“…কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক”- রং কালো হলে নানা সময় নানা বাঁকা কথা শুনতে হয়। অনেকে সেসব কথা শুনে ভেঙে পড়েন। সহজে জনসমক্ষে আসতে চান না। সেই সঙ্গে দিনরাত ফেয়ারনেস ক্রিমের বিজ্ঞাপন। গায়ের রং ফর্সা না হলে যেন জীবন বৃথা। ফেয়ারনেস ক্রিম প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি ক্রেতা টানতে কালো মানুষদের মনোবল ভাঙারই চেষ্টা করে। সেই ফাঁদে পা দিয়ে আপনিও ফর্সা হওয়ার দৌড়ে নাম লেখান। ব্যবহার করতে শুরু করেন ফেয়ারনেস ক্রিম। তাতে আখেরে লাভ তো কিছু হয়ই না, উলটে কেমিক্যালের প্রভাবে নষ্ট হতে থাকে ত্বক।
গায়ের রঙের কারণে এই হীনমন্যতা বোধ মন থেকে দূর করুন। ফর্সা হলেই দেখতে সুন্দর হওয়া যায়, এ ধারণা ভুল। যাদের গায়ের রং কালো, তাদের মন ভালো করে দিতে পারে বা মানসিক শক্তি জোগাতে পারে, এমন একটি তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। গবেষণায় জানা গেছে, কালো ত্বক আসলে অনেক বেশি সুস্থ। ত্বকের রং কালো হওয়ার কারণ ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিনের উপস্থিতি। এই মেলানিন নানাভাবে ত্বককে রক্ষা করে। কালো রঙের বেশকিছু সুবিধা রয়েছে। সেগুলি জানার পর হয়তো মন থেকে ফর্সা হওয়ার ইচ্ছাটাই চলে যাবে।
UV রশ্মি প্রতিরোধ
গায়ের রং কালো হওয়ার সবথেকে বড় সুবিধা হল, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি তেমন কোনও প্রভাব ফেলতে পারে না। কালো ত্বকে মেলানিন বেশি পরিমাণে থাকে। আর, মেলানিন বেশকিছু ক্ষেত্রে ত্বককে UV রশ্মি থেকে বাঁচায়। সানবার্ন হতে দেয় না।
প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি
মেলানিন ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অতিরিক্ত তাপ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে বাঁচার ক্ষমতা বেশি থাকে কালো ত্বকে। শুধু, তাই নয়, মেলানিন নানাধরনের জীবাণু থেকেও ত্বককে রক্ষা করে।
ত্বকে ক্যানসারের আশঙ্কা কম
মেলানিনের উপস্থিতি ত্বকের ক্যানসারের আশঙ্কা অনেকটা কম করে। কালো ত্বকে মেলানিন বেশি থাকে। তাই, ত্বকের ক্যানসার তুলনামূলকভাবে কম হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের ত্বকের ক্যানসারের হার কম। US-এ কৃষ্ণাঙ্গদের তুলনায় শ্বেতাঙ্গদের ত্বকে ক্যানসার প্রায় “৫০ গুণ” বেশি হয়।
নার্ভের সমস্যা কম
Cryptococcus neoformans নামক একধরনের পরজীবী জীবাণু মাঝেমধ্যে আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে (nervous system) প্রবেশ করে। যা থেকে হতে পারে নার্ভের নানারকম সমস্যা। এই জীবাণু থেকে মেলানিন আমাদের রক্ষা করে। এই কারণে শ্বেতাঙ্গদের নার্ভের সমস্যা বেশি হয়। PKU বা পারকিনসন্স জাতীয় রোগ কৃষ্ণাঙ্গদের সহজে কাবু করতে পারে না।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি
মেলানিন আমাদের শরীরকে আরও নানারকম জীবাণু থেকে রক্ষা করে। জীবাণু নাশ করতেও এর জুড়ি মেলা ভার। গবেষকদের মতে, এই কারণেই গভীর জঙ্গলে কাটানোর পর শ্বেতাঙ্গ সৈনিকরা কৃষ্ণাঙ্গ সৈনিকদের তুলনায় বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সংক্রমণ থেকে বাঁচায়
মেলানিন এমন কিছু উপাদান থাকে, যা নানাধরনের সংক্রমণ রোধে সক্ষম। শরীরের যে কোনও অংশে সংক্রমণ হলে তার থেকে বাঁচায় মেলানিন। দেহের অনেক অংশ আছে, যা খুবই স্পর্শকাতর এবং জীবাণু থেকে এদের অতিরিক্ত সুরক্ষা প্রয়োজন। দেখা গেছে, সেইসব অংশে মেলানিনের পরিমাণ বেশি থাকে।
ত্বক সুস্থ রাখে
শুধু রোগ প্রতিরোধই নয়, ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও দারুণ কার্যকরী মেলানিন। স্কিন এজিংয়ের মতো সমস্যা থেকে দূর করতে সক্ষম মেলানিন। কালো ত্বক কোঁচকানো ভাব, রুক্ষতা, শুষ্কতা বা দাগছোপ কম থাকে। তাই, অনেকদিন পর্যন্ত ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না। ফর্সা মহিলাদের তুলনায় কালো মহিলাদের ত্বক স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়।