় রক্তনালী আটকে যায় এবং দীর্ঘ দিন এমন আঁটসাঁট থাকার ফলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
৫. সানগ্লাস
সানগ্লাস কেবল ফ্যাশন করার জন্যই নয়, প্রখর রোদে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়ও বটে। তবে পড়ন্ত বিকালে কিংবা ঘরের মধ্যে সানগ্লাস পরে থাকবেন না। এতে চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যা চোখের বিভিন্ন সমস্যার জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী। আর সবসময় সানগ্লাস পরিষ্কার রাখা জরুরি এবং এমন সানগ্লাস ব্যবহার করা উচিৎ নয় যা আপনাকে আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির হাত থেকে শতভাগ সুরক্ষা দেবে। অন্যথায় তা আপনার চোখের ১২টা বাজাবে।
৬. টাইটস্
মেয়েদের বহুল ব্যবহৃত টাইটস্ তাদের সৌন্দর্য এবং আভিজাত্যের প্রকাশ করে। এটি পায়ের সৌন্দর্য আরো অনেকগুণ ফুটিয়ে তোলে। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, প্রায়ই টাইটস্ পরার অভ্যাস আপনার পায়ের জন্য ক্ষতিকর। সিনথেটিক সুতায় তৈরি হওয়া এটি পায়ের আর্দ্রতা আটকে রেখে অনেকটা গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করে। ফলে ভ্যাজাইনাল ইনফেকশন সহ ভেরিকোস ভেইনস এবং সেলুলাইট সৃষ্টি হয়।
৭. বড় হাত ব্যাগ কাঁধে ঝোলানো
মেয়েদের হাত ব্যাগ এমন এক ভাণ্ডার যেখানে আপনি প্রসাধনী থেকে শুরু করে ল্যাপটপ পর্যন্ত খুঁজে পাবেন। তাদের জন্য হাত ব্যাগ যথেষ্ট উপকারী হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এই ব্যাগ সব সময় কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়ালে কাঁধে ব্যথা এবং মেরুদণ্ডে স্কোলিওসি ও অস্টিওকনড্রোসিস হয়ে থাকে। এছাড়াও দেহের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, পেশি শক্ত হয়ে যাওয়া এবং রক্তনালী আটকে যাওয়ার মতো গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি হয়।
৮. পায়জামা
নারী পুরুষ সবাইকেই পায়জামা পরতে দেখা যায়। কিন্তু সব সময় পায়জামা পরে থাকলে তাতে বিভিন্ন রকম ব্যাকটেরিয়া দেখা দিতে পারে। যা থেকে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন, প্রদাহ, চুলকানি অথবা ঈস্ট ইনফেকশন হতে পারে। যারা দীর্ঘদিন ধরে ঈস্ট ইনফেকশনে ভুগছেন চিকিৎসকরা তাদের পায়জামা।