জীবনটাকে গুছিয়ে নিতে চাই আমরা সবাই । কর্মব্যস্ত সময়ে নিজের সংসার আর সবকিছু গুছিয়ে রাখার জন্য পরিবারের সদস্য সংখ্যাও সীমিত রাখতে চাই আমরা । আর সেজন্য জন্মনিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই । আবার অনেক তরুণ নব-দম্পতিই চান বিয়ের পর তাদের নিজেদের জন্য কিছুটা সময় রাখতে , সন্তান পালনের মত বিরাট দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার আগে নিজেদেরকে তৈরি রাখতে চান অনেকে । সেজন্যও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো জানা জরুরি ।
আমাদের নিত্য ব্যবহার্য জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর মাঝে সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় ঔষধ হলো জন্মবিরতকরণ পিল (মেয়েদের জন্য) ও নিরোধক হলো কনডম (ছেলেদের জন্য) ।
কিন্তু অনেকের কাছেই জন্মনিয়ন্ত্রণের এই পদ্ধতিগুলো পছন্দনীয় নয় । বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রক পিলের অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে । যেমন : মাথা ঘোরা , বমি ভাব হওয়া ,অল্প অল্প রক্তস্রাব ইত্যাদি । আর কনডম মিলিত হবার সময় ব্যবহার করতে অনাগ্রহী থাকেন অনেক পুরুষ । তাছাড়া কনডম কখনোই ১০০% ভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারে না । সামান্য একটু ফুটো হয়ে গেলেও ঘটে যেতে পারে গর্ভধারণ ।
প্রাকৃতিক উপায়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের যে পদ্ধতিগুলো রয়েছে , সেগুলো হলো –
১. ক্যালেন্ডার পদ্ধতি বা সেইফ পিরিয়ড মেথড
এটা খুব পুরাতন একটি পদ্ধতি , বিজ্ঞানী ওগিনো ১৯৩০ সালে এটা প্রথম বর্ণনা করেন । এই পদ্ধতিটি মূলত গড়ে উঠেছে মাসিকের পর কবে মেয়েদের ডিম্বপাত হয় তার উপর ভিত্তি করে । এই বিজ্ঞানী বলেন , যাদের নিয়মিত মাসিক হয় তাদের মাসিক শুরু হবার ১২ তম থেকে ১৬ তম দিনের মাঝে ডিম্বপাত হবে । তাই এই সময়ে যদি কেউ কোন ধরণের জন্মনিরোধক বা জন্মনিয়ন্ত্রক ছাড়া মিলিত হন তবে তাদের গর্ভবতী হয়ে পরার সম্ভাবনা খুবই বেশি । তবে আধুনিককালে এই সময়কে আরেকটু বাড়িয়ে ১০ম দিন থেকে ১৮ তম দিন পর্যন্ত ধরা হয় ।
অর্থাৎ আপনার রজঃচক্র যদি ২৮ দিনের হয়ে থাকে তবে আপনি ধরে নিতে পারেন পিরিয়ড শুরু হবার দিনকে প্রথম দিন ধরে নবম দিন পর্যন্ত আপনি মোটামুটি নিরাপদ । এবং মাঝে ৯-১০ দিন বিরতি দিয়ে আবার ১৯ তম দিন থেকে আপনার নিরাপদকাল শুরু । মোদ্দা কথা পিরিয়ড শুরুর আগের দশদিন ও পিরিয়ড শেষে পরের ৮-৯ দিন আপনার গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম । তবে শুক্রানু ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টার মাঝে ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে পারে বলে সময়টাকে একটু বাড়িয়ে নেওয়াই ভাল ।
অনেক ধর্মের ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী পিরিয়ডের সময় মিলিত হওয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে । তবে সেই সময়ও গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা একদমই কম । কিন্তু পিরিয়ডের সময় যৌনমিলন এড়িয়ে চলাটা তুলনামূলক ভাবে ভালো । আর এই সেইফ পিরিয়ড বা ক্যালেন্ডার পদ্ধতি কেবলমাত্র তখনই আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করবে যদি আপনার মাসিক/রজঃচক্র নিয়মিত ও নির্দিষ্ট দিনের বিরতি হয় । নইলে এ পদ্ধতি অনুসরণ করা রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ ।
২. শারিরীক অবস্থা পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি
মাসিকের ১০ম থেকে ১৮তম দিনের মাঝে ডিম্বপাত বা ওভ্যুলেশনের সময় মেয়েদের শরীরে বেশ কিছু পরিবর্তন হয় এবং এ পরিবর্তন বেশ কিছুদিন যাবত শরীরে থাকে । এই পরিবর্তনের সময়টুকুতে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকলে গর্ভবতী হবার সম্ভাবনা বেশ কম থাকে । পরিবর্তনগুলো হলো –
– শরীরের তাপমাত্রা খানিকটা বেড়ে যাওয়া
– যে পাশের ডিম্বানু থেকে ডিম্বপাত হয় , পেটের সেইপাশ ব্যথা করা
– স্রাবের ধরণে পরিবর্তন হওয়া
ডিম্বপাতের সময় জরায়ু থেকে বের হওয়া নিঃসরণে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে । ডিম্বপাতের সময় স্রাবের প্রকৃতি হয় পানির মতো পরিষ্কার , পিচ্ছিল , পাতলা এবং পরিমান হয় খুব বেশি – সব মিলিয়ে একে কাঁচা ডিমের সাদা অংশের সাথে তুলনা করতে পারেন আপনি ।
আর ডিম্বপাতের ঠিক পর পর (তখনও গর্ভধারণের ঝুঁকি থাকে খুব বেশি) প্রোজেস্টেরন হরমোনের প্রভাবে নিঃসরণ বেশ ঘন হয় এবং পরিমান তুলনামূলকভাবে কমে আসে । টিস্যু পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি স্রাবের ধরণ আলাদা করে নিরাপদ যৌনমিলনের দিনগুলো নিজেই নির্ধারণ করতে পারেন ।
৩. উইথড্রয়িং মেথড
এটা জন্মনিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে প্রাচীন পদ্ধতি । এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করবেন পুরুষ সদস্য । এই পদ্ধতিতে শুক্রানু স্খলনের চরম মুহূর্তে পুরুষ সদস্য নিজেকে মিলিত অবস্থা থেকে সরিয়ে আনবেন যাতে নিঃসৃত শুক্রানু বাইরে পরে । এ বিষয়ে খুব সচেতন থাকা উচিৎ কারণ একফোঁটা শুক্রক্ষরণ থেকেও গর্ভধারণ হতে পারে । তবে অনেক ধর্মেই এই পদ্ধতি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে ।
৪. স্তন্যদানের সময়
বাচ্চা হবার পরপর যদি মা বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ান তবে সেই সময় নিঃসৃত হরমোনের প্রভাবে অনেকদিন পর্যন্ত ডিম্বপাত বা মাসিক হয় না । তাই সে সময়ও জন্মনিয়ন্ত্রক ছাড়া মিলন তুলনামূলকভাবে কম ঝুঁকিপূর্ণ ।
তবে যত যাই বলা হোক না কেন , এত সব প্রাকৃতিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হলেও গর্ভধারণের ঝুঁকি রয়েই যায় । হিসেবে গন্ডগোল হলে সেইফ পিরিয়ড অনুসরণ করা হবে শুধুই ব্যর্থতার নামান্তর । অপরদিকে কনডম ব্যবহার করা হলে এক সদস্য থেকে অপর সদস্যে বিভিন্ন রোগ ছড়ানর সম্ভাবনা যেমন কমে যায় , তেমনি জন্মবিরতিকরণ পিল ব্যবহার করলে কমে গর্ভধারণের ঝুঁকি । তাই প্রাকৃতিক পদ্ধতির সাথে সাথে যদি কোন কৃত্রিম পদ্ধতিও অনুসরণ করা হয় , তবে সেটাই হবে সবচেয়ে লাভজনক !