অনেক সময়ে বোঝা যায় না শুধুই ঠাণ্ডা লেগেছে নাকি সাইনাস ইনফেকশন হয়েছে। অনেকে একে ঠাণ্ডা ভেবে তেমন চিকিৎসার ধার ধারেন না। কিন্তু সাইনাস ইনফেকশনকে পাত্তা না দিলে বেশ ভোগাতে পারে আপনাকে। জেনে নিন সাধারণ ঠাণ্ডার সাথে সাইনাস ইনফেকশনের পার্থক্যগুলো।
আগে আপনার জেনে রাখা উচিত সাইনাস ইনফেকশন কী। আমাদের মুখে বেশ কিছু সাইনাস বা ফাঁপা জায়গা আছে। কিছু আছে অক্ষি কোটরের পেছনে, কিছু আছে চোখের নিচে। এখানে মূলত বাতাস থাকে। তবে কখনো তা মিউকাস বা শ্লেষ্মা দিয়ে পূরণ হয়ে যায় ও এতে ইনফেকশন হয়। এটাই সাইনাস ইনফেকশন। এর লক্ষণগুলো হলো-
১. দাঁত ব্যথা করা
আপনি ভাবতে পারেন দাঁতে পোকা হয়েছে, দাতের ফিলিং খুলে আসছে এমনকি আক্কেল দাঁত উঠছে। কিন্তু তা সাইনাস ইনফেকশন হতে পারে। অনেকেই জানেন না যে দাঁত ব্যথা হওয়াটা সাইনাস ইনফেকশনের লক্ষণ।
২. মুখমণ্ডল ব্যথা করা
ব্যায়ামের পর পেশী যেভাবে টনটন করে ব্যথা করে, মুখমণ্ডল সেভাবে ব্যথা করতে থাকলে তা সাইনাস ইনফেকশনের লক্ষণ।
৩. চোখের পেছনে চাপ চাপ ব্যথা
সকালে ঘুম থেকে উঠলেন, কিন্তু সাথে সাথেই আবার মাথা ব্যথায় চোখ বন্ধ করে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে। কারণ চোখের পেছনে চাপ চাপ ব্যথা। মাথা ভারী লাগছে। সাইনাস ইনফেকশনের আগে সাইনাস ব্লক হয়ে যায়। এ কারণেই মাথায় চাপ চাপ ব্যথা হয়। অন্যান্য লক্ষণের আগেই এ লক্ষণটা দেখা দিতে পারে।
৪. কোনো গন্ধ না পাওয়া
ইলিশ মাছ ভাজা হচ্ছে রান্নাঘরে, অথচ আপনি কোনো গন্ধই পাচ্ছেন না! তা হতে পারে সাইনার ইনফেকশনের লক্ষণ। কারন নাকের আশেপাশে ইনফ্লামেশন হওয়ার ফলে গন্ধের অনুভুতি চলে যেতে পারে।
৫. মাথাব্যথা কিছুতেই দূর হচ্ছে না
অনেক কারণেই মাথাব্যথা হতে পারে। ডিহাইড্রেশন, ক্লান্তি, বেশি ব্যায়াম করে ফেলা, স্ট্রেস ইত্যাদি। কিন্তু বেশকিছুদিন ধরে ক্রমাগত মাথাব্যথা হতে পারে সাইনাস ইনফেকশনের লক্ষণ, বিশেষ করে যদি নাকে সর্দি থাকে।
কী করবেন সাইনাস ইনফেকশন হলে?
ডাক্তার দেখানোর আগেই কিছু ঘরোয়া উপায়ে কস্ত কমিয়ে আনতে পারেন। গরম পানিতে শাওয়ার নিতে পারেন ও সমস্যাটি দূর হয় কিনা দেখতে পারেন। তবে ২৪ ঘণ্টা পর ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়াটা জরুরি।
এই ব্যথা শুরু হলে সহজে কমতে চায় না। সর্দি বের না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে৷ ব্যথা নিরাময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করাই ভালো। তবে ঘরোয়া কিছু উপায় জেনে নিলে সাইনোসাইটিসের মাথাব্যথায় অনেকটা উপকার পাওয়া যায়।
গরম পানির ভাপ
সাইনাসের সমস্যায় ভুগলে গরম পানির ভাপ নেওয়া অত্যন্ত কার্যকরী। কিছুক্ষণ ভাপ নিলে নাকের বন্ধ ভাবটা কেটে যায়। ফলে কিছুটা আরাম হয়। উষ্ম গরম পানি দিয়ে গোসল করলেও অনেকসময় ব্যথা কমে যায়। এছাড়া নাক পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরী। হালকা গরম পানি ব্যবহার করে নাক থেকে সর্দি পরিষ্কার করলে উপকার পাবেন।
সাইনোসাইটিসের ব্যথা অনেক তীব্র হয়। ব্যথা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার আগেই গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে কপাল, চোখ ও নাকে সেক দিন। দিনে দুই থেকে তিনবার এভাবে সেক দিলে ব্যথায় উপকার পাবেন।
মসলাযুক্ত খাবার
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মসলাযুক্ত খাবার সাইনোসাইটিসের ব্যথার তীব্রতা কমায়। বিশেষত, ঝাল খাবারে ব্যথায় উপকার পাবেন। তবে শুকনো মরিচের গুঁড়াযুক্ত খাবারে অনেকের গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই রান্নায় কাঁচা মরিচ ব্যবহার করুন। এতে ঝালও পাবেন আবার স্বাস্থ্যেরও কোন ক্ষতি হবে না। কেউ রান্নায় বেশি ঝাল ব্যবহার করতে না চাইলে খাবারের সাথে একটি কাঁচা মরিচ খেতে পারেন।
পছন্দের গান শুনুন
সুইডেনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, পছন্দের গান শুনলে সাইনাসের মাথাব্যথার তীব্রতা কমে। কারণ, পছন্দের গানে মগ্ন হলে নিঃশ্বাস চলাচল ভাল হয়। এতে মাথাব্যথার তীব্রতা কমে। তাই সাইনাসের ব্যথায় মন দিয়ে পছন্দের গান শুনুন। ব্যথাও কমবে, সময়টাও ভালো কাটবে।
পর্যাপ্ত পানি পান
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। বেশি করে পানি খেলে ভেতরে জমে থাকা কফ বা শ্লেষ্মা সহজে বেরিয়ে যেতে পারে। সেই সাথে সবধরনের এ্যালকোহল এড়িয়ে চলতে হবে।
খেতে পারেন দারুচিনি
দারুচিনি সাইনোসাইটিসের ব্যথায় খুব উপকারী। দারুচিনির ঝাঁঝালো স্বাদ ভালো লাগবে। কিছুটা মধুর সাথে দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন। এ ছাড়া দারুচিনি গুঁড়ার সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে কপালে মালিশও করতে পারেন। এতেও অনেকটা উপকার পাবেন।
মনে রাখা ভালো, সাইনোসাইটিসের মাথাব্যথায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া প্যারাসিটামল বা অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না।