ঘুমের ঘরে নাক ডাকার সমস্যাকে আমরা অনেকেই হলকা চালে নিয়ে থাকি। কিন্তু বাস্তবে যা মোটেও হালকা ঘটনা নয়। কারণ নাক ডাকার অর্থ হল ঘুমনোর সময় নাসারন্ধ্র দিয়ে বায়ু চলাচল ঠিক মতো না হওয়া। আর এমনটা হওয়া মানে শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব পরা। তাই নাক ডাকার সমস্যা কমাতে সময় থাকতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। না হলে কিন্তু বেজায় বিপদ!
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্র অনুযায়ী নাক ডাকার প্রবণতা থাকলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ফলে আই কিউ তো কমেই, সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও ঝাপসা হতে শুরু করে। এখানেই শেষ নয়, আরও বেশ কিছু গবেষণা অনুসারে নাকা ডাকার কারণে স্ট্রোক, হার্ট ডিজিজ, অ্যারিথমিয়া, জি ই আর ডি, ক্রনিক মাথা যন্ত্রণা এবং ওজন বৃদ্ধির মতো সমস্যাও মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই সাবধান!
তবে অকারণ চিন্তার কোনও কারণ নেই। এই প্রবন্ধে আলোচিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলিকে যদি কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে দেখবেন কেল্লাফতে! যে যে ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল…
১. ক্যামোমাইল চা: একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এই বিশেষ ধরনের পানীয়টি গ্রহণ করলে শরীরের অন্দরে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা নাক ডাকার প্রবণতা কমায়। সেই সঙ্গে নার্ভ এবং পেশীর কর্মক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে এক কাপ গরম জলে, ক্য়ামোমাইল ফুলের নির্জাস দিয়ে তৈরি টি ব্যাগ কম করে ১৫ মিনিট চুবিয়ে রাখতে হবে। সময় হয়ে যাওয়ার পর চাটা পান করে শুতে যেতে হবে। এমনটা প্রতিদিন করতে পারলেই দেখবেন নাক ডাকা বন্ধ হয়ে যাবে।
২. এলাচ: অনেক সময় নাকের অন্দরে কোনও বাঁধা থাকার কারণেও নাক ডাকার মতো সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে নিয়মিত ঘুমনোর আগে এলাচ চা খেলে কিন্তু দারুন উপকার মেলে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটি অন্দরে উপস্থিত একাধিক উপাকারি উপাদান নাকের ভিতরের বাঁধা সরিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক করতে বিশেষ ভূমিকা নেয়। আর একবার শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক মতো হতে থাকলে নাক ডাকার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
৩. পিপারমেন্ট তেল: এই প্রকৃতিক উপাদানটির শরীরে রয়েছে ইনফ্লেমেটরি উপাদান, যা মেমব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ঘুমনোর সময় শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিক মতো হওয়ার কারণে নাক ডাকার প্রবণতা কমতে শুরু করে। এক্ষেত্রে শুতে যাওয়ার আগে এক গ্লাস জলে ২ ফোঁটা পিপারমেন্ট তেল ফেলে সেই জল দিয়ে গার্গেল করতে হবে। তাহলেই দেখবেন উপকার মিলবে।
৪. স্টিম: অনেক সময় সর্দি-কাশির কারণেও নাক দিয়ে বায়ু চলাচল ঠিক মতো হতে পারে। ফলে ঘুমানোর সময় নাক দিয়ে ওয়াজ বেরতে শুরু করে। এক্ষেত্রে কিছু সময় অন্তর অন্তর গরম ভাব নিলে দারুন উপকার পাওয়া যায়। তাই এবার থেকে সর্দি-কাশি হলেই এই ঘরোয়া পদ্ধতিটির সাহায্য নেবেন। দেখবেন ঘুমনোর সময় কোনও সমস্যাই হবে না।
৫. হলুদ: অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদানে পরিপূর্ণ এই প্রকৃতিক উপাদানটি গ্রহণ করলে শরীরের অন্দরে ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কমে নাক ডাকার প্রবণতাও। এক্ষেত্রে প্রতিদিন শুতে যাওয়ার ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস গরম দুধে ২ চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে পান করার অভ্যাস করতে হবে। এমনটা করলেই দেখবেন রাতের ঘুমে কেউ ব্যাঘাত ঘটাতে পারবে না।
৬. অলিভ অয়েল: রাত্রে শুতে য়াওয়ার আগে মনে করে দু চামচ অলিভ অয়েল খেলে শরীরে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। ফলে রেসপিরেটরি প্যাসেজ খুলতে শুরু করে। আর একবার এমনটা হয়ে গেলে বাতাস চলাচলে কোনও বাঁধার সৃষ্টি হয় না, ফলে নাক ডাকার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
৭. রসুন: নাকের অন্দরে মিউকাস জমতে বাঁধা দেয় এই প্রকৃতিক উপাদানটি। সেই সঙ্গে রেসপিরেটারি সিস্টেমের উন্নতি ঘটায়। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হতে শুরু করে, কমতে শুরু করে নাক ডাকার সমস্যা। এক্ষেত্রে নিয়মিত ১-২ টো রসুনের কোয়া চিবিয়ে, এক গ্লাস জল খেয়ে শুতে যেতে হবে। তাহলেই দেখবেন নাসিকা গর্জন আর আপনাকে বা আপনার প্রিয়জনকে বিপদে ফেলতে পারবে না।
৮. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: কোনও কারণে নাকের অন্দরে মিউকাস জমতে শুরু করলে বায়ু চলাচল ঠিক মতো হতে পারে না। ফলে নাক দিয়ে বিকট আওয়াজ বেরতে শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে, যেমন ধরুন- পাতি লেবু, কমলা লেবু, মুসুম্বি লেবু প্রভৃতি। আসলে শরীরে এই বিশেষ ধরনের ভিটামিনটির মাত্রা বাড়তে থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রোগ ভোগের আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি নাকে সর্দি বা মিফকাস জমে নাক ডাকার প্রবণতাকেও কমায়।
৯. মধু: রাতে শুতে যাওয়ার আগে নিয়ম করে যদি এক গ্লাস গরম জলে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, তাহলে নাকা ডাকার সমস্যা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগই পায় না। কারণ মধুর অন্দরে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি উপাদান গলার প্রদাহ কমায়। সেই সঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক করে তোলে। ফলে নাক ডাকার সম্ভাবনা কমে।
১০. ঘি: নাক ডাকার সমস্যা কমাতে ঘি-এর কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে অল্প পরিমাণ ঘি গরম করে তার থেকে ২-৩ ড্রপ করে নিয়ে যদি নিয়মিত নাকে দেওয়া যায়, তাহলে নাসিকা গর্জ থামতে একেবারেই সময় লাগে না। আসলে ঘিয়ে উপস্থিত বেশ কিছু উপকারি উপাদান নাকের অন্দরে বায়ু-চলাচলের পথকে খোলা রাখতে সাহায্য করে। ফলে নাক ডাকার প্রবণতা একেবারে কমে যায়।