চিকেন পক্স (জল বসন্ত) কি
জীবানু নাম: ভেরিসেলা জোস্টার,
কিভাবে ছড়ায়: ড্রপলেট বা বাতাসের মাধ্যমে শ্বাসের সাথে। ইহা খুবই সংক্রামক!
ইনক্যূবেশান সময়: ১৪ থেকে ২০দিন (জীবানু প্রবিষ্ট হওয়াহতে লক্ষন দেখা দেয়া পর্যন্ত)
বছরের যে কোন সময় এ রোগ হতে পারে, তবে আমাদের দেশে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এরোগ ছড়াতে পারে এবং ব্যাপক ভাবে দেখা যায়।
আক্রান্ত হওয়ার ১৪-২০দিনের মধ্যে শরীরের বিভিন্ন
(শুরু হয় শরীরের ঝিল্লি আবরণীতে যেমন মুখের ভিতরে, চোখের পাতার ভেতরে, নাসারন্ধ্রের ভেতরে)
অংশে ভেসিকুলার ইরাপশান (০.৫মিমি ব্যাসের কম পানির থলের মতো ছোট ছোট দানা) দেখা দেয় যা শরীরের কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন দিকে ছড়াতে থাকে।
এদানা দেহে খুব ঘন এবং হাত পায়ে হাল্কাভাবে দেখা দেয়।
এ দানাগুলো প্র্রথমে লাল ছোট ছোট হয়ে দেখা দেয় যা ২৪ ঘন্টার মধ্যে পাস্তিউল (০.৫মিমি ব্যাসের কম ছোট ছোট পুঁুজের থলের মতো) ছোট ছোট ফোস্কাতে পরিনত হয়।
প্রতি ২-৪দিন অন্তর নুতন নুতন দানা গ্রুপ দেখা দিতে থাকে।
প্রতিবার নুতন দানা দেখা দেয়ার সময় তীব্র জ্বর দেখা দিতে পারে।
প্রতি গ্রুপের দানার উপরের পাতলা আবরন ৩-৫ দিনের মধ্যে শক্ত হয়ে ক্রাষ্ট সৃষ্টি করে।
এইক্রাষ্ট উঠে যাওয়া পর্যন্ত রোগী সংক্রামক থাকে অর্থাৎ রোগী রোগ ছড়াতে পারে।
তীব্র চুলকানির কারনে কচলানো ফলে নকের আঘাতে দানা গুলো ছিড়ে গিয়ে জীবানু সংক্রমন হয়ে ঘা হয়ে যেতে পারে।
চিকেন ফক্স বা জল বসন্ত রোগের জটিলতা সমুহঃ
শিশুদের ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্বক না হলেও বয়স্কদের, গর্ভবতীদের এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে এরকম লোকদের ক্ষেত্রে এ রোগ মারাত্বক হতে পারে।
গর্ভবতীদের হলে ৩% গর্ভবতীর বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
জম্মের ৫দিনের মধ্যে এইরোগ হলে মারাত্বক ভাইরেমিয়াÀ জনিত কারণে বাচ্চার মৃত্যূ হতে ও পারে।
ধুমপায়ি, গর্ভবতী এবং ইমিউনিটি-কম§ এ রকম এরকম লোকদের জলবসন্তের সাথে সাথে বা পরপরই মারাত্বক নিউমোনিয়া হতে পারে।
চুলকানোর কারনে নখের আঘাতে ছিড়ে গিয়ে জীবানু সংক্রমন হয়ে ঘা হয়ে যেতে পারে।
যাতে স্ট্র্যাপটোকক্কাস জীবানু থাকলে রিউম্যাটিক ফিবার বা কিডনির রোগ নেফ্রাইটিস হতে পারে।
আবার স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস থাকলে তা রক্তে-বাহিত হয়ে অস্থিমজ্জার (অষ্টিও মায়েলাইটিস) সংক্রমন ও প্রদাহ করতে পারে।
চিকেন পক্স বা জল বসন্তের জন্য কিছু গৃহ চিকিৎসাঃ
১. বেকিং সোডা
বেকিং সোডা চামড়াকে পরিস্কার করে
এবং পোড়ানি কমায়।
এক গ্লাস পানিতে আধা চা চামচ বেকিং
সোডা গুলিয়ে নিন
আক্রান্ত ব্যাক্তিকে এই সলিউশন
দিয়ে মুছে দিন
যখন বেকিং সোডা চামড়ার উপরে
শুকিয়ে যাবে, চুলকানি বন্ধ হয়ে যাবে।
২. মধু
মধু ক্ষত সারিয়ে তুলতে এবং এর দাগ
দূর করার ক্ষমতা আছে।
মধু প্রয়োগ
করলে ফোস্কা গুলি সেরে উঠবে এবং
চুলকানি থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
দিনে ২ থেকে ৩ বার ক্ষতস্থানের
শুকনা আবরণের উপর মধু মেখে দিন,
ক্ষত দূর হয়ে যাবে।
৩. ওট মিল
চুলকানি চিকেন পক্সের সবচেয়ে বড়
সমস্যা। ওট মিল দিয়ে গোসল চুলকানি
থেকে মুক্তি দিতে পারে।
দুই কাপ ওট মিল চূর্ণ নিন
এক লিটার পানিতে এই চূর্ণ ১০ থেকে
১৫ মিনিট ধরে গুলে নিন।
এই মিশ্রণটি কাপড়ের ব্যাগে নিয়ে মুখ
বেধে নিন।
ব্যাগটি গোসলের পানিতে ছেড়ে দিন
এবং পানি দুধের মত সাদা দেখতে হওয়া
পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
এই পানি দিয়ে গোসল করুন।
৪. সবুজ মটর দানা
মটর দানা চুলকানির কারণে পোড়ানি
কমায়
২০০ গ্রাম সিদ্ধ সবুজ মটর দানা
নিন
এগুলি বেটে একটি পেস্ট তৈরি করুন
এটি ফোস্কার উপরে মেখে এক ঘণ্টা
রেখে দিন
৫. নিম
নিমের উচ্চ মাত্রার সংক্রমণ বিরোধী
গুণাগুণ আছে এবং এটি চামড়ার বিভিন্ন
রকমের সমস্যার চিকিৎসায় ব্যবহৃত
হয়।
নিমপাতা বাটা দিয়ে তৈরি পেস্ট
চুলকানি কমায় এবং দ্রুত আরোগ্য
করে।
নিমপাতা পানির সাথে মিশিয়ে বেটে
পেস্ট তৈরি করে ফোস্কার উপর
প্রয়োগ করুন।
১০ থেকে ১৫ মিনিট পরে এটি ধুয়ে
ফেলুন।
নিমপাতার আগুনের ধোঁয়া বাতাসে
উপস্থিত ভাইরাসকে মেরে ফেলতে
সাহায্য করে। এ পদ্ধতি অন্য মানুষের
কাছে এ রোগ ছড়িয়ে পরতে বাধা দেয়।
চুলকানি কমানোর জন্য নিমপাতা সিদ্ধ
পানিও ব্যবহার করতে পারেন।
৬. হলুদ
হলুদেরও সংক্রমণ বিরোধী এবং
ব্যাকটেরিয়া বিরোধী গুণাগুণ আছে।
বিভিন্ন ভাবে আপনি হলুদ ব্যবহার
করতে পারেনঃ
চুলকানি কমাতে এবং দ্রুত সেরে উঠতে
২-৩ চা চামচ হলুদ যুক্ত গরম পানি
দিয়ে গোসল করতে পারেন।
চিকেন পক্সের কারণে ক্ষত নিরাময়ের
জন্য আপনি হলুদ এবং নিমপাতা দিয়ে
তৈরি পেস্ট ফোস্কার উপর প্রয়োগ
করতে পারেন।
৭. বাদামী ভিনেগার
এটি সাধারণত চিকেন পক্সের জন্য
একটি অন্যতম সবচেয়ে বেশী ব্যবহৃত।
চিকিৎসাঃ
১/২ কাপ বাদামী ভিনেগার গোসলের
জন্য মৃদু গরম পানিতে মিশিয়ে নিন।
পোড়ানি থেকে মুক্তি পেতে এবং
সংক্রমিত ক্ষত সারিয়ে তুলতে এই
পানি দিয়ে গোসল করুন।
৮. চন্দন কাঠের তেল
এটি চিকেন পক্সের নানারকম উপসর্গ
চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
চিকেন পক্সের কারণে হওয়া ফোস্কার
উপরে খাঁটি চন্দন কাঠের তেল মাখুন।
নিয়মিত চন্দন কাঠের তেল ব্যবহারে
চিকেন পক্সের ক্ষতের দাগ দূর হয়।
৯. ভিটামিন ই তেল
চিকেন পক্সের চিকিৎসায় এবং এর
ক্ষতের দাগ সারিয়ে তুলতে এটি
আরেকটি কার্যকর চিকিৎসা।
ত্বকের উপর ভিটামিন ই তেল মাখুন।
এটি চিকেন পক্সের ফোস্কা এবং এর
চিহ্ন গুলির নিরাময়েও সাহায্য করে।
১০. ভেষজ চা
চিকেন পক্স নিরাময়ের জন্য
প্রয়োজনীয় নির্দিষ্ট উপাদান গুলি
দিয়ে তৈরি ভেষজ চা পান করলে তা এর
নিরাময়ে বেশ কার্যকর হয়।
পুদিনা, ক্যামোমিল, ম্যারিগোল্ড ফুল
বা লেমন বাল্ম জাতীয় ভেষজ উপাদান
দিয়ে চা তৈরি করুন।
এর সাথে ১/৪ চা চামচ দারুচিনির
গুঁড়া, ১ চা চামচ মধু এবং ১ চা চামচ
লেবুর রস যোগ করুন।
এভাবে তৈরি চা দৈনিক ৩ থেকে ৪ বার
পান করলে সংক্রমণ জাতীয় ক্ষত
দ্রুত নিরাময় হয়।
১১. আদা
আদার যে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী গুণাগুণ
আছে তা চুলকানি কমায়।
আপনার গোসলের পানিতে ২-৩ চা
চামচ আদা চূর্ণ মিশিয়ে নিন।
আপনি আদা দিয়ে তৈরি পানীয় পান
করতে পারেন। আদা ছোট ছোট টুকরা
করে কাপে নিয়ে পাঁচ মিনিট ধরে ফুটান
এবং এর সাথে ১ চা চামচ মধু মেশান।
দ্রুত নিরাময়ের জন্য এই মিশ্রণ পান
করুন।
১২. Calamine লোশন
Calamine লোশন চুলকানি দূর করে।
গরম পানি দিয়ে গোসল করুন এবং শরীর
শুকিয়ে নিন।
ত্বকের উপরে Calamine লোশন
মাখুন।
ভাল ফলাফল পাওয়ার জন্য দিনে ২-৩
বার এ চিকিৎসাটি বার বার করুন।
১৩. মসলা এবং তেলের আধিক্য যুক্ত
খাবার পরিহার করুন
আপনার মুখের মধ্যে যদি সংক্রমণ
জনিত ক্ষত থাকে তবে মসালা যুক্ত
খাবার বিশেষভাবে পরিহার করুন।
মসলা এবং তেল যুক্ত খাবার লালা নিঃসরণের
পরিমাণ বাড়াতে পারে যা ক্ষতের
সংক্রমণকে আরও খারাপ পর্যায়ে নিয়ে
যেতে পারে।
কম স্বাদের, তেল কমযুক্ত খাবার
ক্ষত স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসা
পর্যন্ত অন্তত দশ থেকে পনের দিন
যাবত খেতে থাকুন।
১৪. গাজর এবং ধনিয়ার স্যুপ
১০০ গ্রাম গাজর এবং ৬০ গ্রাম
ধনে পাতা কেটে নিন।
দুই কাপ ফুটন্ত পানিতে এগুলি
কিছুক্ষণের জন্য দিন। এখন এগুলি
তুলে ফেলে অবশিষ্ট টুকু স্যুপ হিসাবে
পান করুন। চিকেন পক্স কার্যকরভাবে
নিরাময়ের জন্য কয়েকদিন এরকম ভাবে
চালিয়ে যান।
১৫. পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিন
কার্যকর ভাবে চিকেন পক্স নিরাময়ের
জন্য বিশ্রাম খুবই প্রয়োজনীয়।
শান্ত, বাতাস চলাচল যুক্ত ঘরে দিনের
বেশীর ভাগ সময় বিছানায় শুয়ে কাটান
যাতে আপনি চিকেন পক্স থেকে
কার্যকর ভাবে মুক্তি পেতে পারেন।
সূর্যালোক এবং যন্ত্রণাদায়ক আলো
যেন চোখে না পরে তা নিশ্চিত করুন।
কিন্তু এমন ঘরে থাকুন যেখানে উত্তম
রূপে বাতাস চলাচল করে।
এই রোগটি ছোয়াছে। অক্রান্ত ব্যাক্তির সংস্পর্শে আসলে, এটি ছড়িয়ে পড়ে।
আক্রান্ত ব্যাক্তির ব্যবহৃত জিনিস পত্র ব্যাবহার করলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।