ধ্যান হলো নামাজের প্রাণ। সূরা মুমিনুনের দ্বিতীয় আয়াতে মুমিনদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বলা হয়েছে, তারা ধ্যানের সঙ্গে নামাজ পড়ে। অর্থাৎ নামাজের ভেতর তাদের মন অন্য দিকে ছুটাছুটি করে না বরং তাদের মন নামাজের ভেতরেই নিমগ্ন থাকে।
নামাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর ধ্যান ঠিক রেখে নামাজের ভেতরে নিজের মনকে নিমগ্ন রাখা শুরুতে কিছুটা কঠিন মনে হলেও চেষ্টা অব্যাহত রাখলে সহজ ও সম্ভব। এ জন্য কয়েকটি উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।
প্রথমেই আসে নামাজের প্রস্তুতির কথা। নামাজের বাহ্যিক প্রস্তুতির কথা আমরা সবাই জানি ও মানি। যেমন- পবিত্রতা অর্জন করা, সতর ঢাকা, কিবলামুখী হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু নামাজের জন্য বাহ্যিক প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে মানসিক প্রস্তুতিও নিতে হয়। নিজেকে প্রশ্ন করে, মনে মনে ভেবে নিজেকে নামাজের জন্য প্রস্তুত করতে হয়। নামাজে দাড়াঁনোর আগেই আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি করতে যাচ্ছেন। কেন করতে যাচ্ছেন। আপনি কার সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছেন। তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী? তার ক্ষমতার পরিধি কত? এ নামাজ দ্বারা যদি আপনি তাকে সন্তুষ্ট করতে না পারেন তবে আপনার ক্ষতির পরিমাণ কত হবে? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর মনে জাগ্রত রেখে মুখে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে নামাজ শুরু করুন।
নামাজ শুরুর পর ভাবতে থাকুন, আপনি আল্লাহকে দেখতে না পেলেও তিনি কিন্তু সরাসরি আপনার নামাজ দেখছেন। আপনি তার সামনে আছেন। আরও ভাবুন, হতে পারে এটাই আপনার জীবনের শেষ নামাজ।
নামাজের প্রতিটি শব্দ খেয়াল করে উচ্চারণ করুন। যদি ইমামের পেছনে থাকেন তবে ইমামের উচ্চারিত প্রতিটি শব্দ খেয়াল করে শুনুন। যারা আরবি বুঝেন তারা অর্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে প্রতিটি বাক্য, শব্দ উচ্চারণ করুন ও শুনুন। প্রতিটি শব্দের বক্তব্য সরাসরি বুঝার ও মন থেকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন। যারা আরবি বুঝেন না, তারা নামাজকে সুন্দর করার জন্য আরবি ভাষা শেখার চেষ্টা করুন।
আরবি ভাষা শেখার জন্য আপনাকে অনেক সময় ব্যয় করতে হবে না এবং বেশি পরিশ্রমও করতে হবে না। একটা রুটিন করে নিন। নামাজে পঠিত আরবি বাক্যগুলোর কিছু কিছু প্রতিদিন অর্থসহ বুঝে শিখবেন। ধারাবাহিকভাবে এটা শুরু করুন। তাকবির, ছানা, সূরা ফাতিহাসহ কয়েকটি ছোট সূরা, তাশাহ্হুদ, দরুদ দোয়ায়ে মাছুরার প্রতিটি শব্দের অর্থ শিখুন। বাক্য পূর্ণ হলে বাক্যের অর্থ বুঝুন। প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে সময় ব্যয় করলে মাত্র এক বছরেই নামাজের পঠিত বাক্য ও শব্দগুলোর অর্থ আপনার জানা হয়ে যাবে। একজন শিক্ষিত মানুষের এ কাজটি খুব কঠিন কিছু নয়। শুধুমাত্র আপনার সদিচ্ছা ও আগ্রহই যথেষ্ট। অর্থের উপলব্ধি আপনার মনকে খুব সহজেই নামাজে নিমগ্ন রাখবে।