মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে কিডনি অন্যতম । মানুষের শরীরে দুইটি কিডনি থাকে যেগুলো শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ছেঁকে ফেলে । কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক । বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে । প্রতিবছর অনেক মানুষ এই রোগে মৃত্যুবরণ করে । এই ধরণের রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল । তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত । তাই আজ জেনে নিন কিডনি ভালো রাখার ১০টি উপায় ।
চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক কিডনি ভালো রাখতে হলে কি কী কাজ করতে হবে…
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন
প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত । তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরো বাড়াতে হবে । পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয়না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে ।
লবণ কম খান
খাবারে অতিরিক্ত লবন খাওয়া কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর । মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র এক চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে । তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করুন ।
অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
গরুর মাংস , শুকরের মাংস ইত্যাদি খেলে কিডনির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে । এমনকি চিপস , ফাস্টফুড , প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডুলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর । খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির উপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দূর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই প্রাণীজ প্রোটিন এড়িয়ে মাছ বা ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখুন খাবার তালিকায় ।
রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখুন
রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় । তাই কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন । রক্তচাপ কমিয়ে রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করা ও লবণ কম খাওয়া জরুরি ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় । তাই নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান । সুগার বেশি থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন ।
ঔষধ খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান
কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর । বিশেষ করে ব্যথা নাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য একেবারেই ভালো নয় । নিয়ম না জেনে নিজে নিজে ওষুধ কিনে খেলে আপনার অজান্তেই কিডনির বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে । তাই যে কোনো ওষুধ খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন ।
প্রয়োজনের বেশি ভিটামিন সি খাবেন না
মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি এর প্রয়োজন নেই । নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে । তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন ।
কোমল পানীয় ত্যাগ করুন
অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিঙ্কস খেয়ে থাকেন । এ ধরণের পানীয়গুলো কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর । তাই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন এবং যখনই তৃষ্ণা পায় পানি খেয়ে নিন ।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন
ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায় । ফলে ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি এক পর্যায়ে গিয়ে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয় ।
সংক্রমণ সাবধান
প্রস্রাব কখনোই চেপে রাখবেন না । এতে সংক্রমণ হওয়ার ভয় থাকে । যদি প্রস্রাবে সংক্রমণ হয় , তাহলে দ্রুত চিকিৎসা করাতে হবে । এ ছাড়া যাদের সংক্রমণের প্রবণতা রয়েছে তাদের প্রচুর পানি পান করা উচিত । পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ।
কিডনীর পরীক্ষা করান
উচ্চ রক্তচাপ , ডায়াবেটিস , অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারো কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হবার ঝুঁকি বেশি থাকে । যাদের কিডনি রোগের ঝুকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত ।