মরণঘাতী রোগের মধ্যে ক্যানসার অন্যতম একটি। যা মানুষকে মৃত্যুর দুয়ারে পৌঁছে দেয়। এ কারণে ক্যানসার রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা থাকা দরকার।
বেশিরভাগ সময় দেখা যায় পুরুষদের ক্যানসার হলে সেটা একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়ে না। কারণ ক্যানসারের লক্ষণগুলোকে ছোটখাটো কোনো সমস্যার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে তা অগ্রাহ্য করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থায় যদি ক্যানসারের লক্ষণগুলো সনাক্ত করা যায় তাহলে ক্যানসার পুরোপুরি সারিয়ে তোলা সম্ভব হতে পারে।
পুরুষদের ক্যানসারের আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, খাবার গিলতে সমস্যা, বিশ্রামের অভ্যাসে পরিবর্তন, গলার স্বর কর্কশ বা ফ্যাঁসফেঁসে হয়ে যাওয়া, মুখের পরিবর্তন এবং পাকস্থলী বা তলপেটে ব্যথা, অজানা কারণে ওজন কমে যাওয়া প্রভৃতি। খবর এনডিটিভি হেলথ।
অজানা কারণে ওজন কমা:
মুটিয়ে যাওয়ার কারণে সুস্বাস্থ্যের জন্য ওজন কমানোর চেষ্টা করা এদের জন্য হঠাৎ করে ওজন কমা কোনো সমস্যা না। তবে কোনো প্রকার কোনো কারণ ছাড়াই যদি ওজন কমে যায় তাহলে সেটি বিপদের লক্ষণ। কারণ হলো- অগ্নাশয়, পাকস্থলি বা ফুসফুসের ক্যানসার হলে হঠাৎ করেই ওজন কমে যেতে পারে।
এছাড়াও ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস বা যক্ষ্মা, থাইরয়েড গ্রন্থির অতিসক্রিয়তা হলে হঠাৎ করেই ওজন কমে যেতে পারে।
প্রস্রাবে পরিবর্তন:
প্রস্রাবের প্রবাহ বন্ধ করতে সমস্যা, প্রস্রাবের প্রবাহ শুরু করতে সমস্যা, স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল প্রস্রাবের স্রোত, প্রস্রাব ঝরা কিংবা প্রস্রাব চুইয়ে পড়া, অন্ডকোষের অথবা অন্ডকোষের ভেতরের মাংসপিণ্ডের আকার এর স্ফীতি বা সংকোচন, অন্ডকোষের ওজন বেড়ে যাওয়া এবং লিঙ্গোত্থানে সমস্যা, দিনে কতবার প্রস্রাব করা হচ্ছে সেই হার-এ পরিবর্তন। প্রস্রাবের প্রবাহে এই পরিবর্তনগুলো হতে পারে ক্যানসারের লক্ষণ।
স্তনে পরিবর্তন:
যত স্তন ক্যানসার হয় তার মাত্র ১% হয় পুরুষদের স্তনে। এ কারণে বলা যায়, পুরুষদের স্তন ক্যানসার হওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। আর এ কারণেই পুরুষরা স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো অগ্রাহ্য করেন। পুরুষদের স্তন ক্যান্সার হয় মূলত ইস্ট্রোজেন হরমোনের উচ্চ মাত্রা, ক্ষতিকর বিকিরণ বা পারিবারিকভাবে স্তন ক্যানসারের ইতিহাস থাকলে।
পুরুষদের স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলো হলো- স্তনের বোটায় ব্যথা, স্তনের আকার বেড়ে যাওয়া, স্তনবৃন্তের সংকোচন অবস্থা, স্তনবৃন্তে ক্ষত, স্তনবৃন্তের চারপাশে গোলকার লালচে হওয়া বা মাংসপিণ্ড যাতে ব্যথা নাও থাকতে পারে, স্তনবৃন্ত থেকে তরল নিঃসরিত হওয়া যা দেখতে পানির মতো, কালো বা রক্তাভ হতে পারে, বাহুর নিচের লসিকাগ্রন্থি বেড়ে যাওয়া, স্তনবৃন্ত বা এর চারপাশে লাল হয়ে যাওয়া।
মুখের পরিবর্তন:
মুখে এবং গলায় অনবরত ব্যথা, মুখের ভেতরে সাদা দাগ, খাবার গিলতে সমস্যা, নিচের চোয়াল নাড়াতে সমস্যা, অজানা কারণে দাঁত নড়বড়ে হওয়া কিংবা উঠে আসা, মুখ ফুলে যাওয়া, ঠোঁটে অসাড়তা, গালের ভেতরে বা জিহ্বায় ক্ষত ও ঘাঁ অথবা জিহ্বা থেকে রক্ত পড়া, অনবরত কফ-কাশি বা স্বরভঙ্গ এবং কফের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া। মুখের ভেতরে এবং গলায় এ রকম পরিবর্তনগুলো ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে।
পাকস্থলি সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ:
নানা কারণে পাকস্থলিতে এবং পেটের ব্যথা হতে পারে। কিন্তু ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেয়ার পরেও যদি সেটি না কমে তাহলে তা ক্যানসারের লক্ষণও হতে পারে।
পাকস্থলি সংশ্লিষ্ট ক্যান্সারের লক্ষণগুলো হলো- দীর্ঘমেয়াদি এসিডিটি, ক্ষুধামান্দ্য, বুক জ্বালাপোড়া, বমি- রক্তসহ, পেট ফোলা বা পেটে তরল জমা হওয়া, পাকস্থলিতে ব্যথা যা হতে পারে ভেতরের দিকে চাপ প্রয়োগ করার অনুভূতিযুক্ত (অগ্নাশয় ক্যানসার), পাকস্থলিতে খিচুনি এবং অস্বস্তি (লিভার ক্যানসার), অল্প খাবারেই পেট ভরে যাওয়া, প্রস্রাব বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া (কিডনি বা মূত্রাশয় ক্যানসার, কোলন ক্যানসার)।
পুরুষদের উচিত নিজেকে ক্যানসার থেকে রক্ষা পেতে উপরের বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব দেওয়া। কেননা, কোনো রোগ কেই ছোট করে দেখা উচিত নয়।