এটি একটি বরফ তৈরীর কারখানার সত্য-ঘটনা। ঐ কারখানার এক নিম্নবিত্ত কর্মচারী একদিন কাজ করবার সময় হঠাৎ লক্ষ্য করলো- তার ব্যবহৃত যন্ত্রে কোনো অজানা ত্রুটি । যার কারনে নির্দিষ্ট উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে এবং যন্ত্রাংশ থেকে ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষকে কিছু না-জানিয়েই সে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়েই ঐ যন্ত্রাংশের ত্রুটি অন্বেষণের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় চেষ্টা করতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পর সে ত্রুটি সংশোধন করে ফেললো।
—কিন্তু,, তাতে তার অনেকক্ষণ সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো। ততক্ষণে কারখানার বাতি নিভে গেছে এবং নিয়মানুসারে সদর দরজাও বন্ধ হয়ে গেছে।
বহুমূল্য কমপ্রেশার( compressor) নষ্ট হবার ভয়ে রাতের বেলা আইস্ প্ল্যান্টের অভ্যন্তরের পরিবেশকে বায়ূনিরোধক রাখা হয়ে থাকে।
সেই কারনে আকস্মিক ভাবে ভুলবশতঃ কেউ ভিতরে থেকে গেলে তার শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যূর সম্ভাবনা প্রবল।
যখন সেই ব্যক্তি বুঝতে পারলো-যে তার অধিক বিলম্ব হবার কারনে কারখানা বন্ধ হয়েগেছে — স্বাভাবিক কারনেই সে অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থাতে শুধুই ইষ্টনাম স্মরণ করতে লাগলো।
এ কি আশ্চর্য্য ! হঠাৎ তার মনে হ’ল– কে যেন বন্ধ দরজা বাইরের থেকে খুলছে। অন্ধকারের মধ্যে লক্ষ্য করলো কে একজন টর্চ হাতে তার উপস্থিত। দেখলো ঐ ব্যক্তি কারখানার দ্বাররক্ষী।
সে দ্বারী-ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করলো, ” ভাই , তুমি জানলে কি করে যে আমি ভিতরে রয়ে গেছি ? এ খবর তোমাকে কে দিলো ?”
—দারোয়ান বললো, ” কেউ বলেনি স্যার, প্রতিষ্ঠানের এই দফতরে মোট পঞ্চাশ জন কর্মী কাজ করে। কিন্তু আপনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি কারখানায় প্রবেশ করবার আগে “সুপ্রভাত , ভাই “, এবং সন্ধ্যাবেলায় কাজের শেষে “বিদায় ভাই”(good bye) উচ্চারণ করতে কখনো ভোলেন না। আমার বেশ মনে আছে যে আজ সকালে ‘সুপ্রভাত ‘ বলে প্রবেশ করেছেন–কিন্তু বিদায়-সম্ভাষণ তো আজ পাইনি।
তাতেই আমার বুঝতে বাকি রইলো না যে আপনি এখনো নির্গত হন নি।”
–যন্ত্রী-ভদ্রলোক হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে কয়েক মুহূর্ত ভাবতে লাগলো যে তার একটি সামান্য স্বভাবসুলভ অভিবাদন-সংঙ্কেত কি ভাবে তাকে অবধারিত মৃত্যূর হাত থেকে বাঁচালো !
—-‘ব্যবহার’ মানুষের বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জিত কোনো ডিগ্রী বা প্রশংসা পত্র নয় -যে প্রমানস্বরূপ অন্যের চোখের ওপর ধরে দিলেই চলবে।আচরণের দ্বারা অন্য এক দ্বিতীয় ব্যক্তির জীবনে ধনাত্মক প্রভাব বিস্তারের নামই হ’ল সুব্যবহার। সৌজন্যবোধ মানুষের জীবনে অলংকারস্বরূপ। ঐ বিশেষ গুনাবলী মানুষকে অন্যদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে। মানুষের কার্যকলাপে-কথাবার্তায়-আচার-আচরনে যখন ভদ্রতা প্রকাশ পায় , তখন তার মধ্যে বিরল শিষ্টাচার- নিদর্শনের খোঁজ পাওয়া যায়। ঐ বহুমূল্য রত্নটি চিত্তকে বিশুদ্ধ করে- অহংকারকে আলোড়িত করে না। এই কারনেই কারখানার দ্বাররক্ষী লোকটি ঐ সদাহাস্যময় ব্যক্তিত্বটিকে মনে রাখতে সক্ষম হয়েছিলো এবং তাকে অবশ্যাম্ভাবী অপমৃত্যূর হাত থেকে বাঁচাতে পেরেছিলো।
অর্থদিয়ে জীবন কে না মেপে ব্যবহার দ্বারা মূল্যায়ন করুন,জীবনে বাচার স্বাদটাই পাল্টে যাবে
সংগৃহীত