কখন সন্তান বাবার মত আর কখন মায়ের মত চেহারা পায়? ইসলাম কি বলে জেনে নিন !!- মুসলিম হিসেবে দুনিয়া এবং আখিরাতে আমাদের সাফল্য, সম্মান ও মর্যাদা মাত্র একটি পথেই আসতে পারে – আর তা আল কুরআনকে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমে৷
আল্লাহ তাআলা বলেন:
নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি এক কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তোমাদের জন্য উপদেশ ও মর্যাদা রয়েছে, তবুও কি তোমরা বুঝবে না?
অর্থাৎ তোমাদের প্রতি আমি যে কিতাব নাযিল করেছি, সেই আল-কুরআনের অধ্যয়ন, এর শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে এর বাস্তবায়নের মাধ্যমেই তোমরা দুনিয়া ও আখিরাতে কাঙ্খিত মর্যাদা ও সাফল্য লাভ করতে পারবে। তবুও কি তোমরা বুঝবে না যে তোমাদেরকে অন্যদের ওপর কী শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে?
এই আয়াতে মর্যাদা বোঝানোর জন্য যিকর শব্দটির ব্যবহার অত্যন্ত চমৎকার, কেননা এর অপর অর্থ হল উপদেশ৷ সুতরাং আল কুরআনে রয়েছে এই উম্মাতের যিকর, এর দ্বারা একই বাক্যে ফলাফল ও কারণ – দুটিকেই অত্যন্ত চমৎকারভাবে নিয়ে আসা হয়েছে;
যেন বলা হচ্ছে: যদি তোমরা আল-কুরআনের উপদেশ গ্রহণ কর, তবে তোমরা তোমাদের কাঙ্খিত সম্মান ও মর্যাদা অর্জন করতে পারবে৷
আল কুরআন মানুষের নিকট স্বয়ং তার স্রষ্টার বার্তা৷ কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কারও কাছে কোন চিঠি বা বার্তা পাঠালে তা পড়ে, জেনে, বুঝে সে অনুযায়ী কাজ না করে সে কখনোই স্বস্তি পাবে না – যদি সত্যিই প্রেরক তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়৷
সেক্ষেত্রে স্বয়ং স্রষ্টার পাঠানো বার্তা না পড়ে, না জেনে, বাস্তবায়ন না করে একে গিলাফে বন্দী করে তাকে উঠিয়ে রেখে কিভাবে একজন মুসলিম স্বস্তি পেতে পারে?
আমরা আজ আল কুরআন থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছি৷ যারা আল কুরআনের সাথে সামান্য কিছু সম্পর্ক রেখেছেন, তারা তা রেখেছেন শুধুমাত্র একে তিলাওয়াত বা পাঠ করার মাধ্যমে৷
আল-কুরআন বিশুদ্ধভাবে পাঠ করতে পারা লোকের সংখ্যাই কম, আর একে জেনে-বুঝে আমলে বাস্তবায়ন করা লোকের সংখ্যা তো নিতান্তই নগণ্য৷
এই যদি আমাদের অবস্থা হয়, তবে কিয়ামতের দিন আমাদের জন্য এক লজ্জাজনক দৃশ্য অপেক্ষা করছে। যেদিন স্বয়ং নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে অভিযোগ পেশ করে বলবেন:
وَقَالَ ٱلرَّسُولُ يَرَبِّ إِنَّ قَوْمِى ٱتَّخَذُوا۟ هَذَا ٱلْقُرْءَانَ مَهْجُورًۭا
আর রাসূল বলবে, হে আমার রব, নিশ্চয় আমার কওম এ কুরআনকে পরিত্যাজ্য গণ্য করেছে৷২
যে লোকগুলো আল্লাহকে, তাঁর রাসূলকে ভালবাসা ও তাঁদের প্রতি ঈমানের দাবী করছে, স্বয়ং সেই লোকগুলোর বিরুদ্ধেই হয়ত অভিযোগ আনা হবে: তারা আল-কুরআনকে অধ্যয়ন করে নি, আল-কুরআনের অর্থ শেখেনি, একে জীবনে বাস্তবায়ন করে নি – সর্বোপরি তারা আল কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে৷
তাই এখনই সময় আল-কুরআনের দিকে ফিরে আসার৷ আল-কুরআনের দিকে ফিরে আসতে হলে আমাদেরকে সাধ্যমত কয়েকটি কাজ করতে হবে:
১) নিয়মিত আল কুরআনের তিলাওয়াত৷
২) সাধ্যমত একে মুখস্থ করা৷
৩) নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে এর অর্থ ও ব্যাখ্যা শেখা৷
৪) আল-কুরআনের অর্থ ও শিক্ষা নিয়ে গভীর চিন্তাভাবনা করা, যাকে আল কুরআনে তাদাব্বুর বলা হয়েছে৷ আল্লাহ তাআলা বলেন:
كِتَبٌ أَنزَلْنَهُ إِلَيْكَ مُبَرَكٌۭ لِّيَدَّبَّرُوٓا۟ ءَايَتِهِۦ وَلِيَتَذَكَّرَ أُو۟لُوا۟ ٱلْأَلْبَبِ
আমি তোমার প্রতি নাযিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানগণ উপদেশ গ্রহণ করে৷৩
৫) আল কুরআনের শিক্ষাকে আমলে বাস্তবায়ন
৬) মানুষকে আল কুরআন শেখানো এবং আল কুরআনের দিকে আহ্বান জানানো৷
এই সমস্ত কাজগুলো করার মাধ্যমে আমরা যদি আবারো আল-কুরআনের দিকে ফিরে আসতে পারি, তবে আমরা সর্বোত্তম মানুষ হতে পারব বলে আশা করা যায়, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম তারাই যারা নিজেরা কুরআন শেখে ও অপরকে তা শেখায়!